পেশায় আইনজীবী বাবরা শরিফ। ঢাকা জজকোর্টে প্র্যাকটিস করেন। প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ট্রেনযোগে যাতায়াত করেন। যানজট নেই, সময় কম লাগে এবং ভাড়াও তুলনামূলকভাবে অনেক কম, এ কারণেই ট্রেনে যাতায়াত- এমনটিই রূপালী বাংলাদেশকে জানালেন তিনি। তবে নতুন ট্রেনের ১১টি বগির মধ্যে তিনটি নারীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেগুলোতে পুরুষেরাও সিট দখল করে বসে থাকেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে পুরুষেরা তর্ক জুড়ে দেন। ট্রেন কর্তৃপক্ষও কিছু বলে নাÑ এমন অভিযোগ আইনজীবী বাবরা শরীফের।
ব্যবসায়ী আলী আক্কাছ প্রতিদিন ট্রেনযোগেই ঢাকায় যাতায়াত করেন। নতুন ট্রেন সম্পর্কে অভিযোগে বলেন, বগি বড় কিন্তু ইঞ্জিন ছোট ও লক্কড়ঝক্কড় মার্কা। সেই পুরোনো ইঞ্জিন দিয়েই ১১টি বগি টেনে নেওয়া হচ্ছে। তাতে ট্রেন ধীরে চলে। সময় বেশি লাগে। মাঝেমধ্যে চলার পথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে। তাতে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২৬ মার্চ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে মেট্রোর আদলে এনসি-৩ মডেলের কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ৫৯০ যাত্রী ধারণক্ষমতার নতুন ১১টি বগি সংযুক্ত করা হয় ট্রেনটিতে। ট্রেনটি দিনে ও রাতে ১৬ বার (ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ আটবার ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা আটবার) আসা-যাওয়া করছে। তবে একটি ট্রেনই সারা দিন চলাচল করায় অনেক ক্ষেত্রে পথেই বিকল হয়ে পড়ছে। তাতে যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন ট্রেনটি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে আসে ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে এবং ছেড়ে যায় ৫টা ৪৫ মিনিটে। আর রাতে ৯টা ৫৫ মিনিটে নারায়ণগঞ্জে এসে ছেড়ে যায় ১১টা ৫ মিনিটে। তবে টাইম শিডিউল অনেক সময়ই হেরফের হয়। আগের ট্রেনে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৬০ জন থাকলেও নতুন ট্রেনে তা ৫৯০ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে ট্রেনে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে নোংরা অবস্থায় থাকে। অনেক সময় টয়লেটে পানি থাকে না। যেখানে পাবলিক পরিবহনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ভাড়া ৫০ টাকা, সেখানে ট্রেনে মাত্র ২০ টাকা। এ কারণেও ট্রেনে ভ্রমণ নারায়ণগঞ্জের যাত্রীদের কাছে এখনো জনপ্রিয়।
বিশেষ করে চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, বন্দরের লোকজন নদীপথে নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ট্রেনকেই এখনোও প্রাধান্য দিচ্ছে। তাদের দাবি, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেনের পরিমাণ আরও বাড়ানো হোক। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজ, মহিলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ট্রেনযোগে গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, পাগলা, ফতুল্লা থেকে যাতায়াত করে।
মতিঝিলে যাতায়াতকারী চাকরিজীবী শিউলী আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নতুন ট্রেনে বাথরুম ঠিকই আছে, কিন্তু সেখানে অনেক সময় পানি থাকে না। এটা কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত। আবার ট্রেনের টাইম-টেবিলও ঠিক থাকে না। চাকরিজীবী গিয়াস উদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ স্টেশনে টিকিট কাউন্টার অনেক দূরে। সেখানে গিয়ে টিকিট কাটতে কাটতে অনেক সময় ট্রেন ফেল করতে হয়। এ জন্য কাউন্টারটি মূল স্টেশনে স্থানান্তর করার দাবি জানান তিনি।
চাষাঢ়া স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শামসু মোহাম্মদ খাঁজা সুজন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘শতাব্দীর পুরোনো এই রেলপথে আগে পুরোনো ধাঁচের ট্রেনগুলো চলাচল করত। যাত্রীদের সুবিধার্থে মেট্রোরেলের আদলে নির্মিত নতুন একটি কমিউটার ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই ট্রেনে আগের চেয়ে বেশি বগি সংযোজন করা হয়েছে। মুখোমুখি আসনে বসার পরও নিরাপদে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও এই ট্রেনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সংযুক্ত করা হয়েছে পর্যাপ্ত লাইট ও ফ্যান। এই ট্রেনের বগিগুলোতে ইন্টার কানেক্টিভিটি রাখা হয়েছে। আধুনিক সুবিধা সংযোজন করা হলেও ট্রেনযাত্রার ভাড়া আগের মতো ২০ টাকাই আছে।’
যাত্রীসেবার বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জানান, ‘আমরা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলো জানতে পেরেছি। এবং তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার নাসরিন আক্তার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে আমাদের জনবলের সংকট রয়েছে। মাস্টার চারজনের জায়গায় রয়েছেন দুজন। যেখানে ছয়জন দরকার, সেখানে আছেন মাত্র তিনজন। নতুন ট্রেনের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি অচিরেই এর সমাধান হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :