বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম

এ যেন লুটপাটের হিড়িক 

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২২, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম

এ যেন লুটপাটের হিড়িক 

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোন হিসেবে অগ্রিম নিয়েছেন ১৮ কোটি ৯০ হাজার টাকা। বছরের পর বছর পার হলেও তারা ফেরত দিচ্ছেন না সেই টাকা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বেতন থেকে সেই টাকা কেটে সমন্বয় করে রাখছে না। কেন এই টাকা সমন্বয় করে রাখা হচ্ছে না তা শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর জানতে চাইলেও কোনো ব্যাখা দেয়নি বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়। 

শুধু তাই নয়, আরও ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে বসবাস করলেও বেতন থেকে কর্তন করে রাখা হয়নি বাসা ভাড়ার টাকা। এতে ২০২০ থেকে ২০২২ অর্থবছরে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। আপত্তিকৃত এই অর্থ ফেরত আনার জন্য তাগিদ দিয়েছে অধিদপ্তর। এভাবে নানা খাত আর ফাঁক-ফোকরে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসব চলছে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অনিয়মে পিছিয়ে নেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি)। 

শিক্ষা অডিট অধিদপ্তর ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ইউজিসি ও দেশের ২৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় নানা অসঙ্গতি তদন্ত করে ১৪১৯ কোটি ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬৭ টাকার অনিয়ম পেয়েছে। সম্প্রতি এই প্রতিবেদনটি সরকারের হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে অধিদপ্তর। প্রতিবেদনটির অনুলিপিও পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে। 

এদিকে এসব অনিয়মের কারণ আর আর্থিক অসঙ্গতির ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিলেও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো জবাব দেয়নি। অধিদপ্তর অনিয়ম করে লুট করা এসব টাকা ফেরতের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব আইনে চলার কারণে অনিয়ম-দুর্নীতিতে কাউকে তোয়াক্কা করে না। এ ছাড়াও ইউজিসিও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান এবং ইউজিসির আইন দুর্বল হওয়ায় তারাও এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। 

অধিদপ্তরের এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নিয়মের বাইরে গিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা প্রদান, ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগ, পদোন্নতি, বাজেটের অতিরিক্ত খরচ, প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা প্রদান, বিভিন্ন কাজে ভ্যাট কর্তন না করা, বিভিন্ন কাজে ঠিকদারদের চুক্তির বাইরে বিল প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসার ব্যবস্থা করেও আলাদা বাসা ভাড়া নেওয়া, শিক্ষকদের ঋণ দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের দোকান কিংবা মার্কেটের ভাড়া আদায় না করা, ভর্তির ফির টাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডে জমা না দেওয়া, কর্মচারীদের যাতায়াত ভাড়া, উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাওয়ার পর ফেরত না আসলেও তাদের বেতন-ভাতা দেওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গেস্ট হাউস থাকার পরও আলাদা বাসা কিংবা হোটেল ভাড়া নেওয়া, নিয়ম না মেনে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া, অতিরিক্ত দামে নানা কেনাকাটা, কাল্পনিক বিল-ভাউচার তৈরি করে কেনাকাটাসহ ১৮৭ খাতে হয়েছে এসব অনিয়ম-দুর্নীতি। 

সম্প্রতি নিরীক্ষা করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়-কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা। অবশ্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। 

জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা আমাদের আমলের নয়। তারপরও ইউজিসির বিষয়ে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তার জবাব আমরা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জবাব দেবে। ইউজিসিও এসব আর্থিক অনিয়মকে কোনো প্রশ্রয় দেবে না। আমরাও ব্যবস্থা নেব।

এদিকে দীর্ঘ এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে উল্লেখযোগ্য অনিয়মের মধ্যে দেখা গেছে, পাবনা, শাহজালাল, নোয়াখালী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল, যশোর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরেননি। কর্মস্থলে না ফিরলেও তারা নিয়মতি তুলে নিচ্ছেন বেতন। এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, সামাজিকবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান নিম্নমানে বই সরবরাহ করায় ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। যদি টিকাদারি প্রতিষ্ঠান এখনো বইগুলো সরবরাহ করেনি। এই নিরীক্ষা কমিটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গুদাম পরিদর্শন করে দেখেছে, বইগুলো নিম্নমানের কাগজে ফটোকপি করে তৈরি করা হয়েছে। তাই তদন্ত কমিটি করে মানদণ্ড যাচাই করে বইগুলো গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছে এই নিরীক্ষা কমিটি। 

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঋণ গ্রহণ বাবদ কোনো প্রাপ্তি দেখানো না হলেও ঋণ পরিষোধের নামে ৫৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা বাজেট দেখানো হয়েছে। নিরীক্ষা কমিটি কোন খাতে এই ঋণ পরিষোধ করা হয়েছে বা ঋণ গ্রহণের উৎস দেখতে চাইলে তার কোনো ব্যাখাও দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। 


গবেষণা ভাতা প্রদানেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে দেশের বড় চার বিশ্ববিদ্যালয়। এরমধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাপ্যতা ছাড়াই গবেষণা ভাতা প্রদান করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১৪ কোটি ৬২ হাজার টাকা। এই টাকা বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা দেওয়ার কথা বলেছে নিরীক্ষা কমিটি। এই অনিয়মে পিছিয়ে ছিল না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ও। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব গবেষণা নীতিমালা ছাড়াই অনিয়মিতভাবে গবেষণা প্রকল্প কার্যক্রম বাবদ ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। 

সম্মানীর নামে লুটপাট করা হয়েছে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার টাকাও। ২০২১ সালের গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার আয় থেকে ৩৪ কোটি ১৩ লাখ সম্মানীর নামে বিতরণ করা হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। এই টাকা বিতরণ করা সমীচীন নয় বলে মন্তব্য করে তদন্ত কমিটি টাকা ফেরত আনা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। 

এসব অনিয়ম-দুর্নীতিতে পিছিয়ে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি প্রতিষ্ঠান ইউজিসিও। ইউজিসির সদস্যদের বসবাসের জন্য রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব বাসা। অথচ কর্মকর্তারা সেই বাসায় না থেকে আলাদা বাসায় থেকে নিয়মিত বেতনের সঙ্গে বাসা ভাড়া নিতেন। সরকারের নিয়মমতে, যেসব প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাসা রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক ওই বাসায় থাকতে হবে। এই আলাদা বাসা ভাড়া দেওয়ায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১৮ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ ছাড়াও ইউজিসির একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ৯টি গাড়ি জমা দেওয়া হয়নি পরিবহন পুলে। এই গাড়িগুলো প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উঠে এসেছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। 

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসব অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!