শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ স্বাধীন পুলিশ কমিশনের দাবি

শহিদুল ইসলাম রাজী

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৪, ২০২৫, ১১:৩৪ পিএম

পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ স্বাধীন পুলিশ কমিশনের দাবি

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র কমিশনের অধীনে থাকতে চায় পুলিশ। তাদের পক্ষ থেকে ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবসহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়েছে বাহিনীর পক্ষ থেকে। এবারের পুলিশ সপ্তাহে এসব প্রস্তাব ও দাবিদাওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি পুলিশের আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও হঠকারিতা প্রতিরোধের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠন করারও দাবি রয়েছে। এ ছাড়া জনমনে আস্থা ফেরাতে জনবান্ধব পুলিশ হতে লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো, গবেষণা বৃদ্ধি ও ঔপনিবেশিক আইন বাতিলসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পুলিশ। যেগুলো বাস্তবায়ন করা হলে পুলিশ আবারও জনগণের আস্থা ও ভরসার প্রতীক হয়ে উঠবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
 
আগামী ২৯ এপ্রিল রাজধানীর রাজাররাগ পুলিশ লাইনস অডিটোরিয়ামে শুরু হচ্ছে ‘পুলিশ সপ্তাহ’। চলবে ১ মে পর্যন্ত। তিন দিনব্যাপী এই পুলিশ সপ্তাহ ঘিরে বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে জনগণের আস্থা অর্জনে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে পুলিশ বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক উন্নতির প্রতিই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে জনআকাক্সক্ষা পূরণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে বিভিন্ন ইউনিট। পুলিশ সপ্তাহে বিভিন্ন ইউনিটের প্রেজেন্টেশনে নিজ নিজ ইউনিটের চ্যালেঞ্জগুলো উপস্থাপন করা হবে। পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ওঠাবে পুলিশ সদস্যরা। এবারের পুলিশ সপ্তাহে থাকছে না পুলিশ প্যারেড। এ ছাড়া ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রায় অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে দেওয়া হবে বিপিএম-পিপিএম পদক।
  
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশ সপ্তাহে এবার রাষ্ট্রপতি থাকবেন না। থাকছে না প্রধান বিচারপতিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিটিংও। এমনকি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পুলিশ সদস্যরা যাচ্ছেন না। প্রধান উপদেষ্টা রাজারবাগে এসে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন ও পদক বিতরণ করবেন। প্রতি বছর পুলিশ সপ্তাহে সরকারপ্রধানের কাছে কনস্টেবল থেকে শুরু করে আইজিপি পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া উত্থাপন করেন। এবারও তেমন দাবিদাওয়া উত্থাপন করা হবে। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারপ্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। পুলিশ সপ্তাহের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো ধরনের প্যারেড রাখা হয়নি। শিল্ডপ্যারেড প্রতিযোগিতাসহ অন্য প্রতিযোগিতাও নেই। প্রথমবারের মতো এবার পুলিশ সপ্তাহে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের মতবিনিয়ম সভা হবে। সেখানে উঠে আসা মতামত গুরুত্ব পাবে। কেমন পুলিশ দেখতে চানÑ এমন বিষয় ওই সভায় উঠে আসবে। পুলিশ সপ্তাহের শেষ দিন (১ মে) দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে নাগরিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা।

পুলিশের কয়েকজন সদস্য বলছেন, স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, যানবাহন ও আবাসন সংকট সমাধান, নির্দিষ্ট সময়ে ডিউটির বাইরে অতিরিক্ত কাজের জন্য ভাতা এবং থানায় পুলিশের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা, অবসরে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্য অনুযায়ী রেশন পাওয়াসহ বিভিন্ন যৌক্তিক দাবি উত্থাপন করা হবে। বৈষম্য দূর করতে এএসপি পদ থেকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পদ নন-ক্যাডারদের জন্য রাখা, কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদ পর্যন্ত নাজুক আবাসনব্যবস্থা উন্নত করা, ইন্সপেক্টরদের প্রথম শ্রেণির সুফল নিশ্চিত করলে সরকারি অন্য দপ্তরের মতো সরাসরি ষষ্ঠ গ্রেডে বেতনভুক্ত হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি তোলা হবে। এ ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণ, ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানো, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা বৃদ্ধি, ঔপনিবেশিক আইন বাতিল, পুলিশ ইউনিভার্সিটি স্থাপন, এনভায়রনমেন্টাল পুলিশ ইউনিট চালু, সাইবার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন, সেন্টার ফর পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) গঠন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনি পরামর্শক নিয়োগের দাবি তোলা হতে পারে।

পুলিশের যত দাবি: নন-ক্যাডার ২ লাখ ৮ হাজার পুলিশ সদস্যের পক্ষ থেকে পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ সংস্কারের জন্য সাতটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল আইজিপি বরাবর এই প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। প্রস্তাবগুলো হলোÑ পুলিশের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো এখন সময়ের দাবি। পুলিশকে যেহেতু শুক্র-শনিবারসহ সব জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসে ছুটির দিনগুলোতে কর্মে নিযুক্ত থাকতে হয়, তাই পুলিশের বেতনকাঠামো তৈরিতে এসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে অথবা বিকল্প হিসেবে ওভারটাইম ভাতা প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। তা ছাড়া পুলিশের সব সদস্য যেহেতু নিজ কর্তব্যকর্মে ঝুঁকি বহন করে, তাই আইজিপি থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সবার জন্য ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ঝুঁকি ভাতা দেওয়া হয়।

এ ছাড়া পুলিশকে দুদকের মতো স্বায়ত্তশাসিত ‘স্বাধীন পুলিশ কমিশন’-এ রূপান্তর করতে হবে, যা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে সহজেই করা যেতে পারে। এটি সর্বমহলের প্রশংসা পাবে। এতে পুলিশ কেবল নিজ কর্মের জন্য জবাবদিহি করবে, কোনো রাজনৈতিক সরকারের কর্মের জন্য নয়; অন্যান্য দপ্তরের দশম গ্রেডের কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতি যেভাবে পিএসসির মাধ্যমে হয়, তেমনি  পুলিশের এসআই ও সার্জেন্টের নিয়োগ ও পদোন্নতি, নন-ক্যাডার নীতিমালা অনুসরণ করে পিএসসির অধীনে ন্যস্ত করতে হবে এবং পুলিশের এসআই ও কনস্টেবলদের ট্রেনিংকালীন বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে সার্জেন্ট ও এএসপিদের ট্রেনিংকালীন বেতন দেওয়া হয়; সরকারের অন্যান্য দপ্তরের মতো পুলিশের ইন্সপেক্টর নবম গ্রেড থেকে এডিশনাল এসপি ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে সরকারের প্রায় সব দপ্তরেই নবম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে (ক্যাডার/নন-ক্যাডারে) পদোন্নতি দেওয়া হয়।

পুলিশের পদোন্নতি বঞ্চনার অবসানের জন্য এবং অভ্যন্তরীণ বৈষম্য রোধে পুলিশের এসআই ও এডিশনাল এসপিতে বিভাগীয় পদোন্নতি ২/৩ ভাগে উন্নীত করতে হবে এবং সরাসরি নিয়োগ ১/৩ ভাগে নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে এসআই পদে বিভাগীয় পদোন্নতি ১/২ ভাগ এবং এএসপি পদে ১/৩ দেওয়া হচ্ছে বিধায় পুলিশের নন-ক্যাডার প্রায় ২ লাখ ৮ হাজারের মতো বিশালসংখ্যক পুলিশ সদস্য এ কারণে পদোন্নতি বঞ্চনার মধ্যে রয়েছেন; সর্বোপরি পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ, বদলি, পদায়নে আর্থিক দুর্নীতি এবং জনসাধরণকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও হটকারিতা প্রতিরোধের জন্য বিদ্যমান অন্যান্য আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে প্রয়োজনীয় আইনি ক্ষমতা কার্যপদ্ধতিসহ পুলিশ কমিশনের মধ্যে কোনো কমিশন সদস্যকে প্রধান করে এগুলোর অভিযোগ গ্রহণ, অনুসন্ধান ও বিভাগীয় বিচার এবং প্রয়োজনে নিয়মিত মামলার জন্য একটি অভ্যন্তরীণ পুলিশ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে যা থাকছে: আগামী ২৯ এপ্রিল সকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন। দুপুর ১২টায় রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। এই অনুষ্ঠানে ইউনিট-প্রধানেরা ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা জানাবেন প্রধান উপদেষ্টাকে। দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে দরবার শেষ হবে। এরপর বেলা সাড়ে ৩টায় আইজিপি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।

৩০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশ অডিটোরিয়ামে এসবি, সকাল সোয়া ১০টায় সিআইডি, বেলা ১১টায় র‌্যাবের প্রেজেন্টেশন হবে। দুপুর ১২টায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্রসচিবের সম্মেলন হবে। দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই ও এন্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রেজেন্টেশন হবে। সন্ধ্যা ৭টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

১ মে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা পৌনে ১২টা পর্যন্ত এপিবিএন, রেলওয়ে পুলিশ ও নৌ পুলিশের প্রেজেন্টেশন থাকবে। এরই মধ্যে সকাল ১০টায় পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল পরিদর্শন ও বার্ষিক পুনাক সমাবেশ হবে। দুপুর ১২টায় হবে বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিকদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময় সভা। বেলা ৩টায় শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রেজেন্টেশন হবে। বিকেল পৌনে ৪টায় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা, সন্ধ্যা ৭টায় অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তাদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান এবং রাতে ডিনারের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহ।

Link copied!