শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শাহীনুর ইসলাম শানু ও এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

গ্রীষ্মের সবজিতে ত্রাহিভাব

শাহীনুর ইসলাম শানু ও এফ এ শাহেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

গ্রীষ্মের সবজিতে ত্রাহিভাব

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

ঢাকার বাজারে শীতকালীন সবজি আর নেই। গ্রীষ্মের আগাম কিছু সবজি এখন আসছে। দাম বাড়লেও তার ওপরই চলছে ভোক্তার সন্তুষ্টি। চৈত্রের খরতাপে কৃষকের মাঠে উৎপন্ন সবজি বৈশাখে ঢাকার বাজারে দিচ্ছে খাদ্যের জোগান। তবে উৎপাদিত পণ্যের দামে কর্পূরের মতো উড়ছে ভোক্তার স্বস্তি। আমদানিনির্ভর বিভিন্ন নিত্যপণ্যে সরকার শুল্ক ছাড় দিলেও দাম কমছে না।

অন্যদিকে, ভোগ্যপণ্যের দাম কমায় জোগানদাতা কৃষকেরও কমছে পণ্য উৎপাদনে উৎসাহ। তবে ভরা বর্ষায় পর্যাপ্ত সরবরাহ না হলে দাম কমার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন ঢাকার কারওয়ান বাজারের অনেক আড়তদার ও সবজি ব্যবসায়ী। তারা বলেছেন, ঢাকায় ভোক্তার অস্বস্তি শুরু হয়েছে ঈদুল ফিতরের পর। ঈদ-পরবর্তীতে হঠাৎ শীতকালীন সবজির জোগান কমেছে, বিপরীতে শহরে বাড়তে শুরু করেছে জনসংখ্যা এবং খাদ্যপণ্যের চাহিদা। একই সঙ্গে বাড়ছে অন্য পণ্যের দাম, যার কারণে বৈশাখের উত্তাপে কমতে থাকে ভোক্তার স্বস্তি।

ঢাকার বাজারে চালের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। তবু বাড়ছে চালের দাম। ভোজ্যতেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮৯ টাকা। শীতকালীন সবজি শেষ; গ্রীষ্মের সবজির দাম এখন দ্বিগুণ। আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী। একই সঙ্গে গ্যাসের দাম সরকার ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার প্রভাব বাজারের পণ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে আগামী ১ মে থেকে ডিম উৎপাদনে বিরতির কথা জানিয়েছে খামারিরা, যার কারণে নতুন করে ভর করছে ভোক্তা ও উৎপাদকের হতাশা।

ঢাকার অধিকাংশ বাজার ঘুরে গতকাল শুক্রবার জানা গেছে, বাজারে সরু চালের দাম আগের চেয়েও কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া বেড়েছে সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজের দাম। অন্যদিকে ঈদের আগের তুলনায় ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কমেছে। বিক্রেতারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সরু তথা মিনিকেট চাল। গত মাসে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা বেড়েছিল। সেই দাম কমেনি; বরং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আরও দুই থেকে তিন টাকা করে বেড়েছে।

তবে দেশে খাদ্যের মজুত বাড়াতে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ২৪০ কোটি ৮০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাটখিল রাইস এজেন্সির শামীম আহমেদ বলেন, ‘মোটা চালের দাম নতুন করে বাড়েনি। চিকন চালের হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় দাম একটু বেড়েছে। সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় মানুষের ভালো হয়েছে। তবে আমদানি বাড়াতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকে চাল আমদানি না করলে দাম বাড়ে। বন্ধ হলে বাড়ে কি না, তা নিয়ে ভয় আছে।’

কারওয়ান বাজারে হঠাৎ পালটে গেছে পেঁয়াজের দাম। পেঁয়াজের ভরা মৌসুমের মধ্যেই হঠাৎ করে বেড়েছে দাম। তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির পাঁয়তারা করছেন কিছু আমদানিকারক। তারাই সিন্ডিকেট করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছেন। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও দাম বেড়ে এখন ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কমেছে গরুর মাংস ও মুরগির দাম

বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমেছে। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় এবং সোনালি মুরগি ২২০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগে অর্থাৎ, গত মাসের শেষে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। ওই সময় সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়। কেজিতে দাম কমেছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৩১০-৩২০ টাকা ছিল। ব্রয়লার মুরগির দাম হয়েছে ১৮০ টাকা, যা ২১০ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে গরুর মাংসের কেজি ছিল ৭৮০ টাকা। কলিজা ৮০০ ও মাথার মাংস ৪৫০ টাকা। চাহিদা কমায় মাংস এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকায়।

অন্যদিকে, দেশি মাছের দাম আকাশছোঁয়া। পাবদা, টেংরা, রুইসহ বেশির ভাগ মাছের দাম কেজিতে গত সপ্তাহের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক কেজি পাঙাশ কিনতে ২০০-২৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে, যা ঈদের আগেও ১৮০-১৯০ টাকা ছিল। সবজির বাজারে করলার কেজি ৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০-৬০ টাকা, বেগুন বড় ৮০, টমেটো ৩০-৪০ এবং কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়।

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আলুর সরবরাহ অনেক। তবু দাম বাড়তে শুরু করেছে। সাদা আলু ২৫ টাকা এবং জাতভেদে ৪০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। মগবাজারের চারুলতা মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দেশি আদা কেজি ১২০, দেশি রসুন (পুরোনো) ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান রসুন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা।

এদিকে, বাজারে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ হওয়ায় কিছুটা সংকট কমেছে। দোকানে প্রতি লিটারে নির্ধারিত দাম ১৮৯ টাকা বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

রাজস্ব আদায়ে প্রাধান্য 

আমদানিনির্ভর বিভিন্ন নিত্যপণ্যে শুল্ক ছাড় দেয় সরকার, যার মধ্যে রয়েছে গম, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি। কিছু পণ্য আমদানির প্রয়োজন হলে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। যেমন- চাল, তবে নিয়মিত আমদানি হওয়া ভোজ্যতেল, চিনি, গুঁড়া দুধ, গরম মসলা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২৪ সালে সয়াবিন ও পাম তেল থেকে আমদানি পর্যায়ে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২ হাজার ৯১২ কোটি টাকা। চিনি থেকে সরকার বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা আয় করে।

৫০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত 

দেশে খাদ্যের মজুত বাড়াতে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৪০ কোটি ৮০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা

সিন্ডিকেট ভাঙার দাবিতে আগামী মে মাস থেকে ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশের প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার গত বৃহস্পতিবার বলেন, যতক্ষণ না সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, ততক্ষণ আমাদের এই কর্মসূচি চলবে। সভাপতির সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রমজান ও ঈদ উপলক্ষে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন ২০ লাখ কেজি মুরগি উৎপাদন করেছেন। প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা দরে এক মাসে লোকসান হয়েছে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। দৈনিক ৪ কোটি ডিম উৎপাদনের মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা ৩ কোটি ডিম উৎপাদন করেন। প্রতি ডিমে ২ টাকা করে লোকসানে দুই মাসে ডিমে লোকসান হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। দুই মাসে ডিম ও মুরগির খাতে মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১২৬০ কোটি টাকা।

Link copied!