ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ঋণের কিস্তি নিশ্চিত

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পালনে নমনীয় না হয়েও দাতা সংস্থাটিকে ম্যানেজ করতে পেরেছে। ফলে আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেবে আইএমএফ। যার পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন ডলার, যা আটকে যাওয়া চতুর্থ কিস্তি ও নিয়মিত পঞ্চম কিস্তি এবং এর সঙ্গে বাংলাদেশের চাওয়া অতিরিক্ত ঋণের অংশও রয়েছে। এই ঋণ একসঙ্গে আগামী জুন মাসে ছাড় করবে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি। তবে তার আগে সংস্থাটির বোর্ড সভায় অনুমোদন নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

একাধিক সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনই ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করতে রাজি না হওয়ায় গতকাল অনেক রাত পর্যন্ত আইএমএফ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা হয়। সমঝোতার অংশ হিসেবে উভয় পক্ষ সংস্কার চালিয়ে যাওয়া বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু আইএমএফ কতটা সময় দিতে রাজি হয়েছে, আর বিবি কতটা সময় চেয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিবি বলছে, বর্তমানের উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে ডলারের দাম বাজার ভিত্তি করা হলে টাকার মান আরও পড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে না। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় বেড়ে বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে মূল্যস্ফীতিতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা সামাল দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

সূত্রটি আরও বলেছে, বিবি চায় মূল্যস্ফীতির গতি প্রকৃতি দেখে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা যায় কি না, আরও সময় নিয়ে সে সিদ্ধান্ত নিতে। বিবির এরমক কঠোর মনোভাবের পরও আগামী জুন মাসে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি এবং অতিরিক্ত ঋণের একটা অংশ এই দুই কিস্তির সঙ্গে মিলিয়ে দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ। এই অর্থের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির পরিমাণ ৫৭০ মিলিয়ন ডলার করে মোট ১১৪০ মিলিয়ন ডলার। আর বাকি ১৬০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত ঋণের অংশ।

জানা গেছে, জুনে হবে আইএমএফের পর্ষদ সভা। পর্ষদ সভায় অনুমোদনের পর পুরোনো আর নতুন কিস্তির অর্থ একসঙ্গে আগামী জুনেই ছাড় হবে।

আগামী জুনের মধ্যে বাজারভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় হার বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় বলেন, তা এখন বলব না। কারণ, মূল্যস্ফীতি আরও কত দিন থাকে তা দেখতে হবে। হঠাৎ বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে গেলে তো বিপদ বাড়বে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। যার কারণে হঠাৎ ডলারের দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ পদ্ধতিতে ডলারের দাম আপাতত ১২২ টাকায় স্থিতিশীল।

কিস্তি পাওয়ার বিষয়টি জুনে চলে যাওয়ার ব্যাপারে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা পরামর্শ দিয়েছে। আমরাও বলেছি কিছু বিষয় আছে, যা আমরা দ্রুত করতে পারব না।’

সূত্র জানায়, আইএমএফের পর্যালোচনা মিশন ঢাকায় আসার পর অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের সঙ্গে যেসব সভা হয়েছে ওই সব সভায় কর্মকর্তারা আইএমএফকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটির দেওয়া বিভিন্ন সংস্কারের অগ্রগতি ভালো হয়েছে। এর মধ্যে এনবিআর তাদের আয় বাড়াতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সংস্কারেরও তারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ক্ষেত্রে ভালো করলেও কিছু ক্ষেত্রে এখনো বাকি রয়েছে। এ জন্য তাদের আরও সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে।

আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।

প্রতিবার কিস্তি পাওয়ার আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদন লাগে। এর আগে ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসে আইএমএফের দল। চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের লক্ষ্যে আইএমএফের শর্তাবলি পর্যালোচনা করতে আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাদাকিসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গত ৩ থেকে ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করে। এ সফরের পরই কিস্তি ছাড় পিছিয়ে যায়।

এ সফরে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। আইএমএফের শর্তগুলোর মধ্যে আছে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ, বাজেট ঘাটতি, আন্তর্জাতিক লেনদেনর ভারসাম্য, রিজার্ভ মানি, কর রাজস্ব, অগ্রাধিকার সামাজিক ব্যয় এবং সরকারের মূলধন বিনিয়োগ।

অর্থ বিভাগের সূত্রগুলো বলছে, আইএমএফ ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি পেতে ১২টি শর্তের সবই পূরণের পথে থাকলেও বিবি সংস্কারে পিছিয়ে রয়েছে।