শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

অটোচালকের ছদ্মবেশে আ.লীগ নেতাকর্মীরা

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ১১:৫১ পিএম

অটোচালকের ছদ্মবেশে আ.লীগ নেতাকর্মীরা

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

খিলগাঁও তালতলা থেকে মৌচাক মোড় পর্যন্ত ৬০ থেকে ৮০ টাকা ভাড়া হলেও গত মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে রবিউল ইসলাম নামের এক অটোরিকশাচালক ভাড়া চান ১৫০ টাকা। পরে ১০০ টাকায় ভাড়া ঠিক করে যাত্রীবেশে উঠে পরে অটোরিকশায়। চলতি পথে কথায় কথায় জানা যায়, রবিউলের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। ২০ আগস্ট থেকে অটো চালাচ্ছে।

এর আগে সে এলাকায় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, ৫ আগস্টের পর পট পরিবর্তনে তার নামে মামলা হওয়ায় পালিয়ে ঢাকায় চলে আসে। কিন্তু তার বিস্তারিত ঠিকানা ও পদ-পদবি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। গত এক মাসে রবিউলের মতো এমন দুই ডজন অটোরিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ৫ আগস্টের পর ঢাকায় এসে আর্থিক দুরবস্থা থেকে বাঁচতে অটোরিকশাচালকের পেশা বেছে নিয়েছেন।

বিভিন্ন সূত্র মতে, প্রথমত মামলা ও গ্রেপ্তার এড়ানো এবং দ্বিতীয়ত ঢাকায় অবস্থান করে দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একজোট হওয়া। সারা দেশের আনুমানিক আড়াই লাখ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এখন রাজধানীতে অটোচালকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছে। রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশা বৃদ্ধি পাওয়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানীতে ক্রমাগত অস্থিতিশীল ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সদ্যঃক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান করছেন। সম্প্রতি মহামারি রূপ ধারণ রাজধানী ঢাকার বিষফোঁড়ায় পরিণত হওয়া অটোরিকশাচালকের ছদ্মবেশে আ.লীগের লোকেরা গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বর্তমানে রাজধানীতে বিষফোঁড়া রূপ নিয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে যাতে মূল সড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা যায়, সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছদ্মবেশের বিষয়ে ডিএমপির এই মুখপাত্র জানান, আমরা নগরবাসীর নিরাপত্তায় বাড়তি টহল-পেট্রোলিংয়ের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। রাজধানীতে ছদ্মবেশে যাতে কেউ অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছি। সব অপরাধীর ক্ষেত্রে ডিএমপি কঠোর। প্রতিনিয়ত তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

গত সাড়ে ১৫ বছর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশবাসীকে নানাভাবে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও হামলা-দখলে যুক্ত হয়ে সারা দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের অনুসারী হয়ে স্বামী হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদা তুলতেন। ৫ আগস্টের পর শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও নিচের দিকের ছোট পদের নেতা ও কর্মীরা আর্থিক কারণে দেশ ছাড়তে পারেননি। তারা এখন নিজ নিজ জেলা বা এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বিশেষ করে ঢাকায় আত্মগোপনে চলে গেছেন। সহজ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন অটোরিকশাচালকের। অন্যান্য পেশায়ও যুক্ত অনেকে, তবে সেই সংখ্যাটা তুলনায় কম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ৫ আগেস্টর পর রাজধানীতে পেশাদার অটোরিকশাচালকদের তুলনায় পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছাড়াই চালক বনে যাওয়াদের সংখ্যা বেড়েছে মাত্রারিক্তভাবে। আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন রাস্তায় নেমে এসেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে। রাজধানীতে রিকশা চালানোর কোনো ধরনের পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলো। এমনকি নির্দ্বিধায় উঠে যাচ্ছে ফ্লাইওভারগুলোতেও। ফলে অবধারিতভাবেই ঘটছে দুর্ঘটনা। এককথায় রাজধানীতে নব্য অটোরিকশাচালকদের সংখ্যা বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এদের অধিকাংশ আত্মগোপনে থাকতেই হঠাৎ অটোরিশাচালক সেজেছেন। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত আট মাসে মাত্রারিক্ত অটোরিকশাচালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা ও থানা-ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

রাজধানীতে ছদ্মবেশে থাকা আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতকর্মীরা বিদেশে পলাতক শীর্ষ নেতাদের নির্দেশমতো সুযোগ বুঝে দলগভাবে ঝটিকা মিছিল করে নিজেদের শক্তির জানান দিচ্ছে। গত মঙ্গলবার রামপুরায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝটিকা মিছিল করে। ঝটিকা মিছিলের আগে-পরে আরও একাধিক নেতাকর্মী পাহারা দিয়েছিল।

ঝটিকা মিছিলের ভিডিও ও ছবি আওয়ামী লীগের দলীয় ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আপলোড দিয়েছে এবং দেশে-বিদেশে পলাতক নেতাকর্মীও তা শেয়ার করে- স্বৈরাচার শেখ হাসিনা খুব শিগগিরই দেশে ফিরে এসে ক্ষমতায় বসবে। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। যদিও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারত সরকারের আশ্রয়ে থেকে দলীয় ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফাঁসকৃত টেলিফোন রেকর্ডের প্রতিশোধ নেওয়া হুমকি দিয়ে আসছেন অনবরত। দলটির সমর্থকদের দাবি, নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে দলীয় প্রধান এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেড় দশক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নির্যাতন-অত্যাচারে দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। কেউ কেউ মুখ খুললেও দমন-পীড়নের শিকার ও জেলের ভাত খেতে হয়েছে। বিরোধীমতের বিশেষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা গত দেড় দশকে নিজ নিজ এলাকায় থাকতে পারেনি। থাকলেও নির্যাতনের শিকার ও মামলা-গ্রেপ্তার হয়ে ছিল।

৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সব স্তরের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। বড় বড় নেতারা দেশ ছেড়ে পালালেও ছোট ছোট নেতা ও কর্মীরা অন্য এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়াদের অধিকাংশ ভারতে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর হাতে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেশি।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, শীর্ষ নেতাদের অনেকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও দেশে রয়ে গেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের অধিকাংশ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। বিদেশে পালিয়ে শীর্ষ থেকে মধ্যম পর্যায়ের নেতাদের আর্থিক সংকট না থাকলেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা আর্থিক দুরবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে তারা ছদ্মবেশে অটোরিকশাচালকের কাজ করছেন। কিছু কিছু নেতা বিদেশে বসেও অনুসারী নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। সেখান থেকে দলীয় অনেক সিদ্ধান্তও জানিয়ে দেওয়া হয়। ছদ্মবেশে থাকা নেতাকর্মীরা সুযোগ লাগিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছেন।

গোয়েন্দা তথ্য মতে, জেলা পর্যায়ের সেসব নেতাকর্মী ঢাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন, তাদেরই একটি অংশ এখন রাজধানীতে অটোরিকশাচালকের ছদ্মবেশে আত্মগোপনে আছেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরে নেতকর্মীরা নিজ নিজ এলাকায় থাকতে না পেরে ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন এবং ছদ্মবেশে রিকশাচালকসহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থেকে সময় পার করেছেন।

গত দেড় দশক যারা এলাকাছাড়া তারা এলাকায়, অন্যদিকে এত দিন যারা এলাকায় ছিলেন তারা এখন এলাকাছাড়া। রাজধানীতে রিকশার সংখ্যা কত এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে। সর্বশেষ ২০১০ সালে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠকে তিন চাকার অবৈধ যানের সংখ্যা ১০ লাখের মতো বলে উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, ঢাকায় ব্যাটারি ও যন্ত্রচালিত রিকশার সংখ্যা ন্যূনতম ১৫ লাখ।

আদাবর থানার মুনসুরাবাদ এলাকার সিরাজুল ইসলাম নামের এক অটোরিকশা গ্যারেজ মালিক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালকের সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নব্য চালকদের অধিকাংশেরই পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এসব চালকের অধিকাংশ পরিচয়পত্র হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি জমা দিতে চায় না। সবার কথা হারিয়ে গেছে। কেউ বলে এলাকায় রেখে এসেছি। পরে জমা দেব। সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনার অধিকাংশই এদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। ছিনতাইয়ের সঙ্গেও এসব চালকদের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

Link copied!