ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স ফি পুনর্নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। এতে অ্যাম্বুলেন্স ফি দ্বিগুণ হতে যাচ্ছে। এতে রোগীর পরিবহন খরচ বাড়বে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে নন-এসি অ্যাম্বুলেন্স ফি দেশের সব মেট্রোপলিটন শহর এলাকাসহ সব পৌর এলাকায় ১ মাইল/১ কিলোমিটার হতে ৫ মাইল/৮ কিলোমিটার পর্যন্ত ১০০ টাকা। সরকার তা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে, যা দেশের সব এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে। বর্তমানে ৫ মাইলের ঊর্ধ্ব হইতে ১০ মাইল অথবা ৮ কিলোমিটার হইতে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৫০ টাকা, যা বেড়ে হবে ৫০০ টাকা। ১৬ কিলোমিটারের ওপরে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১৫ টাকা হারে দিতে হবে। এ ছাড়া রোগী পরিবহন অপরিহার্য হলে প্রতি ঘণ্টা বা তার অংশের জন্য ওয়েটিং ফি ৫০ টাকা হারে দিতে হবে।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী দূরবর্তী/আন্তঃজেলা কবার ক্ষেত্রে প্রতি মাইল ১৫ টাকা ও প্রতি কিলোমিটার ৯ টাকা নির্ধারণ করা আছে।
এদিকে বর্তমান অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের আওতায় এসি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস না থাকলেও নতুন সার্ভিসে এসি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যুক্ত করা হয়েছে। দেশের সব এলাকার জন্য প্রথম ৮ কিলোমিটারের জন্য ৫০০ টাকা। ৮ কিলোমিটারের ওপর থেকে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ১০০০ টাকা। ১৬ কিলোমিটারের ওপরে প্রতি কিলোমিটারের জন্য ২০ টাকা হারে দিতে হবে। এছাড়া রোগী পরিবহন অপরিহার্য হলে প্রতি ঘণ্টা বা তার অংশের জন্য ওয়েটিং ফি ৫০ টাকা হারে দিতে হবে।
এ ছাড়া এসি ও নন-এসি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের আওতায় অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হলে ৬০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। আর দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য নন-এসি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ফ্রি দেওয়া হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের আওতায় লাশ ও কলেরা আক্রান্ত রোগী বহন করা হবে না।
এদিকে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আসা যেসব রোগী অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নেন, সিন্ডিকেটের কারণে স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে তাদের দ্বিগুণ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে এসে যারা এরই মধ্যে বেশ কিছু অর্থ ব্যয় করে ফেলেছেন বা করতে হবে, এটা তাদের ওপর বাড়তি চাপ।
অ্যাম্বুলেন্স মালিক, চালক ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সদস্যরা প্রতিটি সরকারি হাসপাতালেই সিন্ডিকেট গঠন করে রোগীদের ‘জিম্মি’ করে রেখেছেন। ওই সিন্ডিকেট অন্য জেলার কোনো অ্যাম্বুলেন্সচালককে রোগী নিতে দেয় না। ফলে রোগীদের নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে খালি ফিরতে হয়। সেজন্যই তারা প্রথম ট্রিপ ধরার সময় যাওয়া-আসার ভাড়া ধরে দ্বিগুণ অর্থ নেয়।
সংশ্লিষ্ট জেলার বাইরের কোনো অ্যাম্বুলেন্স যদি রোগীকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যেতে চায়, সে ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটকে ভাড়ার অর্ধেক অর্থ দিয়ে দিতে হয়।
জানতে চাইলে একজন চালক বলেন, সিন্ডিকেট সদস্যদের টাকা না দিলে আমাকে ঢামেক হাসপাতাল থেকে কোনো রোগী নিতে দেওয়া হবে না। হাসপাতাল এলাকা থেকে কোনো অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে চাইলে সিন্ডিকেট সদস্যদের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। তারা কমিশন হিসেবে ভাড়ার অর্ধেক টাকা রাখবে এবং সে কারণেই আমাকে প্রকৃত ভাড়ার দ্বিগুণ নিতে হবে।
অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের দুটি সমিতি রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি। দুটির মধ্যে সদস্যসংখ্যার দিক থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতি বড়।
দুটি সংগঠনই সারা দেশের সব অ্যাম্বুলেন্সকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং বিভিন্ন জেলায় তাদের সিন্ডিকেটও সেই জেলা ছাড়া অন্যান্য জেলার অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে রোগী নিয়ে যেতে দেয় না। আর তাদের প্যাঁচে পড়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না বা সরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালকেরা অন্য সুবিধা নিয়ে আড়ালে থাকেন। বিপরীতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বিষয়ে অধিকাংশেরই ধারণা নেই। ফলে এই সার্ভিস আড়ালেই থেকে যায়।
আপনার মতামত লিখুন :