বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

বিমানবন্দরে লাউঞ্জ বাণিজ্য সিন্ডিকেটের আড়ালে কারা

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৫, ১১:৩৩ পিএম

বিমানবন্দরে লাউঞ্জ বাণিজ্য সিন্ডিকেটের আড়ালে কারা

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাউঞ্জ এবং বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলোর বরাদ্দ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পছন্দের ব্যক্তিদের নামে এসব লাউঞ্জ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও কিছু লাউঞ্জের বরাদ্দ বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো বাতিল হয়নি। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিমানবন্দরে লাউঞ্জ বাণিজ্যের আড়ালে কারা রয়েছেন? এ ছাড়া ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরে আওয়ামী দোসরদের রাজত্ব এখনো চলছে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সাবেক ই-ক্যাব সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেত্রী অভিনেত্রী শমী কায়সার তার ধানসিঁড়ির নামে মাত্র ৬০ লাখ টাকায় শাহজালালে একটি লাউঞ্জ বরাদ্দ নিয়ে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় একটি ব্যাংককে ভাড়া দিয়েছে। শমী কায়সারের মাসে নিট ইনকাম ২ কোটি টাকা। তার এই ধানসিঁড়ি প্রতিষ্ঠানটি বরাদ্দ বাতিল না করেও এক অদৃশ্য শক্তির আশীর্বাদে পুনরায় নবায়ন করা হয়েছে।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের জামাতা অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের ‘নকশি কাঁথা’ প্রতিষ্ঠানের নামেও শাহজালালে একটি লাউঞ্জ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটিরও বরাদ্দ বাতিল না করে নবায়ন করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ভাতিজা আওরঙ্গের কথিত ‘ইননোভা’ নামের প্রতিষ্ঠানের নামেও আরেকটি লাউঞ্জ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানা গেছে। গত মার্চ মাসে লাউঞ্জ বরাদ্দ বাতিল করার কথা থাকলেও তা এখনো বাতিল করা হয়নি।

এদিকে বেবিচকের সম্পত্তি বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা এসব লাউঞ্জ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর বরাদ্দ নবায়ন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া থার্ড টার্মিনালে শতাধিক দোকান বরাদ্দ দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

বরাদ্দপ্রত্যাশীদের বলা হচ্ছে, ‘৩ লাখ  করে টাকা দিয়ে রাখেন যখন কর্তৃপক্ষ বরাদ্দ দেবেন তখন পেয়ে যাবেন।’

জানা যায়, সম্পত্তি বিভাগের দুটি অংশ; একটি শাহজালাল বিমানবন্দরকেন্দ্রিক, এটি মেম্বার অপারেশনের অধীনে। আর বাইরের সম্পত্তি ইজারা, বরাদ্দ দেখভাল করেন সদস্য (প্রশাসন)।

শাহজালাল বিমানবন্দরে আরও যেসব লাউঞ্জ ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা গত সরকারের আমলে আওয়ামী ঘনিষ্ঠদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- ডালাস (মালিক আমিনুল ইসলাম), আলবেট (মালিক আমিনুল ইসলাম), হলোগ্রাম (মালিক মোহাম্মদ আলি), মোহাম্মদ এন্টারপ্রাইজ (মালিক ফজলে রাব্বি)।

এরোস, মালিক নাঈম, ইননোভা, মালিক সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের ভাতিজা আওরঙ্গ, করপোরেট সার্ভিসেস এজেন্সি, মালিক গোলাম কিবরিয়া। এগুলোর বরাদ্দ বাতিল না করে পুনরায় নবায়ন করা হচ্ছে। থার্ড টার্মিনালেও বিশেষ কোটায় রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ দেওয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিভিন্ন দপ্তরে শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন শমী কায়সার ও তার ব্যাবসায়িক পার্টনার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা মৃণাল কান্তি রায়। 

ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা বিমানবন্দরের লাউঞ্জ ও দোকান বরাদ্দ, পণ্য সরবরাহ, বিনা টেন্ডারে ডিজিটাল ব্যানার ব্যবসা, ক্রেস্ট বাণিজ্যসহ বেবিচকের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শমী কায়সারের প্রতিষ্ঠান ‘ধানসিঁড়ি কমিউনিকেশন’ ও মৃণালের ‘এক্সিকিউশন’ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগও জমা পড়েছে। হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি। এখন পর্যন্ত কোনো তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। তবে সেসব অভিযোগের বিষয়ে বেবিচক ও বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় ফের তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর শমী-মৃণাল সিন্ডিকেটের সদস্যরা গা-ঢাকা দিলেও সম্প্রতি তারা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এর মধ্যেই শমী কায়সার গ্রেপ্তার হওয়ায় অনেকটাই বেকায়দায় পড়েছেন সিন্ডিকেটের সদস্যরা। শমী কায়সারকে গ্রেপ্তারের পর তার দুর্নীতির দোসর মৃণাল কান্তিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শমী কায়সারের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ধানসিঁড়ি’ ও মৃণাল কান্তির ‘এক্সিকিউশন’-এর মাধ্যমে শাহজালাল বিমানবন্দরে গত ১৫ বছর প্রভাব খাটিয়ে কোটি কোটি টাকার কাজ বাগিয়েছেন তারা। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য ২০২২ সালে বিমান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় দুদক। রহস্যজনক কারণে সেই তদন্ত বেশিদূর এগোয়নি। বহাল তবিয়তে কাজ করে গেছেন তারা। বরং বারবার তাদের ইজারা চুক্তি নবায়ন করে কোটি কোটি টাকা কামানোর সুযোগ করে দিয়েছেন বেবিচকেরই এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে প্রভাব খাটিয়ে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের প্রায় সব কাজই বাগিয়ে নিত শমীর প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর রাজধানীতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর অংশগ্রহণে ইকাও-এর ৫৮তম ডিজিসিএ সম্মেলন শুরু হয়। প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে এর উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। সম্মেলনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৩৬ দেশ ও ১১টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের মহাপরিচালক ও চেয়ারম্যান এবং তাদের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানের ইভেন ম্যানেজমেন্টের কাজ যৌথভাবে সম্পন্ন করে শমী ও মৃণালের প্রতিষ্ঠান। পুরো অনুষ্ঠানে দুই কোটি টাকা খরচ না হলেও তারা বিল তুলে নেন ১৫ কোটি টাকা।

জানা গেছে, শমী কায়সার ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি ছিলেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১৪ আগস্ট শমীকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। আর মৃণাল কান্তি গত ৫ আগস্ট থেকে পলাতক রয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে তাদের আশীর্বাদপুষ্টদেরই বিমানবন্দরের বিজ্ঞাপনের জন্য বিলবোর্ড, লাউঞ্জ ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ দেওয়া হতো।

গত ১৫ বছর ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরে ধানসিঁড়ি নামে দুই কোটি ৬২ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ টাকা মূল্যের দুটি লাউঞ্জ নামমাত্র মূল্যে (৮৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৬২ টাকা) ইজারা নিয়ে জবরদখল করে আছে শমী কায়সারের প্রতিষ্ঠান। এতে সরকার দেড় কোটি টাকার বেশি রাজস্ব বঞ্চিত হয়। আর ধানসিঁড়ি লাউঞ্জ শমী নিজে পরিচালনা না করে সিটি ব্যাংককে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে হাতিয়ে নেন ২ কোটি টাকা। তাদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও তার ইজারা চুক্তি নবায়ন করা হয়।

মৃণাল কান্তি গত চার বছর ধরে শাহজালালে সব ধরনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন। করোনাকালে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শাহজালালে চৌকোনা ছক এঁকেই বাগিয়ে নেন দুই কোটি টাকা। সিভিল অ্যাভিয়েশনের বড় বড় অনুষ্ঠানে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ মৃণাল কান্তি ছাড়া কাউকে দেওয়া হতো না। কাজ বাগিয়ে নিতে বেবিচকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দামি দামি উপহার দিতেন তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা। 

তবে সিভিল এভিয়েশনের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিতর্কিত লাউঞ্জ ইজারাদারদের চুক্তির মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত আছে। তাদের ইজারার মেয়াদ আর নবায়ন করা হবে না। 

Link copied!