বনানীতে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে খুন হন জাহিদুল ইসলাম পারভেজ। প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যদিও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকি শনাক্ত করা দুই জনকে ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, তাদের ধরতে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলমান রয়েছে।
এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামিকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহ রিমান্ডের এ আদেশ দেন। তবে স্থানীয় সূত্র বলছে, এখনো গ্রেপ্তার হয়নি পারভেজ হত্যার মূল আসামিরা।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তারা বনানী বিদ্যানিকেতনের সাবেক শিক্ষার্থী। তবে কেউই প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।
এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ কে এম মঈন উদ্দিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী মাহবুবুর রহমান রিমান্ড বাতিলসহ জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত সাত দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এর আগে ভোরে মহাখালীর ওয়্যারলেস গেটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার এ তথ্য জানিয়েছেন।ওসি রাসেল সরোয়ার রূপালী বাংলাদেশকে জানান, আমরা প্রায় সব আসামিকে ধরে ফেলেছিলাম, কিন্তু সাধারণ মানুষ আসামিদের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার পর শনাক্ত করা ২ আসামি আত্মগোপনে চলে যায়। তবে তাদের ধরতে আমাদের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে এ ঘটনায় পারভেজের ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে ৮ জনের নামে মামলা করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী ছাড়াও আরো পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
জানা যায়, ঘটনার দিন পারভেজ প্রাইম এশিয়ার গলিতে চা-শিঙাড়া খাওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। সেখানে একটি মেয়ে দেখে হাসতে থাকেন- এই ঘটনার জেরে তিনি হত্যার শিকার হন। ওই সময় সেখানে তিনজন মেয়ে শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই মেয়েদের ইভটিজিং করা হয়েছে বলে দাবি করে তারা তাদের বন্ধুদের ফোন করেন। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয় পক্ষকে নিয়ে মীমাংসাও করে। কিন্তু মাহাথি, মেহেরাব ও আবুজর গিফারী হাজারীপাড়া এলাকার কিছু ছেলেকে নিয়ে আসেন এবং পারভেজের ওপর হামলা চালান।
এ সময় পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে দৌড়ে আসার সময় আঘাতপ্রাপ্ত হন। তারা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যান বলে ধারণা করে পুলিশ।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচজন জড়িত বলে দাবি করেছেন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। গত রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। জানতে চাইলে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী কর্মকর্তা (বনানী থানার ওসি অপারেশন) এ কে এম মাইন উদ্দিন জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ধরা পড়া এই তিনজন সরাসরি পারভেজ হত্যাকাণ্ডে যুক্ত।
‘গ্রেপ্তার এ তিনজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহাথি, পিয়াস ও মেরাজের স্কুলবন্ধু। তাদের ডাকেই তারা হত্যাকাণ্ডে যুক্ত হয় বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্ত।’
‘আমার ছেলেরে পিটনা দিত, হাত-পা ভাইঙ্গা দিত, জীবন নিল কেন’
এদিকে গতকাল সোমবার পারভেজ হত্যায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে তার মা পারভীন ইয়াসমিন ছেলে হারানোর বেদনায় কান্না-আহাজারি করে বলেন, ‘আমার ছেলেরে পিটনা দিত, হাত-পা ভাইঙ্গা দিত, জীবন নিল কেন?’
পুলিশকে উদ্দেশ করে বারবার বলছেন, ‘শুধু তিনজন না, যারা মূল হত্যাকারী এদের আগে ধরেন। রিমান্ডে নেন। আমার ছেলেরে পিটনা দিত, হাত-পা ভাইঙ্গা দিত, জীবন নিল কেন? এদের পিটিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। আদালতের মাধ্যমে সব হত্যাকারীকে তাড়াতাড়ি ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা করেন। তা না হলে, মা হিসেবে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।’
মা বলেন, ‘গ্রেপ্তার ৩ জন এজাহারনামীয় আসামি নয়, আমার সুখের সংসারটা তছনছ হয়ে গেছে’
এ বিষয়ে পারভেজের বাবা মো. জসীম উদ্দিন বলেন, আমাদের সুখের সংসার ছিল। তুচ্ছ ঘটনায় আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে হবে। যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা এজাহারনামীয় আসামি না। তবে তাদের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসা করা হোক। আমার সুখের সংসারটা তছনছ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, পুলিশকে বলব, মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হলো, মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জর গিফারি পিয়াস (২০), মো. মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। সবার আগে এদের ধরে এবং ফাঁসিতে ঝুলালে আমরা শান্তি পাব।