শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

বেসরকারি পাঠাগার 

মন্ত্রী-সচিব কোটা বহালের গুঞ্জন

উৎপল দাশগুপ্ত

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ১১:২৩ পিএম

মন্ত্রী-সচিব কোটা বহালের গুঞ্জন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার নুওয়াখালী ইউনিয়নে বেসরকারি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী-কচি লাইব্রেরি’ একই নামে দুটি পাঠাগারের বিপরীতে প্রতিটির জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ লাখ টাকা অনুদান পেয়েছে। প্রতিটির জন্য পাওয়া ১ লাখ টাকার অর্ধেক নগদ টাকায় এবং বাকি অর্ধেক টাকার বই গ্রন্থকেন্দ্র থেকে পাঠাগার দুটিতে সরবরাহ করা হয়। দুটি পাঠাগারই একজন অতিরিক্ত সচিবের। সাবেক আওয়ামী সরকারের সময় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবের বিশেষ ২০ শতাংশ কোটায় পাঠাগার দুটি এই অনুদান পায়। 

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গ্রন্থকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা পাঠাগার দুটি পরিদর্শন করে দেখতে পেয়েছেন, এর একটি রয়েছে স্কুল ভবনে, আরেকটি রয়েছে বাড়িতে। অথচ গ্রন্থকেন্দ্রের অনুদান বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো স্কুল, এনজিও প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি স্থাপনা বা বাসাবাড়িতে পাঠাগার স্থাপনের বিধান নেই। স্কুল ভবনের যে কক্ষে পাঠাগার দেখানো হয়েছে, তার পুরোটাই খালি। বই রাখার আলমারি, পড়ার টেবিল-চেয়ার সার্বিকভাবে পাঠাগার বলতে যা বোঝায় তার কিছুই নেই। পাঠাগার শুধু নামেই। শুধু এ দুটি পাঠাগারই নয়, মন্ত্রী-সচিবের বিশেষ কোটায় পাঠাগারের নামে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রায় কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ এই কোটায় ওই অর্থবছরে কোনো কোনো পাঠাগার ২ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্তও অনুদান পেয়েছে বলে জানা গেছে।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মন্ত্রী-সচিবের কোটায় পাঠাগারের অনুদান লুটপাট বন্ধে বর্তমান নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। ‘বেসরকারি গ্রন্থাগারে অনুদান বরাদ্দ এবং বই নির্বাচন ও সরবরাহসংক্রান্ত নীতিমালা ২০২০ (সংশোধিত ২০২২)’ সংশোধনে মন্ত্রী-সচিবের কোটা বাতিলের প্রস্তাব ছিল গ্রন্থকেন্দ্রের। তবে বিগত ছয় মাসেও সংশোধিত নীতিমালার প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়নি।

জানা গেছে, নীতিমালার সংশোধনী প্রস্তাব চূড়ান্ত না হলেও আগের নীতিমালাকে সামনে রেখেই পাঠাগার ও বই নির্বাচন এবং অনুদান বরাদ্দের কার্যক্রম চলছে। আগের নীতিমালা অনুযায়ী কার্যক্রম চলায় মন্ত্রী-সচিব কোটা বহাল থাকার সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তবে আগের নীতিমালায় বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ বা শিশুতোষ বই ২০ শতাংশ রাখার যে বাধ্যবাধকতা ছিল, এবার হয়তো সে ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। যেমনÑ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে তথ্যসমৃদ্ধ, বস্তুনিষ্ঠ বই ও শিশুতোষ বই রাখা হবে। তবে শতাংশের বাধ্যবাধকতা না-ও থাকতে পারে। 

নীতিমালার সংশোধন প্রস্তাব চূড়ান্ত না করে কার্যক্রম চললে বেসরকারি পাঠাগারে অনুদান লুটপাট বন্ধের একটি ভালো উদ্যোগ নষ্ট হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অংশীজনেরা।  

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (লাইব্রেরি) আইরীন ফারজানা। রূপালী বাংলাদেশকে তিনি বলেন, আপনি এ বিষয়ে শাখাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলেন। এই কর্মকর্তার পরামর্শমতো যোগাযোগ করা হয় উপসচিব (লাইব্রেরি) মোহা. খালিদ হোসেনের সঙ্গে। নীতিমালা সংশোধনের কাজ চলছে জানালেও মন্ত্রী-সচিবের কোটা বাতিলের বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিষয়টি সিনিয়ররা দেখছেন।  

এ বিষয়ে গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, নীতিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। কবে চূড়ান্ত হবে বলতে পারব না।

জানা গেছে, প্রতি বছর আগস্ট মাসে একাধিক দৈনিক পত্রিকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেসরকারি পাঠাগারগুলোর কাছ থেকে অনুদানের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। সব আবেদন যাচাই-বাছাই করে নভেম্বর মাসের মধ্যে যোগ্য পাঠাগারগুলোর মধ্যে অনুদান বরাদ্দের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। গত ৫ আগস্ট সাবেক আওয়ামী সরকারের পতনের পর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন হয়। নতুন কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নিয়ে অনুদানের নীতিমালা অপব্যবহারের মাধ্যমে লুটপাটের প্রমাণ পেয়ে তা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি পরিবর্তিত পরিস্থতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পাঠাগার, বই নির্বাচন ও অনুদান বরাদ্দের জন্য নিয়মিত কার্যক্রম শুরু করতে অনেক দেরি হয়। পরবর্তীতে নভেম্বরে পাঠাগারগুলোর কাছ থেকে অনুদানের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়। বর্তমানে আবেদন করা পাঠাগার নির্বাচন ও বইয়ের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। 

অন্যদিকে নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব তৈরি করে গত বছরের ১২ নভেম্বর মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় গ্রন্থকেন্দ্র। ২৩ ডিসেম্বর তৎকালীন সংস্কৃতি সচিবের সভাপতিত্বে প্রস্তাব নিয়ে প্রথম সভা হয়। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রথম সভার খসড়া রেজল্যুশনে উল্লেখিত বিষয়গুলোর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে একই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কমিটির কাছে পাঠানোর জন্য বলা হয় গ্রন্থকেন্দ্রকে। নির্দেশ অনুযায়ী গ্রন্থকেন্দ্র তা সম্পূর্ণ করে আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর মার্চ মাসের শুরুতে সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে মন্ত্রণালয়ে আবার সভা হয়। কিন্তু সভার চূড়ান্ত রেজল্যুশন এখনো পায়নি গ্রন্থকেন্দ্র। এর ফলে পাঠাগার ও বই নির্বাচনের জন্য সার্বিক কার্যক্রম এলোমেলো হয়ে পড়েছে। 
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। মন্ত্রী-সচিবের বিশেষ কোটায় ২০ শতাংশ বরাদ্দ বহাল থাকলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকার বরাদ্দ আগের মতো লুটপাট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

সারা দেশে জাতীয় গ্রন্থাগার অধিদপ্তর ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের তালিকাভুক্ত বেসরকারি পাঠাগারের সংখ্যা কমবেশি দেড় হাজারের মতো। এর মধ্যে গণগ্রন্থাগার পরিচালিত পাঠাগার রয়েছে ৯০০ এবং গ্রন্থকেন্দ্র পরিচালিত পাঠাগার রয়েছে ৬০০। তবে সব পাঠাগারকেই গ্রন্থকেন্দ্রের মাধ্যমেই অনুদান নিতে হয়। 

গত অর্থবছরে বেসরকারি পাঠাগারের জন্য অনুদান খাতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা। ওই বছর সারা দেশের ৯২৩টি পাঠাগার অনুদান পায়। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এবারও প্রায় ৮০০ পাঠাগার অনুদান পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অনুদান হিসেবে পাওয়া মোট টাকার ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে নগদ অর্থে। আর ৫০ শতাংশ অর্থে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র বই কিনে পাঠাগারে সরবরাহ করবে। নীতিমালা অনুযায়ী তালিকাভুক্ত বেসরকারি পাঠাগারগুলো সাধারণ ক, খ ও গÑ এই তিন শ্রেণির হয়। ক শ্রেণির পাঠাগার পায় ৬৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ, ৩৩ হাজার টাকা নগদ অর্থে এবং বাকি ৩৩ হাজার টাকার বই পাবে। খ শ্রেণির জন্য বরাদ্দ ৫৫ হাজার টাকা এবং গ শ্রেণির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪৭ হাজার টাকা। নীতিমালা অনুসারে বার্ষিক মোট বরাদ্দকৃত অর্থের ২০ শতাংশ বিশেষ কোটায় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা পাঠাগারগুলোর উন্নয়নে প্রতি বছর নগদ অনুদান ও বই প্রদানসহ আনুষঙ্গিক সহায়তা প্রদান করছে। এর মাধ্যমে আলোকিত সমাজ গঠনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র।
 

Link copied!