সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ১১:৪১ পিএম

জাপানের সঙ্গে প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ১১:৪১ পিএম

জাপানের সঙ্গে প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা

ছবি: সংগৃহীত

জাপান ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) চ‚ড়ান্ত করতে গতকাল রোববার থেকে শেষ রাউন্ডের আলোচনা শুরু হয়েছে। যা চলবে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সফলভাবে আলোচনা সম্পন্ন হলে এটি হবে যেকোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি।

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে উন্নত দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা আর পাবে না। ফলে বাংলাদেশকে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। এজন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাপানের সঙ্গে ইপিএ করতে চায় বাংলাদেশ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ইপিএ বাস্তবায়নের জন্য ৫ম দফা আলোচনা জাপানে ২০ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এবার বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) আয়েশা আক্তার। প্রতিনিধিদলে বিশের অধিক সদস্য রয়েছেন। এর আগে তিনবার ঢাকায় এবং একবার টোকিওতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। শেষ ও ৫ম দফা আলোচনার অবস্থান এবং কৌশল নির্ধারণের জন্য গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেড ইন সার্ভিসের প্রস্তুতিমূলক সভা গত ১৩ এপ্রিল হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে রপ্তানি বাজার সংরক্ষণ, স¤প্রসারণ ও বিভিন্ন দেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ ও ট্রেড ব্লকের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ), মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) করার নীতি গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৪টি দেশ ও ট্রেড ব্লকের সঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি (আরটিএ) সম্পাদনে নোগোসিয়েশন বা আলোচনা প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে জাপান অন্যতম।

জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরকে সামনে রেখে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের যৌথ স্টাডি গ্রুপের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য, শুল্ক পদ্ধতি, বাণিজ্য সহজীকরণ, বিনিয়োগ, ইলেকট্রনিক বাণিজ্যসহ ১৭টি খাতের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে চিহ্নিত খাতগুলো হচ্ছে পণ্যের বাণিজ্য, বাণিজ্য সহজীকরণ, বাণিজ্যে বাধা দূর করার ব্যবস্থা, শুল্ক পদ্ধতি এবং বাণিজ্য সুবিধা (সিপিটিএফ), বাণিজ্যে প্রযুক্তিগত বাধা (টিবিটি), পরিষেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, ইলেকট্রনিক বাণিজ্য, সরকারি কেনাকাটা, মেধাস্বত্ব, প্রতিযোগিতা, ভর্তুকি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগ, কাস্টমস প্রসিডিউর ও ট্রেড ফেসিলিটেশন, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ব্যবসা পরিবেশের উন্নতি, ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি, শ্রম, পরিবেশ, স্বচ্ছতা, সহযোগিতা এবং বিরোধ নিষ্পত্তি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আশার কথা হলো, ‘মুক্ত বাণিজ্য’ বিষয়ে আমাদের দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায় জড়িতরা ভালো ধারণা রাখেন। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (এফটিএ) স্বাক্ষর করা সদস্য দেশগুলোর একটি বাণিজ্য বøকে অন্তর্ভুক্তকৃত এলাকা হলো মুক্ত বাণিজ্য এলাকা। বাণিজ্যে বাধা, আমদানি কোটা, শুল্ক কমাতে এবং একে অন্যের সঙ্গে পণ্য ও পরিষেবার বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য এ ধরনের চুক্তিগুলোর মধ্যে অন্তত দুটি দেশের মধ্যে পারস্পরিকভাবে এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকে।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য করার পরিকল্পনা নেওয়া ও তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে উভয় দেশ লাভবান হয়।

সম্প্রতি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি বা ইপিএ হওয়ার বিষয়ে তোড়জোড় চলছে।

২০২৩ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার নয়াদিল্লি সফরের পর মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এবং ঢাকার উত্তরে ছোট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের জন্য জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) বাংলাদেশকে ১১২ কোটি ডলার নতুন ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে। মহাসড়কসহ ত্রিপুরা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শত শত কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়নে অর্থায়ন করছে জাইকা। মাতারবাড়ী প্রকল্পের আওতায় আছে খননের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রথম গভীর নৌবন্দর নির্মাণ এবং কক্সবাজারে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প পার্ক নির্মাণ।

সেখান থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার রাস্তা উন্নত হলে ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য অংশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য থেকে পণ্য পরিবহন সহজতর হবে। সুমিটোমো করপোরেশন, তোশিবা ও আইএইচআই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। পরে এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠকের জন্য জাপানে যান। তখন এক যৌথ বিবৃতিতে ২০১৪ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত অংশীদারিত্বকে পরবর্তী ৫০ বছরের জন্য ‘কৌশলগত অংশীদারিত্বে’ উন্নীত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ এবং এর আশপাশের অঞ্চলের উন্নয়নে ‘স্বচ্ছ ও ন্যায্য’ অর্থায়নের মাধ্যমে উচ্চমানের অবকাঠামো নির্মাণের দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের ক্ষেত্রে লজিস্টিক, জ্বালানি ও শিল্পের দিকগুলো বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।

২০২২ সালে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকীতে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট উদ্যোগের অধীনে অগ্রগতি এবং বাংলাদেশের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ এর উদ্বোধনে উভয় রাষ্ট্রপ্রধানই তাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন-৬ নির্মাণে সহযোগিতা করেছিল জাইকা। জাপান বাংলাদেশকে সাইবার সিকিউরিটিতে তার দক্ষতাও দেবে।

২২ জানুয়ারি ঢাকা সফরকালে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা বলেন, জাপান পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি করতে চায়। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায় অনুক‚ল শুল্কব্যবস্থা চালু হয়েছে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে জাপান বাংলাদেশকে বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার ক্ষেত্রে বৃহত্তম দাতা দেশ ছিল। কিন্তু জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ২০১৪ সালে এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণাও তার সৃষ্টি। সে বছরের মে মাসে টোকিওতে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ বৈঠকে জাপান-বাংলাদেশ সমন্বিত অংশীদারিত্বের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছিল। বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট নির্মাণসহ ভবিষ্যৎ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে জাইকার প্রেসিডেন্ট এরপর জুন মাসে বাংলাদেশ সফর করেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতা, উন্নয়ন সহায়তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে শিনজো আবে বাংলাদেশ সফর করেন। টেক্সটাইলের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবং উৎপাদন মূল্যশৃঙ্খলে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই বন্দর ও পানি নিয়ন্ত্রণ সুবিধা, সড়ক, রেলপথ, সেতু, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা প্রচার করছে। বৈদেশিক সাহায্য অব্যাহত রেখে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং আরও অবকাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল জাপান। জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) গত বছর উল্লেখ করেছে যে, বাংলাদেশে কাজ করা জাপানি কোম্পানির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৩৪০টিতে উন্নীত হয়েছে। জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেশ।

রপ্তানির চেয়ে আমদানি প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের মাঝারি আকারের বাণিজ্য অংশীদার হচ্ছে জাপান। তবে অবকাঠামো, নকশা ও নির্মাণ পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে জাপানই বাংলাদেশের বৃহত্তম সরবরাহকারী দেশ।

জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা চীনের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাতে পারে। পাশাপাশি ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন করে সাজানোর সুযোগও দেয়। জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর জাপানের সঙ্গে এই ভারসাম্যমূলক চুক্তি বাংলাদেশের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

Link copied!