এখনো চালু হয়নি উত্তরের রংপুরের বৃহত্তর শ্যামপুর চিনিকল। ফলে আখচাষি ও এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। চিনিকলটি বন্ধ থাকায় প্রায় তিন বছর থেকে শতাধিক কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ইতিমধ্যে অনেক শ্রমিক তাদের পেশা পরিবর্তন করেছেন। এমতাবস্তায় চিনিকলটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তবে কবে শ্যামপুর চিনিকল চালু হবে সে বিষয়ে সরকারের কাছে জানতে চান সংশ্লিষ্টরা।
রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সালের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনিও কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগেযোগ করা হয়েছে, আশা করছি শীঘ্রই জট খুলবে। এদিকে চিনিকলটি বন্ধ থাকায় প্রায় তিন বছর থেকে শতাধিক কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক শ্রমিক ইতিমধ্যে পেশা পরিবর্তন করেছেন। এ প্রেক্ষাপটে রংপুরের সুশীলসমাজ সরকারের কাছে জানতে চায় কবে চালু হবে শ্যামপুর চিনিকল।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চিনিকলটিতে চলতি অর্থবছরের আখ রোপণের অনুমতি দিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়। ওই অনুমতিতে চিনিকল ঘিরে আশার আলো দেখা দিয়েছিল স্থানীয় মানুষ ও কৃষকদের মাঝে। কিন্তু অনুমতির প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মাঠপর্যায়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
সূত্র জানিয়েছে, বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে তা আটকে আছে। পাঁচ বছর আগে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল, পাবনা সুগার মিল, পঞ্চগড় সুগার মিল, সেতাবগঞ্জ সুগার মিল, রংপুর সুগার মিল ও কুষ্টিয়া সুগার মিলে চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বন্ধ চিনিকল চালু করতে একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করে। সেই অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় অর্থবছরে রংপুরের শ্যামপুর সুগার মিল এলাকায় আখ চাষের অনুমতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলে চিনিকল এলাকায় আখ চাষ করা শুরু হবে। কিন্তু এরপর প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত অর্থ ছাড় হয়নি। এদিকে মাঠ পর্যায়ে আখ চাষেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
জানা যায়, কয়েক দিন পরে আখ রোপণের মৌসুম শুরু হবে। আগে চাষিদের বীজ-সার সরবরাহ করা হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত চাষিরা বীজ-সার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চাষিদের সংগঠিতও করা হয়নি। চিনিকল এলাকায় চাষিদের আখ চাষে উদ্বুদ্ধসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন চিনিকলের ইক্ষু উন্নয়ন সহকারীরা। এখন পর্যন্ত তাদের কাউকে মাঠপর্যায়ে দেখা যায়নি। ফলে চিনিকল চালু করতে পর্যাপ্ত আখ পাওয়া যাবে কি না এ নিয়ে সন্দিহান করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সুজন রংপুর মহানগরের সভাপতি ফখরুল আনাম বেনজু বলেন, সরকারের টালবাহানায় চিনিকলগুলোর বেহাল দশা হয়েছে। এসব চিনিকলের হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দ্রুত এসব চিনিকল চালু করে এলাকার উন্নয়ন করা দরকার।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় শ্যামপুর চিলিকল জনমানবশূন্য ভূতুড়ে অবস্থায় রয়েছে। চিনিকল যন্ত্রপাতি ও যানবাহন পাহারা দেওয়ার জন্য রয়েছে হাতে গোনা কয়েকজন গার্ড এবং দু-একজন কর্মকর্তা। মিলটি যখন চালু ছিল তখন ৬ হাজারের বেশি আখচাষি ছিলেন। চিনিকল চালু রাখতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আখের প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়ে বন্ধ ছয় চিনিকল টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন বলেন, বন্ধ চিনিকল চালু করতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে একটি বাজেট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলে চিনিকল এলাকায় আখ চাষ করা শুরু হবে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও অর্থ ছাড়ের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে আখচাষকে ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে আড়াই হাজার একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পরের বছর ৪ হাজার একরে আখ চাষ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের উপমহাব্যবস্থাপক (অর্থ) ইশতিয়াক হোসেন রাজীব বলেন, প্রায় তিন মাস আগে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া দেয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় দিলেই বন্ধ চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :