মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ সিলেটবাসী। বাসাবাড়িতে অতিমাত্রায় বেড়েছে মশার বিচরণ। দিন-রাত মশার কামড়ে দিশাহারা সাধারণ মানুষ। মশার কামড় থেকে রেহাই পেতে দিনের বেলা মশারি ব্যবহার করছেন অনেকেই। কিউলেক্স মশার উপদ্রবে নগরীতে মশাবাহিত অসুখ-বিসুখের প্রকোপ বাড়ছে। মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে সিলেট সিটি করপোরেশনের কার্যকর পদক্ষেপ আপাতত নেই। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। তারা বলছেন, নগরীতে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন মশার উপদ্রব অন্তত চারগুণ বেশি। শুধু রাতে নয়, দিনের আলোয়ও মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হতে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, তারা বসে নেই। কয়েকদিন ধরে মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে ওষুধ আছে তবে সংকট জনবলের। সামান্য শ্রমিক দিয়ে আমরা চেষ্টা করেছি ওষুধ প্রতিনিয়ত ছিটানোর মাধ্যমে মশা নিধন করতে। তিনি বলেন, আমাদের যে শ্রমিক ড্রেন পরিষ্কার করছে, দেখা যাচ্ছে পরের দিন সে মশার ওষুধ মারছে। এতে করে ওষুধের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। মশা নিধনের জন্য নিয়ম করে ওষুধ ছিটানোর প্রয়োজন। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতায় সিসিক তা করতে পারছে না। এতে মশার বিড়ম্বনা থেকে পুরোপুরি রেহাই পাচ্ছেন না নগরবাসী।
সিলেট মহানগরীর পূর্ব সাদাটিকর এলাকার মুজিব মিয়া বলেন, মশা নিধনে সিলেট সিটি করপোরেশনের যথেষ্ট বরাদ্দ থাকার পরও নগরবাসীকে মশার কামড়ের ধকল সহ্য করতে হচ্ছে কেন? মশক নিধনে সিসিকের যে সমন্বয় থাকা প্রয়োজন ছিল তাও লক্ষ্য করছে না নগরবাসী। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, নগরবাসীর মনে প্রশ্ন মশাই যদি না মারা যায় তাহলে ওষুধ ছিটিয়ে লাভ কী? বর্তমানে বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত, বাজার, উন্মুক্ত স্থান, সড়ক, পার্ক, খেলার মাঠ, মসজিদ সর্বত্রই মশার রাজত্ব। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কিউলেক্স জাতের মশার উপদ্রব বেশি। এটি আকারে বড় এবং প্রজনন ঘটায় খুব দ্রুত। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকা ও জঙ্গলে এসব মশার প্রজনন ঘটে। তবে বর্তমানে সিলেটের সর্বত্রই দেখা মিলছে কিউলেক্স মশার। মশার কামড় থেকে বাঁচতে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার করছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এগুলো ব্যবহারের ফলে অনেকেই শ্বাসকষ্ট ও ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা গেছে, কয়েলের ধোঁয়া সিগারেটের ধোঁয়ার মতোই ক্ষতিকর। কয়েল থেকে যে ধোঁয়া নির্গত হয়, তাতে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস থাকে। অনেক অ্যারোসল পণ্যে থাকা ডাইমিথাইল ফাথলেট এবং পাইরেথ্রিনস জাতীয় রাসায়নিকগুলো দীর্ঘমেয়াদে স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে। তা ছাড়া ঘরের ভেতরে এ ধরনের স্প্রে ব্যবহারে দীর্ঘক্ষণ ধরে বাতাসে বিষাক্ত কণা ভাসতে থাকে। এটি শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক।
কয়েলের ধোঁয়া ও অ্যারোসলের রাসায়নিক পদার্থ শ্বাসনালীর প্রদাহ, হাঁপানি, এবং অন্যান্য শ্বাসজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে। কয়েল পোড়ানোর ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক পদার্থ দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। মশাবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকতে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মশাবাহী ছয়টি রোগ সম্পর্কে থাকতে হবে সচেতন। মশার কামড় থেকে আত্মরক্ষাই সবচেয়ে বড় সমাধান। মশাবাহিত অসুখ-বিসুখের প্রকোপ বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি বাড়ে।
তাই মশা থেকে বাঁচতে হালকা রঙের কাপড় পরা, ফুলস্লিভ হলে ভালো হয়। বাসা-বাড়ির দরজা-জানালায় নেট ব্যবহার করা। রাতে বিছানায় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা। শিশুরা ঘুমালে দিনেও তাই। পাহাড়ি এলাকায় ঘুরতে গেলে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে, সঙ্গে ফুলহাতা জামা ও মশা তাড়ানোর ওষুধ নেওয়া উচিত। বাড়িঘরের আশপাশে বদ্ধ পানি নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। টবের নিচে, এসির নিচে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা। প্রয়োজনে পাড়ার সবাই মিলে নিজেদের আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখুন এবং পানি ও আবর্জনামুক্ত রাখার বিষয়ে একতাবদ্ধ হোন।
মহানগরীতে মশা নিধনের পরিকল্পনা চলমান জানিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা মশা নিধনকে ব্যাহত করছে। তবে আমি আশা করব, নগরবাসী আরও চার-পাঁচ দিন ধৈর্য ধরবেন। কারণ আমরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে নগরীর বেশির ভাগ ড্রেন পরিষ্কারে নেমে যাব।
তিনি জানান, মহানগরীতে মেয়াদহীন কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মেডিকেল অ্যান্টোমোলজি বিভাগ ও খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইংয়ে পরীক্ষার রিপোর্ট সন্তোষজনক হলে তখনই মশার ওষুধ ক্রয় করা হয়। তাই এখানে কোনো ধরনের দুর্নীতির সুযোগ নাই। নগরীতে যথেষ্ট পরিমাণ মশার ওষুধ ছিটানো হয়। যাতে মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসী রেহাই পান।