পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যকার উদ্ভূত পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে পরিস্থিতির ‘দায়িত্বশীল সমাধানের’ জন্য কাজ করতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। কাশ্মীরে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের সাম্প্রতিক হামলার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল সোমবার পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
এদিকে জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত চরমে পৌঁছেছে এবং এ উত্তেজনা সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ উত্তেজনা নিরসনসহ সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। তবে ভারত এখন সংঘাত এড়াতে নয় বরং পাকিস্তানে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে এমনটাই জানিয়েছে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। গত রোববার প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীরে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পাশাপাশি দিল্লিতে অবস্থিত শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে। তবে ভারতের এ প্রচেষ্টা মূলত আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইতে নয়, বরং (পাকিস্তানে) সামরিক অভিযানের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চারজন কূটনৈতিক কর্মকর্তা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার এক ভাষণে মোদি সরাসরি পাকিস্তানের নাম না নিলেও ‘সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো ধ্বংস করার’ এবং ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অন্যদিকে, টানা চতুর্থদিনের মতো কাশ্মীর সীমান্তে গোলাগুলি করেছে ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষীরা। এমন পরিস্থিতিতে চীন ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেছে পাকিস্তান। এমন অবস্থায় পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে চীন। এদিকে বিবিসিকে সতর্ক করা ছাড়াও ডনসহ পাকিস্তানের ১৬টি ইউটিউব চ্যানেল ব্লক করে দিয়েছে ভারত। সিন্ধু পানিচুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিতের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ রোববার পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সভাপতি নওয়াজ শরিফকে অবহিত করেছেন।
অন্যদিকে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশজুড়ে একাধিক সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিয়মিত প্রস্তুতিমূলক মহড়া বলে জানিয়েছেন একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। স্থানীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তা গতকাল সোমবার রয়টার্সকে বলেছেন, জঙ্গিদের খোঁজে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে প্রায় ১ হাজার বাড়িতে ও বনে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রায় ৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্তত ৯টি বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতারা ভারত সরকারকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অভিযানে সেখানকার নিরপরাধ ব্যক্তিদের যেন ক্ষতি না হয়। ভারত তার নৌবাহিনীর জন্য প্রায় ৬৩ হাজার কোটি রুপি মূল্যের ২৬টি রাফায়েল-এম যুদ্ধবিমান কেনার জন্য ফ্রান্সের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। গতকাল ফরাসি অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানি ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ভারত। খবর দ্য হিন্দুস্থান টাইমস। ভারত তার বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্তে মোতায়েনের জন্য রাফায়েল যুদ্ধবিমানের নৌভার্সন কেনার জন্য এ চুক্তি করল। এর আগে ভারত বিমানবাহিনীর জন্য ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ক্রয় করেছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নিরাপত্তাসংক্রান্ত ক্যাবিনেট কমিটি (সিসিএস) এ চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের আশঙ্কা ঘিরে পাকিস্তানকে সরাসরি অস্ত্র জোগান দিচ্ছে তুরস্ক। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে অস্ত্রশস্ত্রবাহী অন্তত সাতটি সামরিক বিমান তুরস্ক থেকে পাকিস্তানে পৌঁছেছে। ২৮ এপ্রিল এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে প্রভাবশালী ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২৭ এপ্রিল তুরস্কের বিমান বাহিনীর একটি হারকিউলিস-ওয়ানহান্ড্রেড-থার্টি কার্গোবিমান করাচিতে অবতরণ করেছে। এতে নানা রকম সামরিক সরঞ্জাম ছিল। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, দিন দিন পাকিস্তানের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব বাড়াচ্ছে চীন। পরিসংখ্যান মতে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে প্রায় ৪০টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে বেইজিং। এর মধ্যে এককভাবে ৮২ শতাংশেরও বেশি অস্ত্রের ক্রেতা পাকিস্তান। এদিকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ হলে পাকিস্তানের পক্ষে লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছে খালিস্তানপন্থি শিখরা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) পেহেলগামে হামলা নিয়ে প্রকাশিত বিবৃতিতে শক্ত ভাষা ব্যবহৃত না হওয়ায় ভারতের পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সক্রিয় কূটনীতি এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গতকাল এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য নিউজ ডট কম। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর আগে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার সময় ভারত যে ধরনের কঠোর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছিল, এবার তা ব্যবহার করা হয়নি।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সম্মিলিত পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। গত শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে পেজেশকিয়ান ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাওয়ে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানান। গত রোববার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে তাসনিম নিউজ।
যুদ্ধ যুদ্ধ আবহে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি তুলতে উদ্যোগী হচ্ছে ভারতের বিরোধী মহল। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসসহ অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছেন। দুই-তিন দিনের মধ্যে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিতে পারেন বিরোধী নেতারা। বিরোধী নেতারা ওই দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে চিঠি দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। কংগ্রেস একটা চিঠির খসড়া তৈরি করেছে। সেই খসড়া নিয়ে অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এদিকে পতাকা বৈঠকের পরও মুক্তি মিলছে না পাকিস্তানি রেঞ্জারদের হাতে আটক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্য পুর্নম সাহুর। ঘটনার পর তিনবার পতাকা বৈঠক হলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে পেহেলগামকাণ্ডের জেরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যখন উত্তেজনা চরমে, তখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে আটক হন বিএসএফ সদস্য পুর্নম সাহু। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার রিষড়া পৌরসভার ১৩ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। পুর্নম পাঠানকোটের ফিরোজপুর বর্ডারে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি চব্বিশ ব্যাটেলিয়ানের বিএসএফ কনস্টেবল।
আপনার মতামত লিখুন :