ঢাকা রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ধীরগতির বিচারে নিহতদের পরিবারে ক্ষোভ-হতাশা 

দিলীপ কুমার মণ্ডল, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ১১:৫০ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

আজ ২৭ এপ্রিল। নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ১১ বছর। নির্মম ও চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও রায় কার্যকর না হওয়ায় নিহত পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে। হত্যাকাণ্ডের মাত্র ৩৩ মাসের মাথায় জেলা জজ আদালতে রায় ঘোষণা এবং ১৯ মাসে হাইকোর্টে রায় হলেও আপিল বিভাগে সাড়ে সাত বছরেও এর নিষ্পত্তি হয়নি। আপিল বিভাগে শুনানির জন্য মামলাটি এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল রেখে অবিলম্বে সেই রায় কার্যকর করার দাবি নিহতদের স্বজনদের।

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বজনদের হারিয়েছি ১১ বছর পার হয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট খুনিদের ফাঁসি দেয়নি। বিচার বিভাগ ও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে আমাদের একটাই দাবি, অন্তত আমাদের সাতটা পরিবারের কথা চিন্তা করে বিচার কার্যক্রম শেষ করা হোক। আমি আইন উপদেষ্টার প্রতি আবেদন করছি যে আমরা সাতটা পরিবার কর্তাহারা হয়েছি। আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্টের বিচার কার্যক্রম শেষ করে দ্রুত মামলাটা নিষ্পত্তি করা হোক। আমরা এইটুকু দেখে যেতে চাই।’

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামছুন নাহার নুপুর রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার স্বামীকে হত্যার সময় আমার মেয়ে গর্ভে ছিল। এখন আমার মেয়ের বয়স ১১। অথচ এখন পর্যন্ত  আমার মেয়ে তার বাবা হত্যার বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করছি যে অন্তত আমাদের এই হত্যার বিচারটা শেষ করে দেওয়া হোক। আমরা অসহায়।’ নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আপিল আদালত যেন এ রায় বহাল রাখেন।’ রায় দ্রুত কার্যকর হলে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে এমনটাই প্রত্যাশা তার। 

নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে দেওয়া রায় সন্তোষজনক হয়েছে।’ আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকবে প্রত্যাশা করে তা দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তিনি।  বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘মামলাটি লিভ টু আপিলে শুনানির জন্য থাকলেও এখনো তালিকায় ওঠেনি। এতে করে আমাদেরসহ ভুক্তভোগী পরিবার ও সারা দেশের মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত লিভ টু আপিলের শুনানিক্রমে দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।’ তবে আশার বাণী শুনিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ মামলায় সরকার খুবই আন্তরিক এবং দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।’

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহরণ করা হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার তার ড্রাইভার ইব্রাহিম, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম লিটন এবং মনিরুজ্জামান স্বপনের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর আলমকে। ৩০ এপ্রিল বন্দরে শীতলক্ষ্যা নদীর তীর থেকে ভেসে ওঠে তাদের পেট কাটা, ইট বাঁধা মরদেহ। চাঞ্চল্যকর এই সাত খুনের সঙ্গে র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ একাধিক সদস্যের জড়িত থাকার ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় হয়।

এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় দুটি মামলার বাদী হন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি এবং আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়েজামাই বিজয় কুমার পাল। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব ১১-এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ, অপর দুই কর্মকর্তা মেজর আরিফ, ল্যাফটেন্যান্ট কমান্ডার রানাসহ ২৬ জনের মৃতুদণ্ডাদেশ দেন। ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট ১৫ আসামির মৃতুদণ্ড বহাল রেখে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের পর আসামিরা আপিল করলেও তা এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।