মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১১:৪২ পিএম

মালয়েশিয়ায় বিলাসী জীবন যুবলীগ সন্ত্রাসী অসীমের 

হাসিবুল ইসলাম, বরিশাল

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১১:৪২ পিএম

মালয়েশিয়ায় বিলাসী জীবন যুবলীগ সন্ত্রাসী অসীমের 

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পরে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়ে আছেন। পালানোর সময় তারা দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছেন। 

লুটপাটের এই টাকা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ একাধিক দেশে গাড়ি-বাড়ি ক্রয় করাসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন। এই তালিকায় রয়েছেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা অসীম দেওয়ান, যিনি সাবেক মেয়র আবুল খায়ের ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের একমাত্র খলিফা ছিলেন। 

২০২৩ বরিশাল সিটির পঞ্চম পরিষদের বিতর্কিত ভোটে খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র নির্বাচিত হলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য অসীমের নামের আগেও উপ-মেয়রের ট্যাগ লেগে যায়। এরপরে বরিশালের পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণ করাসহ সিটি করপোরেশনে সেবাপ্রত্যাশীদের জিম্মি, বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ৫০০ কোটির বেশি টাকা লুটেছেন তিনি। 

এ নিয়ে বর্তমানে মামলা-হামলা-হয়রানিতে নিপীড়িত নেতাকর্মীদের ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা যায়। এই রাজনৈতিক সন্ত্রাসীর মালয়েশিয়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করার খবরে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও সংক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। 

অনুসন্ধানী সূত্রগুলো জানিয়েছে, ২০২৩ সালে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে বঞ্চিত করে বরিশাল সিটিতে খোকন সেরনিয়াবাতকে নৌকা বরাদ্দ দেওয়ার পরপরই কেন্দ্রীয় যুবলীগ সদস্য অসীম দেওয়ানের রাজনৈতিক সন্ত্রাস শুরু হয়। শহরের বিভিন্ন হাটবাজার দখল নেওয়াসহ দলীয় ঘরনার প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের বিশেষ করে সাদিক অনুসারীদের মারধর করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর উদাহরণও রয়েছে। 

ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শহরের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অসীম দেওয়ান এক সময়ে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বাসার বাজার টানতেন। ২০১১ সালের দিকে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। তখন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশে জসিম উদ্দিনকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি করা হলেও অসীম দেওয়ানকে সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই হাসানাত আব্দুল্লাহর সুপারিশে মনোনীত করা হয়। 

পরবর্তীতে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরনের আকস্মিক মৃত্যু হলে বরিশাল আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় হাসানাত আব্দুল্লাহর হাতে। হাসানাতপুত্র সাদিক আব্দুল্লাহর কাছাকাছি অসীম থাকলেও কিছুদিন পরে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাদিক অনুসারীদের রোষানলে পড়ে বরিশাল থেকে পালিয়ে রাজধানী ঢাকায় আশ্রয় নেন।

সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীতে বসবাসের সুবাদে প্রেম ও অপহরণের অভিযোগে ১৯১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে পিস্তলসহ গ্রেপ্তার করলে অসীমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরে জেল খেটে তিনি বের হলেও তাকে আর রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি।

দীর্ঘদিন পরে ২০২৩ সালে খোকন সেরনিয়াবাত যখন নৌকার টিকিট নিয়ে বরিশালে আসেন, অসীম তার সাথে চলে আসেন তামিল হিরোর স্টাইলে। সাদিক অনুসারী সেই মান্না ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হামলা-মারধর শেষে পুলিশের হাতে তুলে দেয় অসীম বাহিনী। সাদিকের একমাত্র হাতিয়ার মান্নাকে পাকড়াও করার পরেই বরিশাল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে যায়। নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকনের শক্তিতে বলীয়ান হয়ে অসীম দেওয়ান গোটা নগরবাসীর ওপর ছড়ি ঘোরাতে থাকেন। তার নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজিসহ সাদিক অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিধন চলে দীর্ঘদিন। 

অভিযোগ আছে, বিতর্কিত ভোটে খোকন সেরনিয়াবাত মেয়র হলে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান অসীম নামের আগে উপ-মেয়রের ট্যাগ লাগিয়ে বরিশাল শাসন শুরু করেন। এমনকি মেয়র খোকন কোথায় কোন আয়োজনে অংশ নেবেন, তাও নির্ধারণ করে দিতেন অসীম দেওয়ান। একই বছরের নভেম্বর মাসে খোকন সেরনিয়াবাত সিটির দায়িত্বভার গ্রহণ করলে করপোরেশনের আওতাধীন বরিশাল নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি পদ থেকে শ্রমিক লীগ নেতা আফতাব হোসেনকে সরিয়ে সেখানে অসীম দেওয়ানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অসীমকে পরিবহন খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর পরেই তার প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাস শুরু হয়ে যায়। সাদিক অনুসারীদের মারধর করে বাস মালিক গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া এবং প্রতিদিন সেখান থেকে লাখ লাখ টাকার চাঁদা উত্তোলন করা ছিল অসীমের রুটিন ওয়ার্ক। 

নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস মালিক গ্রুপের একটি সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে অসীমকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়ার পরে তিনি কোটি টাকার বেশি মূল্যের একটি বাস নামিয়েছিলেন। এ ছাড়া প্রতিদিন তিনি বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলরত পরিবহনগুলো থেকে নির্ধারিত হারে কয়েক লাখ টাকার চাঁদা তুলতেন, যা সন্ধ্যার পরে মেয়র খোকনের কালুশাহ সড়কের বাড়িতে নিজেই নিয়ে যেতেন।

সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, নথুল্লাবাদ ছাড়াও রূপাতলী, পোর্ট রোড, লঞ্চঘাটসহ সব লাভজনক স্থান থেকে অসীমের নেতৃত্বে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা তোলা হয়। অনুরূপভাবে এই রাজনৈতিক সন্ত্রাস ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন পর্যন্ত ৫০০ কোটির চেয়ে বেশি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। 

এ ছাড়া সেই সময় তার বিরুদ্ধে মেয়রপত্নী লুনা আব্দুল্লাহর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ সাদিক অনুসারীরা। সরকার পতনের পরে অসীম পালিয়ে বিদেশে গেলেও তার বিরুদ্ধে বরিশালে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। অসীমের চাঁদাবাজিতে সঙ্গ দিয়েছেন এমন অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। 

তাদের অভিযোগ, তামিল সিনেমার হিরোর স্টাইলে বরিশালে এসে রাজনৈতিক সন্ত্রাস চালিয়ে ৫০০ কোটির বেশি টাকা লুটে নিয়েছেন অসীম দেওয়ান। ৫ আগস্টের পর থেকে তার সাথে কোনো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না, অথচ তিনি ফেসবুকে সক্রিয় আছেন। এখন শোনা যাচ্ছে, অসীম মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এবং সেখানে ফ্ল্যাট কেনাসহ ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেছেন। এ নিয়ে ৫ আগস্টের পরে হয়রানির শিকার নেতাকর্মীরা প্রচণ্ড চটেছেন।

কিছুদিন পূর্বে দেশে ফিরেছেন এমন একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ তথা বরিশাল থেকে অর্থকড়ি লুটপাট করে অসীম তা বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন। তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে সেখানে ফ্ল্যাট ক্রয় ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর পাশাপাশি এক ধরনের বিলাসী জীবনযাপন করছেন, যা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন আওয়ামী লীগ ঘরানার প্রবাসীরা। 

রাজনৈতিক সন্ত্রাসী অসীম দেওয়ানের পাচার করা অর্থ ফেরত আনাসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ অনেকে। তাদের ভাষায়, অসীমের মতো চাঁদাবাজরাই আওয়ামী লীগকে ডুবিয়েছে, নিয়ে গেছে ধ্বংসের কিনারায়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!