নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে অসময়ে রাস্তা, ফুটপাত খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। বিশেষ করে যে প্রকল্পের কাজ শীত মৌসুমে শুরু করে সে সময়ই শেষ হওয়ার কথা, সেই কাজ চলছে বৃষ্টির মৌসুমেও।
কবে নাগাদ কাজ দুটি শেষ হবে সঠিক করে বলতে পারছেন না খোদ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
জাইকার অর্থায়নে বৃহৎ প্রকল্প দুটি শেষ হওয়ার মেয়াদ ১৮ মাস বেঁধে দেওয়া হলেও এই মধ্যে ৬ মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে মাত্র শেষ হয়েছে ২০ ভাগ কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী, পথচারী, মার্কেট ব্যবসায়ীসহ যানবাহনচালকেরা। নগরবাসী আশঙ্কা করছেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নারায়ণগঞ্জে দুটি ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ চলছে। এর একটি ডি-টু ২০ কোটি টাকার প্রকল্পে শহরের চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ এবং অপরটি ডি-ওয়ান মাসদাইর তালা ফ্যাক্টরি থেকে শায়েস্তাখান সড়ক হয়ে চাড়ারগোপ শীতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত ১৮০০ মিলিমিটার ব্যাসের পাইপ বসানোর কাজ। এটির নির্মাণ ব্যয়ও ২০ কোটি টাকা। কাজ দুটি ৬ মাস আগে শুরু হলেও নির্মাণকাজের ধীরগতিতে নগরবাসীকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমে পুরো শহরই জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন হবে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর খন্দকার মাকসুদুল আলম খোরশেদ রূপালী বাংলাদেশকে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, কাজ দুটির টেন্ডার (দরপত্র) অনেক আগেই হয়েছে। শুধু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারদের গাফিলতির কারণে ২০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। যে কাজ শীতকালেই শেষ হওয়ার কথা, সেটা বর্ষা মৌসুমেও শেষ হবে না। এতে করে এবার শহরে জলাবদ্ধতার প্রকোপ আরও বাড়বে। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হবে নগরবাসীকে।
সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইপাশে চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত ফুটপাতে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। আগের ড্রেন কেটে কিছুটা প্রশস্ত করা হচ্ছে। তবে ড্রেন খননে উত্তোলিত মাটি, পয়ো-আবর্জনা মূল রাস্তার পাশেই ফেলে রাখা হচ্ছে। যে কারণে রাস্তা সংকোচিত হয়ে পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিঘ্ন ঘটছে যানবাহন চলাচলেও। এতে করে শহরে যানজটের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
চাষাঢ়ার আল-জয়নাল প্লাজা, সান্ত্বনা মার্কেট, মার্ক টাওয়ার, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মার্কেট, নয়ন সুপার মার্কেটজুড়ে একই অবস্থা। কোথাও ড্রেন নির্মাণ হলেও ওপরের স্লাব বসানো হয়নি। এতে মানুষ অনেক সময়ই দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। আবার ড্রেন নির্মাণের উপকরণগুলো মূল রাস্তায় রেখে যানজটের সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফুটপাত কাটাকুটির ফলে পথচারী চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শহরের ডিআইটি মার্কেট এলাকায় ড্রেন নির্মাণকাজ শেষ হলেও উঁচু স্লাব (ঢাকনা) বসানোর ফলে পথচারীরা হোঁচট খেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
অপরদিকে ১৮০০ মিলিমিটার পাইপ বসানোর কাজ আটকে আছে। কবে নাগাদ সেটির কাজ শুরু হবে, সেটিও সঠিক বলতে পারছে না কেউ। শীতলক্ষ্যা থেকে পাইপ বসানোর কাজ সিরাজউদ্দোলা সড়ক হয়ে শায়েস্তাখান সড়কের র্যাব ১১-এর সিপিসি কার্যালয় পর্যন্ত এসে আটকে আছে। ফলে সিরাজউদ্দৌলা ও শায়েস্তা খান সড়ক দুটোতে ভারী যানবাহন চলাচল মুখ থুবড়ে পড়েছে। যে কারণে শহরে যানজট তৈরিতে ডি ওয়ান ও ডি টু প্রকল্প অবদান রাখছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রকল্পস্থলে গেলেও কোনো ঠিকাদারকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, কাজ দুটি তিনজনের একটি ও দুইজনের অপর একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে। এদের মধ্যে মাঈন উদ্দিন, আল আমিন ও জাকিরের নাম জানা গেছে। তবে মার্ক টাওয়ার প্রকল্পস্থলে সাব-কন্ট্রাক্টর হযরত এটারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জুলহাস মিয়াকে পাওয়া গেলে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, কাজ শেষ হতে আরও এক বছর লাগবে। তিনি বলেন, আমরা কাজের অর্ডার পেয়েছি দেরিতে, তাই কাজও শুরু করেছি দেরিতে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহিদুল হক ভূঁইয়া দীপু। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ করছি, ড্রেন ও পাইপ বসানোর কাজ দুটোতে অবহেলা চলছে। আমরা আশঙ্কা করছি এ বছর বর্ষা মৌসুমে নারায়ণগঞ্জ শহর পুরোটাই পানিতে তলিয়ে যাবে ঠিকাদারদের অবহেলার কারণে। বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রশাসকের কাছে যাব এবং দ্রুত সমাধানের পথ চাইব।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পের ফোকাল পারসন মোহাম্মদ ইসমাইল চৌধুরী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ডি ওয়ান প্রকল্পটি বন্ধ এবং ডি টু প্রকল্পের ধীরগতির জন্য নানা বিষয় জড়িত। আমরা পুরোদমে কাজ চালুর চেষ্টা করছি। জনভোগান্তিতে যেন না পড়তে হয় এ জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং করছি। তাদের দ্রুত কাজ শেষ করার তাগাদাও দিচ্ছি।