মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম

সঞ্চয়পত্র বিনিময়যোগ্য করতে চায় সরকার

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২১, ২০২৫, ১১:৫৩ পিএম

সঞ্চয়পত্র বিনিময়যোগ্য করতে চায় সরকার

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সঞ্চয়পত্রকে আর্থিক খাতের একটা অন্যতম অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মুনাফাভিত্তিক এই আর্থিত সনদ ক্রেতার ঘরে বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকে। তাই সরকার এই সনদকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সঞ্চয়পত্রের সনদকে বিনিময়যোগ্য করা হবে। ফলে এই সনদ বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যাবে। এ ছাড়া সরকার স্বীকৃত যেকোনো প্রতিষ্ঠানে তা বিনিময়যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে, যেভাবে জমির দলিল বিনিময়যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় বা ব্যাংকের আমানত বন্ধক রেখে যেভাবে ঋণ নেওয়া যায়। এ ছাড়া অদূর ভবিষ্যতে সঞ্চয়পত্র শেয়ার বাজারে লেনদেনের সুযোগ হতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন রোডম্যাপ প্রণয়ন কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় এ-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় সঞ্চয়পত্র বিনিময়যোগ্য করার জন্য একটি কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে কমিটি সঞ্চয়পত্র বিনিময়যোগ্য করার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে এবং কি উপায়ে তা কার্যকর করা যায় তার পথ বের করবে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে একটা সভা করেছি। এখনো এ বিষয়ে বলার মতো তেমন কিছু হয়নি। তবে সঞ্চয়পত্র বিনিময়যোগ্য করার বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। কারণ এটি অর্থনীতির একটি উল্লেখযোগ্য টুলস। তাই সরকার এই টুলস অলস বসিয়ে রাখতে চায় না।

সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উৎসাহিত করা ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরণ করার উদ্দেশ্যে এবং সাধারণের নির্ঝঞ্ঝাট অর্থ বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত করার অন্য টুল। বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, সাধারণ মানুষের হাতে জমানো টাকা লম্বা সময়ের জন্যে ফেলে না রেখে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগে মুনাফা লাভ, দেশের বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠী যেমন- মহিলা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসার সুযোগ এবং সরকারের সঞ্চয় স্কিমের মাধ্যমে আহরিত অর্থ দ্বারা জাতীয় বাজেট ঘাটতি পূরণ করার সুযোগ। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে সব সঞ্চয়পত্র কেনা ও বিক্রি করা যায়।

দেশে পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। যা সুদ ও ব্যাংক সুদ হারের তুলনায় বেশি। এর মধ্যে রয়েছেÑ বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: এই সঞ্চয়পত্রের পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র, মুনাফার হার মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র রয়েছে, মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। পরিবার সঞ্চয়পত্র: এই সঞ্চয়পত্রের পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র রয়েছে, মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। পেনশনার সঞ্চয়পত্র: এই সঞ্চয়পত্রের  পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র রয়েছে, মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এছাড়া ডাকঘর সঞ্চয়পত্র নামে আরও একটি সঞ্চয়পত্র স্কিম রয়েছে যা শুধু ডাকঘর থেকে লেনদেন করা হয়। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

জানা গেছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বিনিয়োগ প্রবাহ পর্যালোচনা করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রাক্কলন হচ্ছে, অর্থবছর শেষে নিট ঋণ দাঁড়াবে ঋণাত্মক ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মানে, এ খাত থেকে সরকারের ঋণ কমে যাবে। যে পরিমাণ বিক্রি হবে, তার চেয়ে পরিশোধ করতে হবে বেশি। মূলত নতুন বিক্রির তুলনায় সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিশোধ বেশি হওয়ায় এ খাত থেকে বাজেট ঘাটতি মেটাতে কোনো ঋণ পাবে না সরকার। উল্টো বাজেটের অন্য আয় থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা শোধ করতে হবে।

চলতি এপ্রিল মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। কিন্তু কয়েক বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দেয় মানুষ। এমনকি সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রবণতাও বেড়েছে।

অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে মোট ৮৩ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের পরিশোধ বাদ দিয়ে সরকারের নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) মোট ৪৮ হাজার ৬১৫ কোটি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার। একই সময়ে গ্রাহকের আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের নগদায়ন বাবদ ৪৩ হাজার ৪৭৬ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এ কারণে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ বেশি হওয়ায় নিট বিক্রি কমেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রিতেও নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে। বিনিয়োগের এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে মোট ৬২ হাজার ৫০৮ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হতে পারে। একই সময়ে গ্রাহকের নগদায়নের পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। জুন শেষে নিট বিক্রি দাঁড়াবে ঋণাত্মক ১২ হাজার ২২ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সরকারের। দেশি উৎসের মধ্য থেকে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার অঙ্ক বেশি। সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ ঋণাত্মক হওয়ায় ব্যাংকের দিকে বেশি ঝুঁকতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তিন-চার বছর আগে ব্যাংক ঋণের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদ বেশি হওয়ায় বাজেট ঘাটতি মেটাতে এর ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। আইএমএফও চেয়েছিল সঞ্চয়পত্রে সরকারকে প্রতিবছর যে সুদ গুনতে হয়, তা কমে আসুক। এখন ব্যাংকে আমানতের সুদহার বেড়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্র থেকে কিছু অর্থ এলে সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সুবিধা হতো। এই জন্যই সঞ্চয়পত্রকে বিনিময়যোগ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গত কয়েক বছর বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক ঋণে সুদহার বাড়িয়েছে বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশও সুদের হার বাড়িয়েছে। এ ছাড়া সরকার ট্রেজারি বিল এবং বন্ড বিক্রি করে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যে ঋণ নেয়, সেখানেও সুদহার বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সঞ্চয়পত্রের চেয়েও বেশি। সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ব্যাংকের মাধ্যেম ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়ছে, যা সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

Link copied!