শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসান আরিফ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১১:২৮ পিএম

দুর্নীতি কমাতে বরাদ্দ কমছে 

হাসান আরিফ

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১১:২৮ পিএম

দুর্নীতি কমাতে বরাদ্দ কমছে 

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির প্রক্রিয়ায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বড় অঙ্কের বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে কমে গেছে প্রকল্প সাহায্যও। প্রকল্প সাহায্যের গতি কম হওয়ায় সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) ১৯ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত এডিপিতে প্রকল্প সাহায্য ধরা হয়েছিল ১ লাখ কোটি টাকা। সেখান থেকে কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে  নির্ধারণ করা হয়েছে ৮১ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপিতে প্রকল্প সাহায্য ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা। আর  সংশোধিক এডিপিতে তা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই হিসাবেও চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার কমেছে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে এই বরাদ্দ রাখা ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। যা সংশোধন করে করা হয়েছিল ৭৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া চলতি অর্থবছরে মূল এডিপির বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। যা সংশোধন করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে কমানো হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের শতকরা ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধন করে করা হয়েছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, যা সংশোধন করে করা হয় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সহায়তা সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত হচ্ছে- বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ২৪ হাজার ৫৭৭.৭৩ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাত ২০ হাজার ৪৩৭.৭৮ কোটি টাকা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাদি খাত ৫ হাজার ৯৫৮.০৭ কোটি টাকা, শিক্ষা খাত ৫ হাজার ৫৬৩.৬৪ কোটি এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাত ৩ হাজার ৩৫৭.৪৫ কোটি টাকা।

শিক্ষায় বরাদ্দ কমার বিষয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, দেশের শিক্ষা খাতের বেশির ভাগ প্রকল্প দুর্নীতিগ্রস্থ। দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা খাতের অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পেনশনের ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এটা সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনেক প্রকল্পও বন্ধ করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দসহ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। কমানোর পর এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয়ের বরাদ্দসহ সংশোধিত এডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ কমেছে ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৫২ হাজার ১৬২ কোটি টাকা।

জানা গেছে, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার তুমুল গণআন্দোলনের পর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে প্রথম কয়েক মাস উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক স্থবিরতা দেখা যায়। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের অনেকেই আগের আমলের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে গা ঢাকা দেন।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া প্রকল্প তালিকার বেশকিছু প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন প্রকল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংশোধিত এডিপিতে পাঁচ খাতে মোট উন্নয়ন বাজেটের ৬৪ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে আগের মতোই পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, ২২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এরপর ১৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ বরাদ্দ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি।

এছাড়া সংশোধিত এডিপির ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষা খাতে, গৃহায়ন ও কমিউনিটি খাতে ৯ দশমিক ১ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সংশোধিত আরএডিপিতে বরাদ্দ কমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাত। এই তিন খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে মোট ৪৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপিতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, যা ছিল মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। আরএডিপিতে সেখান থেকে ১২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। সেই হিসাবে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, যা আরএডিপিতে মোট বরাদ্দের মাত্র ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ।

অপরদিকে শিক্ষা খাতে চলতি অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, যা ছিল মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। আরএডিপিতে ১১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা বাদ দিয়ে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ রাখা হয়েছে।

বাস্তবায়ন চিত্র : দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি আরও স্থবির হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত গত ৯ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ৩৭ শতাংশেরও কম।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৪২ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে একক মাস হিসেবে মার্চে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৭ শতাংশেরও কম, যা গত অর্থবছরের একই মাসে ছিল ৯ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৯ মাসের ব্যয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা কম।  পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এ বিষয়ে ১৭ এপ্রিলের হালনাগাদ প্রতিবেদন এই তথ্য উঠে আসে।

এতে দেখা যায়, গত ৯ মাসে বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। আগের একই সময়ের চেয়ে ব্যয় কমেছে ২৪ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। একক মাস মার্চে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। এ ব্যয় গত বছরের মার্চে ছিল ২২ হাজার ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের হিসাবে মার্চে উন্নয়ন ব্যয় গত বছরের মার্চের চেয়ে ৬ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা কম।

চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৩২৭টি প্রকল্প, ১৭টি উপপ্রকল্প ও উন্নয়ন সহায়তা থোক হিসেবে ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব প্রকল্পের বিপরীতে মূল এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। তবে বাস্তবায়নে স্থবিরতার কারণে এডিপি সংশোধন করে সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) আকার রেকর্ড পরিমাণ ছোট করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে ব্যয় কমানো হয়েছে ১৮ শতাংশ বা ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এতে আরএডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।
 

Link copied!