মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রুবেল রহমান

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

জোট ছেড়ে এবার একাই ভোটে লড়বে বিএনপি

রুবেল রহমান

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

জোট ছেড়ে এবার একাই ভোটে লড়বে বিএনপি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভোটের আগে বাড়ে জোটের কদর। দেশের রাজনীতিতে দলের চেয়ে জোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বারবার। জাতীয় নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করলে এই চিত্রই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ১৯৯১ সাল থেকে হওয়া সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে জোটের প্রভাব বেশি দেখা গেছে। এ কারণে দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল জোটকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। পঞ্চম থেকে দশম সংসদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, জোটের রাজনীতিই ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করেছে। ওই সময় জাতীয় পার্টি ও জামায়াত প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। একই সঙ্গে সংসদেও নিজেদের অবস্থান পোক্ত করেছিল দল দুটি। পুরোনো ধাঁচের সেই রাজনীতি থেকে এখনো বের হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি। সেই হিসেবে বলা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির জন্য বড় ফ্যাক্টর হতে পারে জামায়াত ও এনসিপি। ছোট রাজনৈতিক দলগুলো এই সুযোগে তাদের গুরুত্ব বাড়িয়ে প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টায় ব্যস্ত।  

এমন প্রেক্ষাপটে ভোটকে কেন্দ্র করে আনকোরা-নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন নয়। খুব স্বাভাবিক এই ঘটনা এবার যেন নতুন মাত্রায় যাচ্ছে। এবার স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে সবচেয়ে ব্যাপক, প্রাণক্ষয়ী ও রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন যে রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, সেখানেও নির্বাচন সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সব দল।

নির্বাচন ঠিক কবে হবে, সে ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো রোডম্যাপ না দিলেও নানা মেরূকরণ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। বিএনপি-জামায়াতের মতো পুরোনো দলের পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির সংগঠকদের নিয়ে গঠিত নতুন দল এনসিপিও ছোট ছোট দলগুলোকে নিয়ে আলাদা বলয় তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর গত সাড়ে আট মাসে এনসিপিসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যুক্ত হওয়া মোট দলের সংখ্যা ২৭টি। যার সঙ্গে আছে আরও চারটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। সেই হিসাবে প্রতি মাসে গড়ে তিনটির বেশি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছে এ সময়কালে। ২৬ এপ্রিল এই তালিকায় যুক্ত হওয়া সর্বশেষ রাজনৈতিক দলটি হচ্ছে ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’। যার নেতৃত্বে আছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা সাংবাদিক শওকত মাহমুদ। কেউ কেউ বলছেন, বহিষ্কৃৃত খুচরো নেতাদের নিয়ে গঠিত হলো জনতার পার্টি। যদিও দলের আত্মপ্রকাশের পর কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি এখনো। 

জুলাই অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা সংগঠকদের মধ্যেও রয়েছে তুমুল নেতৃত্বের লড়াই। হয়েছে পাল্টাপাল্টি কমিটি। আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে কেউ কেউ বহিষ্কারও হচ্ছে। কেউ বা পদত্যাগ করেছেন অভিমান নিয়েই। ছাত্রদের কটি দলের আত্মপ্রকাশ হলো তার সঠিক হিসাব না থাকলেও এনসিপি শুরু থেকেই আলোচনায়। বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত বক্তব্য আর হুমকি-ধমকিতে বেশ আলোচনায় তারা। সবশেষ স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের আর্থিক কেলেংকারির বিষয় সামনে আসায় আবারও লজ্জার সাগরে ভাসে এনসিপি। 

প্রায় প্রতিদিনই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠক করছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে। এই যেমন গতকাল সোমবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছে ন্যাপ ভাসানী, আ-আম জনতা পার্টি ও পিপলস পার্টির সঙ্গে। গত বোরবার বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বিজেপির সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। ধারাবাহিক এসব বৈঠক চলমান থাকলেও আগামী নির্বাচন বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে করবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলে জোট করার বিষয়ে আলোচনা থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখনো আসেনি। বিএনপির লক্ষ্য এখন নির্বাচন আদায় করা। দলটির নেতারা মনে করেন, নির্বাচিত সরকারই একমাত্র সমাধান। 

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, জোটের আগে ঠিক হতে হবে ভোট কবে। কবে ভোট হবে সেটিই কিন্তু আমরা কেউ জানি না। দেশের মানুষ ভোট দিতে পারে না দেড় দশক ধরে। মানুষ ভোট দিতে চায়। মানুষ কি চায় সেটি বুঝতে পারেনি বা বুঝতে চায়নি বলেই আওয়ামী লীগের মতো এত বড় একটি দল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমলা ও প্রশাসনের সর্বশক্তি দিয়েও টিকে থাকতে পারেনি তারা। পালিয়ে যেতে হয়েছে। সরকারের একাধিক উপদেষ্টা তাদের মেয়াদ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত রোববার আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন, মানুষ বলছে অন্তর্বর্তী সরকার ভালো সমাধান। তার অর্থ কী? কী বোঝাতে চেয়েছেন তিনি? তিনিও কি বেশিদিন থাকার পক্ষে? 

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম রূপালী বংলাদেশকে বলেন, জোট করে নির্বাচনে যাওয়া কিংবা দর-কষাকষির সময় আসলে এখনো আসেনি। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। নির্বাচনে জোট করলে তাদের সঙ্গেই করব। এখনো বলা যাচ্ছে ভোট কবে হবে। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ হলে জোটের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলেই আমি মনে করি। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখে। তবে যারা দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, তাদের মূল্যায়ন করার চিন্তা আছে। জোট হবে নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে বিএনপি, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। ঠিক হলে আপনারা জেনে যাবেন। তবে জোট হলে সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত বিএনপি। তবে কেন প্রায় দিনই লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক হচ্ছে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা মনে করছি নির্বাচন পেছানোর জন্য একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। তারাও কি সেটা মনে করছে কি না সেই বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। নির্বাচনের যেহেতু স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দলগুলো, তাই তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি কীভাবে একটি সুন্দর নির্বাচন হবে, কীভাবে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে পারি, সেই বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, এর বাইরে কিছু না। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, একেকটি আসনে বিএনপির প্রার্থী আছে কয়েকজন। কোনো কোনো আসনে দশজন প্রার্থী আছে। আমাদের জোটের প্রয়োজন হবে কি না সেটা ঠিক করবে দল। তবে এখন জোট করার কোনো পরিকল্পনা নেই। আর স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচিত হলে জাতীয় সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। জোট হোক বা না হোক, যারা এত বছর আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে আমাদের ছেড়ে যায়নি, তাদের মূল্যায়ন করা হবে। 

Link copied!