লন্ডনে উৎসবের আমেজে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীদের ভূরিভোজে অংশ নিতে দেখা গেছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেশে সাধারণ নেতাকর্মীদের সীমাহীন কষ্টের মধ্যে রেখে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে এভাবে কোরমা পোলাও দিয়ে হাসিমুখে ভূরিভোজে অংশ নেওয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেকেই লিখেছেন এটা লজ্জার। পালিয়ে গিয়ে আয়েশি জীবন-যাপন করা দলের এই শীর্ষ নেতাদের তৃণমূলে অসহায় হাজারো নেতাকর্মীদের আদালতে বিচারের দাবি জানান তারা।
জানা যায়, গত রোববার যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান ফারুকের ছেলের বিয়েতে লন্ডনের অভিজাত এলাকা ওটুর ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে একসঙ্গে মিলিত হয়ে ভূরিভোজ সারতেও দেখা গেছে তাদের। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ক্ষমতায় থাকাকালীন বিদেশে তৈরি করা সেকেন্ড হোমে আশ্রয় নিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সেখান থেকেই এখন সক্রিয় রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। বিভিন্ন উপলক্ষ ঘিরে একসঙ্গে মিলিত হতেও দেখা যাচ্ছে এসব নেতাকর্মীকে। বিয়েতে অংশ নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবও এই বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা সারব আলীর ছেলের আকদ অনুষ্ঠানেও নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, এদের লজ্জা বলতে কিছু নেই। দলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর না রেখে লন্ডনে বসে বিয়েবাড়িতে মজা করে ভূরিভোজে অংশ নেয়। এমন নেতাদের কর্মী যারা, তাদের এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে এদের পরিহার করে তারা যেন সঠিক এবং যোগ্য নেতার ছায়াতলে আসে।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিয়েতে অংশ নেওয়া কোনো অপরাধ নয়। এখানে দলের শীর্ষ নেতাদের দেখে দলীয় নেতাকর্মীরা কিছুটা উজ্জীবিত হয়েছে। এটা ছিল আওয়ামী লীগের একটা মিলনমেলা। দলীয় হাজার হাজার নেতাকর্মীরা এতে অংশ নিয়েছে। তারা দলের সাবেক মন্ত্রীদের কাছে পেয়ে কিছুটা তৃপ্ত ছিল।
যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুজ্জামান সুহেল, বলেন, লন্ডনের অভিজাত এলাকায় যেখানে বিশাল খরছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে দলের আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এমপি ও নেতাকর্মীদের উৎসবের আমেজে উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। দলের এই অবস্থায় এরা কিভাবে এমন হাসিখুশি থাকতে পারে তা সহজে অনুমেয় এরা কতটা নিষ্টুর। সাধারণ মানুষের রক্তচোষে পালিয়ে আসা নেতাদের সম্পর্কে তাদের কর্মীদের ভাববার বিষয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করে অনেকে লিখেন, এটা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত যারা আমাদের ব্যবহার করেছে তারা আজ কতটা নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে উৎসব আমেজ আর সুন্দর জীবনযাপন করছে। মন্ত্রী-এমপি কয়জন মিছিল সমাবেশে মারা যায়, সাধারণ কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের প্রিয় সংগঠনের জন্য মাঠে নামছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক চার মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে এই প্রথম একসঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে দেখা গেল। এর আগে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল সমাবেশে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে দেখা যায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুর রহমান এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীকে। এ বছরের ২ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশে দেখা যায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে। ৩০ মার্চ লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। আগে থেকে গুঞ্জন ছিল তিনি বেলজিয়ামে ছিলেন। লন্ডনে অধ্যয়নরত ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে তিনি লন্ডনে আসেন।
আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বিয়েতে সাবেক মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাজ্য যুবলীগের এক নেতা জানান, দেশে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে এসে তারা কীভাবে এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, তা ভাবতেও লজ্জা লাগে। এদিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো দলটির বেশির ভাগ নেতা এখন অবস্থান করছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। সেখানে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। সেখানে থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন এসব নেতা। যা মেনে সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিছিলও করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
আপনার মতামত লিখুন :