রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইউরিয়া সার আমদানির জন্য সরকারি চারটি ব্যাংকের অনুকূলে ইস্যুকৃত ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় কাউন্টার গ্যারান্টির মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি চায় বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। এই কাউন্টার গ্যারান্টির মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। মেয়াদ শেষের আগেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বিসিআইসি। বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. নূরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত একটি চিঠির সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। যা রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে।
উল্লেখ্য, কাউন্টার-গ্যারান্টি গ্যারান্টারের পক্ষে নিরাপত্তা প্রদান করে (এটি একটি গ্যারান্টি প্রতিশ্রুতি)। গ্যারান্টার একটি ব্যাংক বা জামিনদার কোম্পানি হতে পারে। কাউন্টার-গ্যারান্টি গ্যারান্টারকে রপ্তানিকারককে ক্ষতিপূরণের জন্য সফলভাবে আশ্রয় নিতে না পারার ঝুঁকি থেকে অনেকাংশে মুক্তি দেয়।
বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, বিসিআইসি শিল্প মন্ত্রণালয়ের চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরিয়া সার আমদানি করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৫.৬০ লাখ মেট্রিক টন ও ১৫ লাখ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নির্ধারিত ১৫.৬০ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে ইতিমধ্যে ১২.৩০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের ঋণপত্র স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট আরও ৩.৩০ লাখ মেট্রিক টন সারের ঋণপত্র স্থাপন করতে হবে।
সূত্র জানায়, নিরবচ্ছিন্ন ইউরিয়া সার আমদানির লক্ষ্যে সরকারি চারটি ব্যাংকের অনুকূলে অর্থাৎ সোনালী ব্যাংক পিএলসি ৭ হাজার কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক পিএলসি ৪ হাজার কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি ৪ হাজার কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কাউন্টার গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কাউন্টার গ্যারান্টির বিপরীতে ইউরিয়া সারের ঋণপত্র স্থাপন করা হয়। স্থাপিত ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাংক কর্তৃক ৬ মাসের ট্রাস্ট রসিদের বিপরীতে বাণিজ্য অর্থায়ন এবং ঋণ (এলএটিআর) সৃষ্টির মাধ্যমে সারের মূল্য পরিশোধ করে থাকে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রণীত আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন (পিআইএফ) ঋণের ক্ষেত্রে প্রতিটি এলসির জন্য একটি ঋণ হিসাব খোলা হয়। প্রতিটি ঋণের মেয়াদ ১৮০ দিন। এই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা ঋণখেলাপি ঋণ হিসেবে শ্রেণীকৃত হয়।
বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমদানীকৃত ইউরিয়া সারের বিপরীতে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৭৭৪.৯০ কোটি টাকা। ঋণের অর্থ পরিশোধ না করা গেলে অচিরেই এসব ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে ব্যাংকের জারীকৃত পিআইএফ নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি ঋণদাতাকে নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি স্থাপন ও নতুন ঋণ খুলতে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
বিসিআইসি চিঠি সূত্রে জানা গেছে, নিরবচ্ছিন্ন ইউরিয়া সার আমদানির জন্য বাংলাদেশে ব্যাংকের পিআইএফ নীতিমালা অনুযায়ী এলএটিআর-এর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে পত্র প্রেরণ করা হলে বাংলাদেশে ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়Ñ কৃষি খাতের উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে সার আমদানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখা ও সারের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে বিসিআইসি কর্তৃক ইউরিয়া সার আমদানির বিপরীতে সৃষ্ট পিআইফের মেয়াদ ১৮০ দিনের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ৭২০ দিন নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক তাদের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন সাপেক্ষে আবেদন করা হলে এ কার্যালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কাউন্টার গ্যারান্টির মেয়াদের সাথে ব্যাংক কর্তৃক সৃষ্ট এলএটিআর ঋণের সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্ণিত নির্দেশনার আলোকে গ্যারান্টির মেয়াদ ২ বছর তথা ৭২০ দিন না করা হলে আমদানির বিপরীতে সৃষ্ট এলএটিআর ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে না বিধায় অর্থ বিভাগ কর্তৃক ইস্যুকৃত কাউন্টার গ্যারান্টির মেয়াদ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ অর্থবছরের জন্য বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
তাই রাষ্ট্রীয় খাতে বিসিআইসির মাধ্যমে ইউরিয়া সার আমদানি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ইসু্যুকৃত ১৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ৪টি রাষ্ট্রীয় কাউন্টার গ্যারান্টির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এক বছর বৃদ্ধি ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থ বিভাগের মাধ্যমে বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।