গাজীপুর মহানগরীর হায়দ্রাবাদ এলাকায় বলাৎকারের অভিযোগে এক মসজিদের ইমামকে গাছের সঙ্গে বেঁধে গলায় জুতার মালা পরিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয়রা।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে হায়দ্রাবাদ তালগাছিয়ারটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত ইমামের নাম রহিজ উদ্দিন (৩৫)। তিনি কুমিল্লার মতলব থানার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। তিনি তালগাছিয়ারটেক আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে কাজ করতেন এবং তার পরিবার গাজীপুর মহানগরীর ঝাজড় এলাকার জমি কিনে বাড়ি বসবাস করছেন।
আখলাদুল জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি সাধারণ সম্পাদক হাবিব বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রহিজ উদ্দিনকে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর আগে কয়েক মাস তিনি জুম্মার নামাজ পড়াতেন। ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর মসজিদের তৃতীয় তলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, বাচ্চাদের বাবাদের কাছে ঘুমানোর কথা বলে ছেলেদের নিয়ে আসতেন। এনে তিনি রাতে কম্পিউটার-মোবাইল গেমসে আসক্ত করতেন। এসময় কৌশলে অচেতন করে বলাৎকার করতেন। অনেক সময় অচেতনের আগেই বলৎকার শুরু করতেন রহিজ উদ্দিন।
কিন্তু বাচ্চার ভয়ে কারো কাছে কিছু বলতে না পারাই তিনি এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়ে যান। সম্প্রতি ইন্টার মিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে রাতে ইমাম রহিজ উদ্দিনের কাছে ঘুমাতে ডেকে নিয়ে যান। পরে ওই ছাত্রকে পাওয়ার নামক একটি কোমল পানীয় পান করতে দেন। ওই পানি পান করতেই শিক্ষার্থীর মাথা ঘুরাতে থাকে। পরে তিনি কৌশলে প্রশ্রাবের কথা বলে নিচে নেমে পরিবারকে ফোনে বিষয়টি জানান।
পরে স্থানীদের মধ্যে বলাৎকারের ঘটনা জানাজানি হলেও তারা প্রমাণের অভাবে চুপ থাকে। একপর্যায়ে তার সঙ্গে ঘুমানো স্কুল পড়ুয়া বেশকিছু শিক্ষার্থী পরিবারের কাছে সব খুলে বলে। পরে স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে ইমামকে মসজিদ থেকে ডেকে টঙ্গী-আক্কাস মার্কেট সড়কে পাশের একটি দোকানে নিয়ে যায়।
সেখানে সবাই তাকে বলাৎকারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ইমাম রহিজ উদ্দিন স্বীকার করে। এতে উত্তেজিত হয়ে স্থানীয়রা ইমাম রহিজ উদ্দিনকে একটি গাছের সাথে বেঁধে জুতার মালা পরিয়ে মারধরে করে। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পূবাইল থানা পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
রহিজ উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদ বেগম জানান, তিনি, তার শাশুড়ি এবং এক কন্যা সন্তান নিয়ে ঝাজড় এলাকার নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। প্রতি সপ্তাহে রহিজ উদ্দিন বাড়িতে আসতেন। ঘটনার দিন সকাল ৮ টার দিকে ফোন দিয়ে মেয়ের খোঁজ খবর নিয়েছেন।
কিন্তু সকাল ৯টার দিকে তারা মারধরের ঘটনা জানতে পারেন। পরে ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় অনেকে রহিজ উদ্দিনের স্ত্রী এবং তার বৃদ্ধ মায়ের সাথেও খারাপ ব্যবহারে করেন। কিন্তু বলৎকারের বিষয়টি আগে কখনও তারা জানতে পারেন নি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পূবাইল থানার এসআই রফিক বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত ইমামকে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়া বলাৎকার শিকার ছেলেদের মধ্যেও কয়েক জন থানায় এসেছে। তাদের কাছ থেকে ঘটনা জানার চেষ্টা করছি। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকে এসেছেন, তাদের সাথেও কথা বলছি।’
এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেন জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :