শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ১০:২৭ পিএম

চোরাচালান ঠেকাতে কঠোর নজরদারি

মেহেদী হাসান খাজা

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ১০:২৭ পিএম

চোরাচালান ঠেকাতে কঠোর নজরদারি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চোরাচালান, মানব পাচার ও লাগেজ চুরির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ছিল দেশের বিমানবন্দরগুলোর নিত্যদিনের ঘটনা। সঙ্গে ছিল প্রতিটি স্তরে চাঁদাবাজি।

অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ছিল বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ওই সময় অনেকেই বিমানবন্দরকে দুর্নীতির স্বর্ণযুগ হিসেবে আখ্যা দেন।

এ ছাড়া বিদেশগামীদের লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত। লাগেজ হারিয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের ভোগান্তি থেকে অনেকটা মুক্তি মিলছে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের যাত্রীদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই যাত্রীরা লাগেজ পেয়ে যান।

আগে লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। তবে বিগত সময়ে বিভিন্ন হয়রানি ও নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু সিন্ডিকেট।

চক্রটির বিরুদ্ধে এসব অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য-প্রমাণ একাধিকবার পেলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কৃর্তপক্ষ।

বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর বিমানবাহিনীর সহযোগিতায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে চোরাচালানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। এর পরেই বেশ কিছু পরিবর্তন আসে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এখনো বিমানবন্দরে অসাধু সিন্ডিকেটের সদস্যরা বহাল রয়েছে। যার কারণে মানব পাচার, লাগেজ চুরি ও দুর্নীতির স্বর্ণযুগের পরিবর্তনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চক্রটি।

আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বিমানবন্দরে যেকোনো চোরাচালান ঠেকাতে কঠোর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এখন আর বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তি নেই। তবে বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর এখনো বহাল। তারা সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করছে। মূলত তারাই বিমানবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। যার কারণে এ সেক্টরের পরিবর্তন অনেকটা চ্যালেঞ্জ।

সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও একাধিক বিদেশগামী যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, বিমানবন্দরে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এখন আর আগের মতো ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। তা ছাড়া মানব পাচার ও লাগেজ চুরির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড একেবারেই কমে গেছে। নেই লাগেজ পেতে অপেক্ষা।

যাত্রীরা জানান, আগে যেমন লাগেজ পেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো, এখন আর সেই ভোগান্তি নেই বললেই চলে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভোগান্তি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে সময়বিশেষ গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ হতো।

এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে ও বিমানবন্দরে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর অল্পসংখ্যক সদস্যকে নিয়োগ দেয় সরকার। তখন থেকেই বিমানবন্দরে কিছুটা শৃঙ্খলা আসতে শুরু করে।

কিন্তু এর ফলে সিভিল এভিয়েশনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।

বিমানবাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিভিল এভিয়েশনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী মানব পাচার এবং স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছিলেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকজন সদস্যকে স্বর্ণ চোরাচালান, মানব পাচার এবং অন্যান্য অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে গ্রেপ্তারও করে। এমন পরিস্থিতিতে বিমানবাহিনীর ওপর ক্ষুব্ধ হতে থাকে চোরাচালান সিন্ডিকেট।

ফলে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করে বিমানবন্দর থেকে বিমানবাহিনীর সদস্যদের সরাতে। তবে সেটা সম্ভব হয়নি। কিছু অসাধু কর্মচারীর এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

একশ্রেণির যাত্রী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য বের করার নানা চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর নজরদারি চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে করে গত কয়েক দিন ধরে অসংখ্য মোবাইল, সিগারেট, আমদানি নিষিদ্ধ ই-সিগারেট ‘ভ্যাপ’সহ বেশ কিছু পণ্য ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, গত জানুয়ারিতে দেশে ভ্যাপ আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। আমদানি নিষিদ্ধ হলেও ই-সিগারেট ‘ভ্যাপ’ আনার চেষ্টা করছে বিদেশফেরত যাত্রীরা। এরপরই বিমানবন্দরে সতর্কতা বাড়ায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গত ৫ মাসে প্রায় ১ লাখের মতো ভ্যাপ জব্দ করা হয়। জব্দকৃত জিনিসের দাম আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা। পাশাপাশি আটক হওয়া অন্যান্য পণ্য জব্দ ও অনেক পণ্যের শুল্ক আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এসব বিষয়ে ঢাকা কাস্টম হাউসের প্রিভেন্টিভ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখার আলম ভূঁইয়া বলেন, বিমানবন্দরে আমরা বাড়তি নজরদারি রাখছি। বিদেশফেরত যাত্রীদের ওপর কড়া নজরদারি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমদানি নিষিদ্ধের পরও আমরা লক্ষ করছি, সম্প্রতি বিদেশফেরত কিছু যাত্রী ভ্যাপ নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তবে আমরা সতর্ক আছি আমদানি নিষিদ্ধ কোনো পণ্যই বিমানবন্দর হয়ে দেশে ঢুকতে পারবে না।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বেশ কিছু দেশ থেকে কিছু যাত্রী নিয়মিত ভ্যাপ আনার চেষ্টা করছেন।

এ ছাড়া কুরিয়ারের মাধ্যমে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি যেহেতু আমদানি নিষিদ্ধ, তাই যাত্রীরা নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। কিন্তু বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে এসব ধরা পড়ছে।

বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সুমন দাশ বলেন, বর্তমানে একশ্রেণির যাত্রীদের শুল্কায়ন ছাড়াই পণ্য বের করে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। লাগেজ রুলসের বাইরেও তারা অধিক ওজনের মালামাল নিয়ে আসছেন।

এ ছাড়া যেগুলো শুল্কায়িত পণ্য, সেগুলোও নিয়ে এসে শুল্ক ছাড়াই বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাস্টমস টিম বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে।

এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন বলেছেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থানে। ভ্যাপ যেহেতু মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, সে জন্য ভ্যাপের ব্যাপারে আমাদের গোয়েন্দা আলাদা নজরদারি রাখছে।

বিমানবন্দরে অবৈধ কোনো চালান এলেই স্ক্যানিংয়ে ধরা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে বিমানবন্দরের পরিবর্তন আসছে।

বিমানবন্দরে চোরাচালানের সিন্ডিকেট ভেঙে যাচ্ছে। যেমন ই-সিগারেট আগে ব্যাপকভাবে দেশের শুল্ক ছাড়াই প্রবেশ করত। কিন্তু এটি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরও বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশফেরত যাত্রীরা ভ্যাপ আনছে দেদার। শুধু ভ্যাপ নয়, শুল্ক ছাড়া যেসব অবৈধ ছোট ছোট চালান আসছে, সেগুলো বিমানবন্দরে স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ছে।

বিমানবন্দরের দীর্ঘদিনের ঘুষ, চোরাচালান বাধাগ্রস্ত: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তারা জানান, বিমানবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে বিমানবন্দরের দীর্ঘদিনের ঘুষ, চোরাচালান রেওয়াজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আগে সামান্য টাকার বিনিময়ে পাসবিহীন লোকদের নির্বিঘ্নে টার্মিনালে প্রবেশ করানো হতো, টাকার বিনিময়ে কালো পাসের পরিবর্তে লাল পাস ব্যবহার করে প্রোটোকল অফিসারদের ব্রিজ এলাকায় পাঠানো কিংবা ডিউটি ছাড়াই অবাধে টার্মিনালে প্রবেশ করে স্বর্ণ চোরাচালান, মানব পাচার এবং প্রোটোকল ব্যবসা এ সবই ছিল একটি সুপরিচিত নিয়ম।

এখন অবৈধ সিন্ডেকেটের সদস্যরা বিমানবাহিনীর সদস্যদের জন্য অপকর্ম করতে পারছে না। তাই তারা নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!