ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

রাজউকের আরবান রেজিলেন্স প্রকল্প

নিষ্ফল ৫৬৮ কোটির প্রকল্প 

মাইনুল হক ভূঁইয়া
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১২:২১ এএম
ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অপরিণামদর্শী পরিকল্পনা এবং খামখেয়ালিপনায় নিষ্ফল হয়ে গেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করা ৫৬৮ কোটি টাকার আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্প। চার বছরব্যাপী প্রকল্পটি ২০১৮ সালে হাতে নেয় সংস্থাটি। আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ হেলালীকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রকল্প পরিচালক হিসেবে। উপ-প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী ওয়াহিদ সাদিক শুভ।

২০২২ সালে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আশায় দিন গুনতে গিয়ে এটি টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সমীক্ষা শেষ হলেও মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেতে স্বতন্ত্র ইউনিট না হওয়ায় বাস্তব প্রয়োগে ব্যর্থ হয় সংস্থাটি। ফলে ৮২ প্রশিক্ষিত জনবল অলস বসে থাকেন।

স্বতন্ত্র ইউনিটের জন্য কেনা ৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি নিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। প্রকল্প পরিচালক এবং উপ-প্রকল্প পরিচালককে রাজউকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ে আসা হলেও বাকি ৮২ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল কাজের আশায় প্রহর গুনতে গুনতে শেষমেশ বাড়ি চলে যান এবং সেখানেই অলস সময় পার করছেন। 

গতকাল বুধবার পর্যন্ত  ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৬০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতিতে রীতিমতো মরিচা ধরতে শুরু করেছে। যন্ত্রপাতির তালিকায় রয়েছে ২০০ কিলো নিউটন ক্ষমতার ট্রাক, মাউন্টেড সিপিটি মেশিন-২টি, ১২ ইঞ্চি কংক্রিট কাটার ক্রেন-১টি, ৪০ টন ক্ষমতার ফর্ক লিফটসহ ২৫ ধরনের দেড় শতাধিক যন্ত্রপাতি।
 
এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে ছোট আকারের কিছু রাজউকের গুলশান কার্যালয়ে এবং ট্রাকসহ বড় আকারের সব পড়ে আছে জোন-৪ এর মহাখালী কার্যারয়ে। এমন তথ্য জানিয়ে উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী ওয়াহিদ সাদিক শুভ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, যন্ত্রপাতিগুলো সংস্থার যান্ত্রিক বিভাগের জিম্মায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সাব্বির বিন এহসান এসবের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। তাহলে ৬০ কোটি টাকা ‘মিসইউজ হলো কি নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিপিডি বলেন, মিসইউজ ঠিক নয়, বলতে পারেন ‘ইউজ’ হয়নি। কিন্তু যন্ত্রপাতিগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত বলতে পারেননি। তিনি বললেন, যান্ত্রিক বিভাগ বলতে পারবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে চার বছর ধরে রাজউক সমীক্ষা চালায়। ঢাকায় সংস্থার নিবন্ধিত ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯ ভবনের মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার হাসপাতাল ও ভবন ধরে সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়।

সমীক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কাঠামোর নকশা ও ভবন নির্মাণ পরীক্ষা করা। ২০২২ সালের ৩০ জুন দীর্ঘ এই সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে। প্রতিবেদনে ভূমিকম্প ও সহনশীল নগর নির্মাণে সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করতে একটি স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট গঠনের সুপারিশ করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ স্ট্রাকচারাল রিস্ক অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইনস্টিটিউট’ (বিএসআরআরআই)।
 
সুপারিশমালায় বলা হয়, ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হবে, ভূমিকম্প ও দুর্যোগ সহনশীল নগর নির্মাণে গবেষণা করা এবং দুর্যোগ-পরবর্তী কার্যক্রমে প্রকৌশল সহায়তা দেওয়া। এর পরিচালনা পর্ষদ হবে ১২ সদস্যের। গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব হবেন পর্ষদের চেয়ারপারসন।

২০২২ সালের ৩০ জুন এসব সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও দীর্ঘ এক বছরেও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো সবুজ সংকেত দেয়নি। কিন্তু এর মধ্যে রাজউক তড়িঘড়ি করে ৮২ জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলার কার্যক্রম হাতে নেয়। কেনা হয় ৬০ কোটি টাকার দেড় শতাধিক যন্ত্রপাতি।

মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত না পেয়ে বিপুল জনবল এবং বিরাট অঙ্কের যন্ত্রপাতি কেন কেনা হলো এমন প্রশ্ন জোরেশোরে সামনে চলে আসে। 

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আব্দুল লতিফ হেলালীকে কয়েকদিন চেষ্টার পর পাওয়া গেলে তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন পূর্তমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রকল্প শেষে স্বতন্ত্র ও স্বউপার্জিত একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সিদ্ধান্তটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

আফশোস করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, এত ভালো একটি কাজ করার পরও বাস্তব প্রয়োগ করতে পারলাম না। 

মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেতের আগে জনবল নিয়োগ এবং যন্ত্রপাতি কেনার উদ্দেশ্য কি ছিল এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি টেলিফোন কেটে দেন। 

এসব যন্ত্রপাতি ও জনবল কাজে লাগানোর ইচ্ছা রয়েছে জানিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে পূর্তসচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা এখন বিদেশি দাতা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তহবিল প্রাপ্তি সাপেক্ষে দ্রুত বিএসআরআরআই গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।