বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন/মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১২:১৫ এএম

বস্তিতে ছদ্মবেশে আ.লীগের নেতাকর্মীরা 

টার্গেট ঢাকা দখল!

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন/মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১২:১৫ এএম

টার্গেট ঢাকা দখল!

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর বস্তিগুলোতে নানা পেশার আড়ালে ছদ্মবেশে বসবাস করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ছদ্মবেশে থাকা এসব নেতাকর্মীরা বস্তিতে বসবাস করেই ঢাকা দখলের টার্গেট করে দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চায়। ইতিমধ্যে তারা টার্গেট করে নৈরাজ্যও চালিয়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। রাজধানীসহ সারা দেশে একাধিক স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে, মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে শক্তির জানান দিচ্ছে। বিদেশে পলাতক নেতাকর্মীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে ছদ্মবেশে থাকাদের কাছে অর্থ পাঠাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঢাকা দখলের টার্গেটে সহায়তা করছে প্রতিবেশী ভারতের বিজেপি সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা ও গদি মিডিয়া। আ.লীগের নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে ঢাকার বস্তিতে বসবাস করছেন এবং রাজধানীতে পরিকল্পিতভাবে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীলরা। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকার বস্তিগুলোতে বিশেষ নজরদারি বাড়িয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুতির ৮ মাস না যেতেই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে পড়েছেন। প্রতিবেশী ভারতের সহায়তায় তারা বাংলাদেশে পুনরায় আগের রূপে ফিরতে চায়। রাজধানী ঢাকা দখলের টার্গেট করে আওয়ামী লীগ, দলটির সহযোগী সংগঠনগুলো ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সারা দেশ থেকে জড়ো হয়েছেন এবং হচ্ছেন। রাজধানীতে নাশকতা ও অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখায় ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন। ঈদের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ঈদের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অফলাইন-অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রথমে এক সাথে হচ্ছেন, এরপর  দুই থেকে ৫ মিনিটের একটি ঝটিকা মিছিল করে উধাও হয়ে যাচ্ছেন। পুলিশ বা র‌্যাব পৌঁছানোর আগেই তারা সটকে পড়ছেন। ঢাকাসহ সারা দেশে যেসব আ.লীগের নেতাকর্মী আত্মগোপনে আছেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ হঠাৎ হঠাৎ সুযোগ বুঝে বিভিন্ন জায়গায় দুই-একটি ঝটিকা মিছিল বের করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্জন স্থানে ঝটিকা মিছিল করছে তারা। যেটা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভারতের মোদি সরকার, সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ও ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট গদি মিডিয়া। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্র-জনতা হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আওয়ামী লীগ ও ভারতের নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু থেমে নেই আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের মিত্র ভারত সরকার ও তাদের গদি মিডিয়া অনবরত বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও গুজব সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তারা তিল’কে তাল বানাতে ব্যস্ত থাকে। বাংলাদেশে সংঘ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করছে।
 
অন্যদিকে, ভারতে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু নির্যাতন হলেও নীরব থাকছেন। এর বাইরে ঢাকাসহ সারা দেশে নাশকতার পাঁয়তারার সঙ্গে জড়িত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে তারা ধারাবাহিক নাশকতা করে আসছেন। গত সোমবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার নামে আওয়ামী লীগের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে একটি ভার্চুয়াল সভায় বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ভরদ্বাজ মুখার্জী দলটির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। ভার্চুয়াল সভায় প্রধান অথিতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। গ্রুপটিতে আলোচনায় বিজেপির নেতা কোনো রাখঢাক না রেখেই প্রকাশ্য তাদের সংগঠন আওয়ামীলীগের পক্ষে কথা বলেন। সভার স্ক্রিনশট দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা হচ্ছে যে, বিজেপি এবং আরএসএসের বাংলাদেশ শাখা হলো আওয়ামী লীগ। এটা স্পষ্ট স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।

ঢাকার কড়াইল বস্তি, সাত তালা বস্তি, গুলশান মোশাররফ বাসার বস্তি, লালবাগ, মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, ভাষানটেক, খিলক্ষেত বস্তি, খিলগীঁও তালতলাসহ বেশকিছু বস্তি ও আশপাশের এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছদ্মবেশে অবস্থান করছে। আগে বস্তিতে কিছু ঘর ফাঁকা থাকলেও ৫ আগস্টের পর ঘরগুলো এখন আর ফাঁকা থাকে না। বেশির ভাগ ব্যাচেলর ও কেউ কেউ পরিবার নিয়ে নতুন নতুন মানুষ বস্তিতে বাসাভাড়া করছেন। নতুন এসব বাসিন্দারা দেখতে বস্তিবাসীর মতো মনে না হলেও তারা বস্তির মধ্যেই কর্মসংস্থান ও আশপাশের এলাকায় জীবিকা নির্ভর করছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মাদ তালেবুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে জানান, ঝটিকা মিছিলের নামে রাজধানীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করার জন্য গত এক সপ্তাহে আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। যারাই নগরীর নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। নাশকতায় অংশ নেওয়ায় ভিডিও দেখে অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যারা অপরাধে জড়িত তারা যেখানেই আত্মগোপনে থাকুক না কেনো তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। বস্তিকেন্দ্রিক এলাকায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে। কোনো অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার হঠাৎ করেই প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একাংশ। সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি ‘ঝটিকা মিছিল’ করে আলোচনায় এসেছে তারা। এতে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আওয়ামী লীগের একের পর এক ঝটিকা মিছিলের পর নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, পল্লবী, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, লালবাগসহ অর্ধশত স্পটে মিছিল করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকার বাইরেও অনেক জেলায় মিছিল হয়েছে। মিছিল করতে বেশকিছু কৌশল অবলম্বন করছেন তারা। অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিংবা অপরিচিত দলীয় কর্মীদের রাখা হচ্ছে মিছিলের সম্মুখ সারিতে। আর পরিচিতরা মাস্ক পড়ে কিংবা কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে অংশ নিচ্ছে মিছিলে। বাস, রিকশা, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো হয়ে ঝটিকা মিছিল করেই সটকে পড়ছেন তারা।

গভীর রাতে সুনসান নীরব এলাকা এবং সূর্য উঠার আগে ভোরে বা খুব সকালে হাতেগোনা কয়েকজন মিলে অল্প সময়ের জন্য ব্যানার হাতে ঝটিকা মিছিল করে সটকে পড়ছেন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের ধরতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কঠোর হুঁশিয়ারির পর চাপের মধ্যে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মাঝেও ফাঁক গলে আচমকা ঝটিকা মিছিল রুখতে না পারলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করছেন। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দাদের সাইবার ইউনিটের সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়াদের শনাক্ত করতে। সাইবার ইউনিটের সহায়তায় ঢাকা মহানগর, বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের পদধারী নেতা ও সক্রিয় কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে ডিএমপি জানিয়েছে।

ঢাকার একাধিক বস্তি এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সম্প্রতি ঢাকার বিষফোঁড়া অটোরিকশার চালক এবং ফুটপাতের বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকার বস্তিতে ৫ আগস্টের পর নতুন করে লাখ লাখ বাসিন্দা বসবাস করছেন। বর্তমানে বস্তিতে নতুন কোনো ঘর ফাঁকা নেই। বেশি ভাড়া দিয়ে নতুন বাসিন্দারা ঘর ভাড়া নিচ্ছেন। পুরাতন বা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা বস্তিতে বেকায় পড়েছেন ঘর ভাড়া বৃদ্ধিতে। বস্তির নতুন বাসিন্দারা পুরাতন বাসিন্দাদের সঙ্গে মেলামেশা করেন না। তারা সবসময় আলাদা থাকেন। তাদের চালচলন ও পোশাক দেখে বোঝা যায় না যে, সত্যিকার বস্তিতে বসবাস করার মত্যে মানুষ তারা। সাধারণত ঢাকার বস্তিতে যারা বসবাস করে, তারা বাস্তুচ্যুত বা নিম্ন আয়ের মানুষ।

পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ছদ্মবেশে থাকা অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে ছদ্মবেশে বা আত্মগোপনে থাকা অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আভিযানিক কার্যক্রম চলমান। দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টিকারী বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের পুলিশ আইনের আওতায় নিয়ে আসছে।

গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর সারা দেশে সংঘঠিত সহিংস ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক শূন্যতা এবং পুলিশের দুর্বল মনোবল এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে চায় তারা। ইতিমধ্যে  লাখ লাখ নেতাকর্মী ছদ্মবেশে ঢাকায় ঢুকে পড়েছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরিচয় লুকিয়ে ঢাকার বস্তিতে বসবাস করছেন শেখ হাসিনা আবারও প্রত্যাবর্তন করবেন এই আশায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশে ঢুকলে ঢাকা দখলে লাখ লাখ নেতাকর্মী দরকার শোডাউন বা শক্তির জানান দিতে, এ আশায় তারা ঢাকায় জড়ো হয়েছেন। এর বাইরে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নাজুক ও অস্থিতিশীল করতে রাজধানীজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, রাজধানীর বস্তিগুলো ও এর আশপাশের এলাকায় র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়ন টহল ও নজরদারি বাড়িয়েছে। ঝটিকা মিছিলের নামে যারা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছে তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!