ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

আওয়ামী লীগ নেতারা অস্ত্র ফেরত চান

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৫, ১১:০৯ এএম
ফাইল ছবি

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন সুলতান মাহমুদ পিন্টু। ২০১৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। আগেই তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে। নতুন করে তাঁর বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা হয়েছে। পলাতক থাকা অবস্থায় নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার ও বন্দুক ফেরত পেতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন সাবেক এই কাউন্সিলর।

মহানগর শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লবও এলাকাছাড়া। তাঁর বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হয়েছে। কেসিসির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মাদক বিক্রেতাদের প্রশ্রয়সহ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনিও জমা দেওয়া বন্দুক ফেরত পেতে আবেদন করেছেন। 

শুধু পিন্টু বা বিপ্লবই নন; আত্মগোপনে থাকা বিতর্কিত ব্যক্তি, কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই লাইসেন্স করা অস্ত্র ফেরত পেতে আবেদন করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে গত আগস্ট মাসে তারা এসব অস্ত্র থানায় জমা দিয়েছিলেন।

নাগরিক নেতারা বলছেন, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী খুলনার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বিতর্কিত ব্যক্তিরা অস্ত্র ফেরত পেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সতর্ক থাকা উচিত।  

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর গত বছর ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে দেওয়া সব অস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর পর ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থগিত লাইসেন্সভুক্ত অস্ত্র ও গুলি নিকটস্থ থানায় অথবা জেলা ট্রেজারি ও আর্মস ডিলারের কাছে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।

খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে খুলনা থেকে ৫২৪ জনকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৫২২ জন বৈধ অস্ত্র জমা দেন। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অস্ত্র জমা না দেওয়ায় বাগেরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন এবং বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের কাজী মোমিনুল হকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

ডিসি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি থেকে অস্ত্র ফেরত আবেদন শুরু হয়। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ৩২০ জন আবেদন করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা, অতীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, সাবেক কাউন্সিলর ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরাও অস্ত্র ফেরত পেতে আবেদন করেছেন। 

দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলেই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন খন্দকার। গণঅভ্যুত্থানের পর তাঁর বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলা হয়েছে। জামিনের থাকা অবস্থায় তিনিও তাঁর পিস্তল ও শটগান ফেরত চেয়েছেন।

একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি বুলু বিশ্বাসের ভাই ওমর ফারুক বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। তিনিও অস্ত্র ফেরত চেয়েছেন। এ ছাড়া বিতর্কিত ঠিকাদার মাহাবুব ব্রাদার্সের মালিক শেখ মাহাবুবুর রহমান, চিতলমারী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শামীম, কেসিসির সাবেক প্যানেল মেয়র এস এম রফি উদ্দিন আহমেদ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য আনিসুর রহমান বিশ্বাস, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফ হোসেন মিঠু, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলমগীর কবীরসহ অনেকে অস্ত্র ফেরত চেয়েছেন।

গত ৯ জানুয়ারি কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী টিপু। মৃত্যুর আগে অস্ত্র ফিরে পেতে আবেদন করেছিলেন তিনি।

খুলনার জেলা প্রশাসক ও আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত প্রদান-সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আবেদন করলেই অস্ত্র ফেরত পাবেন– এমন ভাবার অবকাশ নেই। বিতর্কিতদের অস্ত্র ফেরত পাওয়ার সুযোগ কম।