ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ছাত্রদলের ভাবনা: নাছির উদ্দীন

এফ এ শাহেদ
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ১১:৪৩ পিএম
ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দলটির রয়েছেন দীর্ঘ ৪৬ বছরের গৌরবময় ইতিহাস। অতীতের এই গৌরবময় ইতিহাসের পতাকা বহন করে চলছেন বর্তমান নেতারাও। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেও নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে দলটি। এসব কর্মপরিকল্পনাসহ সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির কথা বলেছেন রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক এফ এ শাহেদ


রূপালী বাংলাদেশ: শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে ছাত্রদল কী ধরনের কাজ করছে?

নাছির উদ্দীন নাছির: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ইতিহাস ৪৬ বছরের গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালের প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এটি শুধু একটি ছাত্র সংগঠন নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে এক বলিষ্ঠ নাম। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন ছাত্রসমাজের অধিকার আদায় এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে। এ সংগঠনের মূল লক্ষ্য ছিল ছাত্রসমাজকে জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে প্রস্তুত করা এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা।

রূপালী বাংলাদেশ: সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বৃহত্তর ছাত্র সংগঠনটির কী ধরনের কাজ করা উচিত বলে মনে করেন?

নাছির উদ্দীন নাছির: ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে, এটি শুধু একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়, বরং ছাত্রসমাজের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন এবং দেশের প্রতি গভীর দায়িত্ববোধের প্রতীক। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতিটি সংকটময় সময়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে এই ছাত্র সংগঠন। শুরুটা ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এবং স্বৈরশাসক এরশাদের সামরিক শাসনের সময় থেকে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামল পর্যন্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ছাত্রদল ছিল রাজপথের প্রথম সারির সংগঠন। কঠোর দমন-পীড়নের মধ্যেও সংগঠনটি এক মুহূর্তের জন্য পিছু হটেনি।

১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পতন থেকে সবশেষ ২৪-এর জুলাই বিপ্লব। বিগত প্রায় ১৭ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনামলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে ছাত্রদল আপসহীন ভূমিকা পালন করেছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে সর্বাত্মকভাবে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে লড়াই করেছে ছাত্রদল। ২৪-এর জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের প্রায় ১০০-এর বেশি নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে যা আর কোনো ছাত্র সংগঠনের হয়নি। তবে আমরা গণঅভ্যুত্থানের কোনো ক্রেডিট দাবি করিনি।

রূপালী বাংলাদেশ: বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ নানা স্থানে ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে- এ বিষয়ে কী বলবেন?

নাছির উদ্দীন নাছির: জুলাই-আগস্টের জনআকাক্সক্ষার দাবিতে মাঠে নামে ছাত্রদল। যা অনেক অর্থেই পূরণ হয়েছে। তবে জনগণের সরকার হলে তা বৃহৎ অর্থে পূরণ হতো। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়নি। আমাদের জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ওয়াসিম চট্টগ্রামের যে কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন সেখানে ছাত্রশিবিরের কিছু নেতাকর্মী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্রদলের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে। যা সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধ করেন। একইসাথে, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক কলেজে যে ঘটনার জন্ম দেয় তা প্রতিরোধ করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদলের সঙ্গে কোনো ছাত্র সংগঠনের কোনো বিরোধ নেই। তবে, অনেক গোপন সংগঠন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

রূপালী বাংলাদেশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সঙ্গে অন্য ছাত্র সংগঠনের কোনো বিরোধী মনোভাব বা অবস্থান রয়েছে কী?

নাছির উদ্দীন নাছির: নতুন যে ছাত্র সংগঠনটি হয়েছে তাদের আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা মনে করছি প্রতিটি ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি থাকা উচিত, প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক রাজনীতির বাইরে কোনো রাজনীতি থাকা উচিত না। কোনো গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তবে এখনকার ছাত্রশিবিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব নেতৃবৃন্দ রয়েছে তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস কায়েম করেছে, তাদের সঙ্গে রাজনীতি করেছে। ছাত্রলীগে যাদের পদ-পদবি ছিল এমন অনেকেই ছাত্রশিবিরে নেতৃত্বে এসেছে। একই সাথে ছাত্র শিবিরের পূর্বের যে ইতিহাস, স্বাধীনতাযুদ্ধের যে অবস্থান তার জন্য তাদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

রূপালী বাংলাদেশ: ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নানামুখি অভিযোগ কীভাবে দেখেন?

নাছির উদ্দীন নাছির: যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রকাশ করা তার মতপ্রকাশের অধিকারের মধ্যে পড়ে। আমরা মনে করছি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিরুদ্ধে যেসব মব সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে তা খুব বেশি গ্রহণযোগ্য নয়। গত প্রায় ১৬ বছর ধরে যারা প্রকাশ্যে গণতান্ত্রিক রাজনীতি করেনি। যারা গোপন তৎপরতার সঙ্গে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতি করেছে তারাই ছাত্রদলের নামে-বেনামে একটি ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।

আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। ছাত্রদল এ দেশের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং জনগণের পাশে ছিল, থাকবে। গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে একটি সুস্থ-ইতিবাচক রাজনীতি উপহার দিয়েছে ছাত্রদল। যার ফলে ছাত্রদলের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।  

রূপালী বাংলাদেশ: ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কী কাজ করছে সংগঠনটি?

নাছির উদ্দীন নাছির: ছাত্রদল শুধু নিজস্ব উন্নয়নে নয়, বরং জাতীয় ও বৈশ্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শুধু ছাত্রদের অধিকার আদায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আধুনিক চিন্তা-চেতনা ও মানবিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দেবে। উদ্দেশ্যবিহীনভাবে শুধু রাজনৈতিক কর্মী সংগ্রহ ছাত্রদলের উদ্দেশ্য নয় বরং দক্ষতা, জ্ঞান ও নৈতিকতার উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করবে। গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ছাত্রদল একটি প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী রাষ্ট্র তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।

রূপালী বাংলাদেশ: আগামী নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদল কী ভাবছে?

নাছির উদ্দীন নাছির: দেশের সাধারণ মানুষ গত তিনটি নির্বাচনে তাদের ভোট দিতে পারেনি। মানুষকে জিম্মি করে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল খুনি হাসিনা সরকার। ’১৪ সালের বিনা ভোটে নির্বাচন, ’১৮ সালের নির্বাচন, ’২৪-এর ডামি নির্বাচন নির্বাচন হয়েছিল যেটি মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১টি দফা দেওয়া হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েছি এবং নিচ্ছি, যাতে তাদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

গত যে তিনটি নির্বাচন যেখানে বিশেষ করে তরুণরা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেনি। তবে, তাদের মতামতকে উপেক্ষিত করার প্রতিবাদে জুলাই-আগস্টে তরুণরা জীবন দিয়ে স্বৈরাচার হাসিনাকে বিতাড়িত করে গণঅভ্যুত্থানকে সফল করেছে। সুতরাং গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট নিয়ে তরুণদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা দাবি জানাই, গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী গণআকাক্সক্ষা হচ্ছে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশ: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

নাছির উদ্দীন নাছির: আপনাকে এবং রূপালী বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।