বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ০৫:১১ এএম

সিলেটে বাড়ছে বিচ্ছেদ, এগিয়ে মেয়েরা

আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ০৫:১১ এএম

সিলেটে বাড়ছে বিচ্ছেদ, এগিয়ে মেয়েরা

প্রতীকী ছবি

বিবাহ বিচ্ছেদ বাড়ছে সিলেটে। মনোমালিন্য কিংবা অল্পতে বনিবনা না হওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনায় অনেকেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বিচ্ছেদের। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এ প্রক্রিয়ায় পুরুষের তুলনায় মেয়েদের উদ্যোগ উল্লেখযোগ্য হারে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়া ও মোবাইল ফোনের অপব্যবহার, অনলাইনে সম্পর্কের জটিলতা অনেক সময় দাম্পত্য কলহের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক ছাদে না থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন দ্রুত।

শিক্ষা, আর্থিক স্বাবলম্বিতা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিই এর প্রধান কারণ। তবে বেশির ভাগ সময় মা-বাবারা এক্ষেত্রে ভাবছেন না সন্তানের কথা। ফলে বাবা-মায়ের দ্বন্দ্বে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে সন্তানের ভবিষ্যৎ। এ নিয়ে সিলেটে সামাজিক ও ব্যক্তিমানসে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং সিটি করপোরেশন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে প্রতি ১০ হাজার দম্পতির মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ছিল ১৮ জন। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ জনে। ২০২৪ সালে প্রতি ১০ হাজার দম্পতির মধ্যে ৭২ জনের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ২০৭টি, ২০২১ সালে ২৮৯টি, ২০২২ সালে ৩৯৬টি, ২০২৩ সালে ৩৫৬টি, ২০২৪ সালে ৩০৫টি এবং ২০২৫ সালের প্রথম ৩ মাসে মোট ১৬টি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ আবেদন করেছেন নারী। শুধু সিলেট মহানগরী নয়, বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ অন্যান্য উপজেলায়ও একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেজওয়ানা হাবীব বলেন, ‘নারীরা এখন নিজেদের পরিচয়, সম্মান ও সুখকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। সমাজে নারীর ভূমিকা পরিবর্তিত হওয়ায় আগের মতো অনাকাক্সিক্ষত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রবণতা কমে এসেছে। নারীরা এখন মানসিক চাপের চেয়ে ব্যক্তিগত শান্তিকে বেশি মূল্যায়ন করছেন। তারা বুঝে গেছেন, সম্মানহীন দাম্পত্য জীবনের চেয়ে একা থাকা শ্রেয়।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি স্থিতিশীল পরিবার শিশুর আত্মবিশ্বাস, আবেগীয় নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক আচরণ গঠনের জন্য অপরিহার্য। বিচ্ছেদের পরে সন্তানদের মানসিক সহায়তা দেওয়া না হলে তা দীর্ঘমেয়াদে বিষণ্নতা, আঘাতজনিত স্ট্রেস বা আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।’

বিশ্লেষকদের মতে, বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: নারীদের মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের মধ্যে আত্মনির্ভরতার প্রবণতা বেড়েছে, যার ফলে তারা সহনশীলতার চেয়ে বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছেন। পারিবারিক সহিংসতা ও মানসিক নির্যাতন, আর্থিক নির্ভরশীলতা কমে যাওয়া, সমতা ও সম্মানের অভাব, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারজনিত দূরত্ব তৈরি সর্বোপরি পারস্পরিক বোঝাপড়ার ঘাটতি।

সমাজতত্ত্ববিদ ড. তাহমিনা ফেরদৌসী বলেন, ‘মেয়েরা এখন আর আগের মতো নীরবতা বেছে নিচ্ছেন না। আত্মসম্মান ও ব্যক্তিগত সুখের জন্য তারা সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছেন। তবে সমাজে এই পরিবর্তন মেনে নিতে এখনো অনেক সময় লাগবে।’

বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়লেও, এটি নারীদের আত্মমর্যাদার প্রতিফলন হিসেবেই দেখা উচিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একই সাথে, সমাজকে আরও বেশি সহনশীল, সমঝোতামূলক এবং সমানাধিকারের ভিত্তিতে এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা শ্যামল রঞ্জন দেব বলেন, ‘বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানেরা। বাংলাদেশের পারিবারিক আইন অনুযায়ী সন্তানের সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করাই বিচ্ছেদের সময় আদালতের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। সন্তানদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে অভিভাবকদের মধ্যে সমঝোতা, সহমর্মিতা এবং আইনি সহায়তার সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সুস্থ মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যৎ গঠনে এটি অপরিহার্য। তবুও অনেক সময় দেখা যায়, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে শিশুর ভবিষ্যৎকে বলি দেওয়া হয়।’

নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার বাসিন্দা মিঠু চৌধুরী বলেন, বিবাহ বিচ্ছেদ আজকাল একটি সামাজিক বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এর সামাজিক ও পারিবারিক পরিণতি বিশেষ করে সন্তানদের ওপর অত্যন্ত গভীর। আমাদের সমাজে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়ার অন্যতম কারণ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার অভাব।

তিনি বলেন, সন্তানরা বিবাহ বিচ্ছেদের অনির্বাচিত ভুক্তভোগী। তারা পরিবার হারায়, নিরাপত্তাবোধ হারায়, মানসিক ভারসাম্য হারায়। বাবা-মা যেমন বিচ্ছেদ চাইতে পারেন, তেমনি সন্তানের কল্যাণের জন্য একটি দায়িত্বশীল অভিভাবকত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

বালাগঞ্জ উপজেলার নশিওরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি প্রমথেশ দত্ত বলেন, বিদ্যালয়ে আমরা প্রায়ই দেখি, যেসব ছাত্রছাত্রীর পরিবারে টানাপোড়েন রয়েছে, তারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে, ক্লাসে মনোযোগ কমে যায়। শিক্ষক হিসেবে আমাদের বাড়তি সহানুভূতি এবং মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

নগরীর চৌকিদেখি এলাকার বাসিন্দা মাওলানা সাব্বির আহমদ বলেন, ইসলামে বা অন্য ধর্মেও বিবাহ বিচ্ছেদকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কিন্তু অনুমোদিত রাখা হয়েছে পরিস্থিতি বিবেচনায়। তবে যেহেতু শিশু একটি পবিত্র আমানত, তাই তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করা ঈমানদারিত্বের পরিপন্থি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে শিশুরা প্রায়ই অনুভব করে যে, তাদের পরিবার ভেঙে গেছে, যা তাদের নিরাপত্তাবোধে আঘাত হানে। অনেক সময় শিশুরা নিজেরাই দোষ অনুভব করে ভাবে যদি তারা ‘ভালো সন্তান’ হতো, তাহলে বাবা-মার বিচ্ছেদ হতো না।

ভবিষ্যৎ সম্পর্ক ও পরিবার নিয়ে আতঙ্ক বা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। লেখাপড়ায় মনোযোগ কমে যায়। অনেক সময় সহপাঠীদের সাথে ঝগড়া বা হিংসাত্মক আচরণ করে। কিছু শিশু আত্মমুখী হয়ে পড়ে, আবার কেউ কেউ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। অভিভাবকের বিচ্ছেদের ফলে আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়, যা সন্তানের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয় এবং শিশুর মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!