শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ১১:৪১ পিএম

সন্তুষ্ট নন সেবাকর্মীরা, সংশোধনের দাবি

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ১১:৪১ পিএম

সন্তুষ্ট নন সেবাকর্মীরা, সংশোধনের দাবি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া সেবাকর্মীদের জন্য নববর্ষের উপহার হিসেবে ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে সরকার। তবে এই উপহার নিয়ে সন্তুষ্ট নন সেবাকর্মীরা। সেবাকর্মীদের বক্তব্য, আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা তাদের বৈষম্য-বঞ্চনা দূর করার ক্ষেত্রে নীতিমালা পরিবর্তনের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রথা বাতিল করে সেবা ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে সরাসরি নিয়োগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। অথচ প্রণীত নীতিমালায় বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সর্বনিম্ন বেতন ২৫ হাজার টাকা করা, শ্রম মন্ত্রণালয়; অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানের লিখিত অভিযোগ বা অনুমতি ছাড়া চাকরিচ্যুত না করা, মাতৃকালীন ছুটি ন্যূনতম ৯০ দিন করা, দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের আত্মীকরণ করা, হাজিরা ৩০ দিন ধরা, প্রকল্পভিত্তিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানের সুপারিশক্রমে সরকার চাইলে বয়স শিথিল করে জাতীয়করণ করার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে নীতিমালা সংশোধনের দাবি সেবাকর্মীদের।

সেবাকর্মীরা মনে করেন, প্রণীত নীতিমালার মাধ্যমে মাসিক পরিষেবা ফি বৃদ্ধি বা উৎসবভাতার মাধ্যমে কিছুটা আর্থিক সুবিধা পেলেও নীতিমালা সংশোধন করে উল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা না হলে তাদের বর্তমান জীবনমানের কোনো উন্নতি হবে না।

বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতা এবং মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করা একাধিক সেবাকর্মীর সঙ্গে আলোচনায় এসব তথ্য জানা গেছে।
এ দিকে আজ শনিবার ‘সরকার কর্তৃক ঘোষিত আউটসোর্সিং নীতিমালা ও দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক কর্মচারী নীতিমালা ২০২৫’ বিষয়ে অনুষ্ঠানিক মতামত জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ। রাজধানীর হাতিরপুলের বীর-উত্তম সিআর দত্ত রোডের রোজ ভিউ প্লাজায় সকাল ১১টায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিসের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী। আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল হক নুরও এ সময় উপস্থিত থাকবেন।  
নীতিমালার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান আনিস। তবে এই নীতিমালা সেবাকর্মীদের অন্যতম দাবি পূরণ করতে পারেনি বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম দাবি ছিল ঠিকাদার প্রথা বাতিল করা। এই দাবি আদায়ে বিগত সরকারের সময়ও আমরা অনেক সংগ্রাম করেছি কিন্তু তারা কর্ণপাত করেনি। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এই দাবিসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করেছি। পাশাপাশি রাস্তায়ও আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। এসব আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের অনেক সেবাকর্মীও আহত হয়েছেন। এরপরও যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হলো, তাতে আমাদের অন্যতম দাবির বিষয়টি উপেক্ষিত থাকায় মেনে নিতে পারছি না। ঠিকাদার প্রথা বাতিলের বিষয়ে আমাদের অবস্থান তাই আগের মতোই ।

তিনি আরো বলেন, বিগত ১০ বছর সেবাকর্মীদের এক টাকাও বেতন বাড়েনি। অথচ এই সময়ে জীবনধারণের জন্য সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। প্রণীত নীতিমালায় মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বেতন বাড়ানো হয়েছে। এতে একজন সেবাকর্মী কীভাবে বেঁচে থাকবে। তাই আমাদের দাবি, সেবাকর্মীদের বেতন ন্যূনতম ২৫ হাজার টাকা করা হোক।
ইতিমধ্যে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সেবাকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বেতন বকেয়া রয়েছে প্রায় ৪ হাজার কর্মীর। প্রণীত নীতিমালায় এই বিষয়গুলো আসেনি। এ ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল ও বকেয়া বেতন পরিশোধের সময়সীমা নিয়ে নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট ঘোষণা থাকা দরকার। অন্যদিকে মাতৃত্বকালীন ছুটি কমপক্ষে ৯০ দিন করা প্রয়োজন বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, উল্লিখিত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’ সংশোধন করা হলে সেবাকর্মীদের জীবনমানের সত্যিকার উন্নতি হবে বলে বিশ্বাস করি।

ঠিকাদার কোম্পানি সাকি ট্রেডার্সের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পেয়ে ২০১৮ সাল থেকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়ার্ডবয় পদে কাজ করছেন মো. রাহি মোল্লা। এই নিয়োগ পাওয়ার জন্য তাকে ঠিকাদার কোম্পানিকে অগ্রিম টাকাও দিতে হয়েছে। কিন্তু প্রায় দুই বছর ধরে তিনি বেতন পাচ্ছেন না।

রাহি মোল্লা জানান, এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার ঠিকাদার কোম্পানির চুক্তির মেয়াদ শেষ। আদৌ চুক্তি হবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, ঠিকাদার প্রথা বাতিল করে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। কিন্তু তা হলো না। কেন্দ্রীয় নেতারা এখন কী পদক্ষেপ নেয় সে অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।

রাজধানীর বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) আউটসোর্সিংয়ে কাজ করা ১০ জনের বেতন বাকি ছিল ১০ মাস। চলতি বছরের রোজার ঈদের পর ৩ মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি ৭ মাসের বেতন পাওয়ার আগেই ঠিকাদার কোম্পানির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চুক্তির সময় শেষ হয়ে যাবে। বিষয়টি নিয়ে তাই উদ্বেগ রয়েছে সেবাকর্মীদের মাঝে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি মন্ত্রণালয়ে কাজ করা এক সেবাকর্মী বলেন, ঠিকাদার প্রথা বাতিল না করলে কোনো লাভ নাই। কারণ কর্মীদের পাওনা টাকার একটি বড় অংশ কমিশন হিসেবে ঠিকাদাররা নিয়ে নেয়। আর ৫০০-৬০০ টাকা বেতন বাড়িয়ে কী উপকার হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সরাসরি নিজেরা আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দেয়, তাহলেই সুফল পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এই সেবাকর্মী।  

আনুমানিক ১২০টি ঠিকাদার কোম্পানির অধীনে দেশের সাত বিভাগের ৬৪ জেলায় সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ে কর্মরত প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ কর্মচারীর ভাগ্য সত্যিকার অর্থে ঠিকাদারদের হাতেই জিম্মি। বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ জানিয়েছে, সারা দেশে আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কত সে সম্পর্কে তালিকাওয়ারি পরিসংখ্যান না থাকলেও সংগঠনের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় করা জরিপে আনুমানিক সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ কর্মীর তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, আউটসোর্সিংয়ে চাকরি বলতে বোঝায় কোনো সরকারি দপ্তরের নিজস্ব বা রাজস্ব খাতভুক্ত কর্মচারী না থাকায় কোনো কোম্পানির মাধ্যমে জনবল সংগ্রহকরণ। জনবল সংকটের কারণে তৃতীয় পক্ষ বা জনবল সরবরাহকারী কোম্পানির মাধ্যমে সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো জনবল সংগ্রহ করে থাকে।  

জরুরি ভিত্তিতে ১২টি সেবাগ্রহণের জন্য সরকার ১৬ থেকে ২০তম গ্রেডে শূন্যপদে এভাবে জনবল নিয়োগের জন্য আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবাগ্রহণ নীতিমালা-২০১৮ তৈরি করে। এই নীতিমালা অনুযায়ীই আউটসোর্সিংয়ে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০২৫’ প্রণয়ন করে সরকার। নীতিমালায় মাসিক পরিষেবা ফি বৃদ্ধির পাশাপাশি উৎসব বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং পেনশনের মতো সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং উচ্চমানের পরিষেবা নিশ্চিত এবং পাশাপাশি সেবাকর্মীদের অনুপ্রাণিত করতে গৃহীত নীতিমালায় পাঁচটি সাধারণ বিভাগ এবং তিনটি বিশেষায়িত সেবাক্ষেত্রে মাসিক পরিষেবা ফি বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুটি বার্ষিক উৎসবে সেবাকর্মীরা তাদের মাসিক পরিষেবা ফি’র ৫০ শতাংশ বোনাস পাবেন। বাংলা নববর্ষে তারা তাদের মাসিক পরিষেবা ফির ২০ শতাংশের সমপরিমাণ বৈশাখিভাতাও পাবেন। নীতিমালায় চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ দিনের বার্ষিক ছুটির ব্যবস্থাও করা হয়েছে এবং তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে মূল কাজের দায়িত্ব সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতি অর্থবছরে প্রতিটি চাকরিজীবীকে দুই সেট ইউনিফর্ম প্রদান করা হবে, যা তাদের কর্তব্যরত অবস্থায় পরতে হবে। যেসব কাজ নারী সেবাকর্মীসংশ্লিষ্ট সেসব কাজে নারী কর্মীদের জন্য নীতিমালায় ৪৫ দিনের মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা হয়েছে। এ ছাড়া নীতিমালায় সেবাজীবীদের জন্যও আর্থিক সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। নীতিমালায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সেবাকর্মীর মাসিক সেবামূল্য ও প্রণোদনা অর্থ বিভাগ কর্তৃক সময়ে সময়ে জারীকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। সেবা ক্রয়কারী কর্তৃক ঘোষিত নির্ধারিত সেবাঘণ্টা, সেবাকর্মীর সেবা সময় হিসেবে বিবেচিত হবে।

আউটসোর্সিংয়ে যেসব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, সেগুলো হলোÑ সিকিউরিটি গার্ড, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সহকারী গার্ডেনার, ইলেকট্রিক্যাল হেলপার, কার্পেন্টার, কাঠমিস্ত্রি, হেলপার, স্যানিটারি হেলপার, পাম্প হেলপার, গাড়ির হেলপার, এসি মেকানিক হেলপার, চৌকিদার, ল্যাব এটেনডেন্ট, ইমার্জেন্সি এটেনডেন্ট, স্ট্রেচার বেয়ারার, ওয়ার্ডবয়, আয়া, সহকারী বাবুর্চি, লিফটম্যান, লাইনম্যান, ফরাশ লশকর, মাসন হেলপার, ম্যাসেঞ্জার, মশালচি, এনিম্যাল এটেনডেন্ট, গেস্ট হাউস এটেনডেন্ট, হোস্টেল এটেনডেন্ট, ডোম, বাইন্ডার, অদক্ষ শ্রমিক ড্রাইভার (হেবি), সুপারভাইজর, কেয়ারটেকার, ওয়ার্ড মাস্টার, ইলেকট্রিশিয়ান, লিফট মেকানিক, এসি মেকানিক, পাম্প মেকানিক, জেনারেটর মেকানিক, অন্যান্য কারিগরি কাজসংক্রান্ত টেকনিশিয়ান এবং সহকারী ইঞ্জিন মেকানিক, টেন্ডল, গ্রিজার, টেইলর, ডুবুরি, লন্ড্রি অপারেটর, ফরাশ জমাদার, সহকারী ইলেকট্রিশিয়ান, সুকানি, বাবুর্চি, বাগানকর্মী ও দক্ষ শ্রমিক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

আরবি/একে

Link copied!