ঝিনাইদহের বিভিন্ন হাটবাজার ও প্রতিষ্ঠানে ময়লা, ছেঁড়া, কাটা ও দুর্গন্ধযুক্ত কম মূল্যমানের টাকা, বিশেষ করে দুই টাকা ও পাঁচ টাকা লেনদেনের কারণে কেনাবেচা ও সার্বিক লেনদেনে ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কম মূল্যের কোনো পণ্যের দাম পরিশোধের সময় ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ইদানীং এসব নোট ও কয়েনের অভাব এতই তীব্র যে, অনেক সময় ক্রেতাকে হয় বেশি দাম দিতে হচ্ছে, অথবা টাকা ফেরত নেওয়ার সময় ছাড় দিয়ে টাকা নিতে হচ্ছে।
এর ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ঝগড়া ও বাগবিতণ্ডা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, ব্যাংক কর্র্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত পারিমাণে দুই টাকা ও পাঁচ টাকার নোট ও কয়েনের সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ওই মূল্যমানের টাকা নিতে ব্যাংকে আসেন না।
অন্যদিকে ঝিনাইদহে জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি বলেছেন, কম মূল্যমানের টাকা লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে তারা ব্যবসায়ীদের নিয়ে সচেতনতামূলক মিটিং করেছেন, লিফলেট বিলি করেছেন। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা কী কারণে ব্যাংক থেকে কম মূল্যমানের টাকা তুলছেন না সে বিষয়ে তিনি বলতে পারছেন না।
অটোরিকশাচলক সমির উদ্দিন জানালেন, কম দূরত্বের পথের জন্য তাদের প্রতিদিন অনেকগুলো পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা বা নোটের প্রয়োজন হয়। এটির অভাব এতই তীব্র যে, ওই মূল্যমানের টাকার অভাবে হয় যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকা নিতে হয়, অথবা নির্ধারিত ভাড়ার পুরো টাকাই ছাড় দিতে হয়। খুচরো টাকার অভাবে যাত্রীদের সাথে অনেক চালকের হাতাহাতির বিষয়টিও প্রায় নিত্যনতুন, জানালেন অটেরিকশাচালক সমির উদ্দিন।
শহরের আরাপপুরের কয়েকজন চা দোকানি জানালেন, একে তো খুচরা টাকার অভাব, তার ওপরে আবার যে নোট লেনদেন হয় তা হয় ময়লা, ছেঁড়া, কাটা না হয় দুর্গন্ধযুক্ত। ফলে ক্রেতারা তা নিতে অস্বীকার করলে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। দোকান মালিক সমিতির নেতাদের কাছে তারা খুচরা টাকার সমস্যার কথা বলেছেন কিন্তু সমাধান হয়নি। বেশ কয়েকজন মুদি দোকানিও একই ধরনের কথা বললেন।
ঝিনাইদহে জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বাদশার সাথে কথা বললে তিনি জানালেন, কম মূল্যমানের টাকা লেনদেন স্বাভাবিক রাখতে তারা ব্যবসায়ীদের নিয়ে কয়েক দফা সচেতনতামূলক মিটিং করেছেন, লিফলেট বিলি করেছেন। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা কী কারণে ব্যাংক থেকে কম মূল্যমানের টাকা তুলছেন না সে বিষয়ে তিনি বলতে পারছেন না।
ব্যাংকে পর্যাপ্ত কম মূল্যমানের নোট ও কয়েন রয়েছে তবুও কেন ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে তাদের প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু শহরের দোকানদাররা ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছেন না, অপনারা যা ভালো মনে করেন লিখে দেন, আমাদের কিছু করার নেই। আপনাদের লেখায় যদি তারা সচেতন হন, ভালো কথা।’
রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের ঝিনাইদহ করপোরেট শাখার ম্যানেজার ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক বশির আহমেদের সাথে কথা বললে তিনি জানালেন, বাজারে যেহেতু প্রায় সব নোটই পুরোনো ও ময়লাযুক্ত, ঝিনাইদহের ব্যবসাকে সচল ও ঝামেলামুক্ত রাখতে তারা ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়েছেন। কম মূল্যমানের পর্যাপ্ত টাকা তিনি মজুদও রেখেছেন। ব্যবসায়ীরা কেন ব্যাংকে এসে তা নেন না তার বোধগম্য নয়, জানান ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।
ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলোজি বিভাগের কনসালটেন্ট প্রসেনজিৎ বিশ্বাস পার্থের সাথে আলাপ করলে তিনি জানালেন, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত কাগজের নোটে ফাঙ্গাল, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থাকে। তাছাড়া অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা টাকা গণনা করার সময় পানির বদলে থুথু ব্যবহার করে থাকেন যা স্বাস্থ্যের জন্য যেমনি ক্ষতিকর, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে ডায়রিয়া, কলেরা, চর্মরোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক।
এসব টাকা ব্যবহারে একদিকে যেমন সচেতন থাকতে হবে, টাকা গণনা করার পর সাবান বা জীবাণুনাশক দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।