দেশের পাঁচ জেলায় বজ্রপাতে স্কুলছাত্রসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, কিশোরগঞ্জে তিনজন, সুনামগঞ্জে একজন, হবিগঞ্জে একজন ও নেত্রকোনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও তিনজন।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বজ্রপাতে এসব দুর্ঘটনা ঘটে।
নেত্রকোণা
নেত্রকোনার কলমাকান্দায় আকস্মিক বজ্রপাতে দিদারুল ইসলাম নামে কওমি মাদ্রাসার এক শিক্ষক ও মদন উপজেলায় আরাফাত মিয়া নামে এক মাদ্রাসার ছাত্র (১০) মারা গেছেন।
জেলার মদন উপজেলায় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তিয়শ্রী ইউনিয়নের তিয়শ্রী গ্রামে নিজ বাড়ির সামনেই বজ্রপাতে মৃত্যু হয় আরাফাত মিয়ার। সে উপজেলার তিয়শ্রী গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে।
এ বিষয়ে কলমাকান্দা থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে আকস্মিক বজ্রপাতে মারাত্মক আহত হন মাদ্রাসার শিক্ষক দিদারুল। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লা
জেলায় বজ্রপাতের পৃথক দুটি ঘটনায় দুই কৃষক ও দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কোরবানপুর পূর্ব পাড়া কবরস্থানের পাশের মাঠে বজ্রপাতে মারা যান দুই কৃষক।
তারা হলেন, দেওড়া গ্রামের জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে জুয়েল ভুঁইয়া (৩৫) ও কোরবানপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া (কালীবাড়ি) এলাকার মৃত বীরচরণ দেবনাথের ছেলে নিখিল দেবনাথ (৬০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় তারা মাঠে কাজ করছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাদের।
এদিকে, দুপুরের দিকে জেলার বরুড়া উপজেলার খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগাছা গ্রামে বজ্রপাতে দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন, ওই এলাকার মৃত খোকন মিয়ার ছেলে ফাহাদ হোসেন (১৩) এবং একই এলাকার আব্দুল বারেক মিয়ার নাতি সায়মন হোসেন। দু’জনেই বড় হরিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচংয়ের হাওরে বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে ঝড়বৃষ্টির সময় এ ঘটনা ঘটে।
জেলার ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আজাদুর রহমান জানান, আজ সকালে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আড়িয়ামুগুর গ্রামের কালবাসী দাসশর ছেলে দূর্বাসা দাশ (৩৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন তার ভাই ভূষণ দাশ (৩৪) ও বোন সুধন্য দাশ (২৮)।
কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে বজ্রপাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন কৃষক ও একজন কিষানি। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার মিঠামইন উপজেলার শান্তিগঞ্জ হাওরে খড় শুকাতে গিয়ে ফুলেছা বেগম নামে এক কিষানি বজ্রপাতে মারা যান।
এ ছাড়া সকাল ১০টার দিকে জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর হাওরে ধান কাটার সময় ইন্দ্রজীত দাস ও কলমা হাওরে ধান কাটার সময় স্বাধীন মিয়া নামে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়।
মৃত ফুলেছা বেগম মিঠামইনে উপজেলার রাণীগঞ্জ কেওয়ারজোড় এলাকার মৃত আশরাফ আলীর স্ত্রী, ইন্দ্রজীত দাস অষ্টগ্রাম উপজেলার হালালপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্র দাসের ছেলে এবং স্বাধীন মিয়া একই উপজেলার খয়েরপুর গ্রামের ইদ্রিস মিয়ার ছেলে।
সুনামগঞ্জ
শাল্লা উপজেলায় বজ্রপাতে রিমন তালুকদার নামের এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। সকালে উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বুড়িগাঙ্গাল হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
রিমন তালুকদার উপজেলার আটগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও শাল্লা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকালে গ্রামের পাশে বুড়িগাঙ্গাল হাওরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান রিমন। একপর্যায়ে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। রিমন নিরাপদ স্থানে যাওয়ার আগেই ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ সময় একটি গরুও বজ্রপাতে মারা যায়।
শাল্লা থানার ওসি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চাঁদপুর
চাঁদপুরের কচুয়ায় বজ্রপাতের বিকট শব্দে বিশাখা রানী (৩৫) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের নাহারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিশাখা ওই এলাকার কৃষক হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে স্বামী–স্ত্রী মিলে নিজ জমি থেকে ধান তুলছিলেন। এ সময় কাছাকাছি কোথাও বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এ সময় বিশাখা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল জানান, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। বজ্রপাতের শব্দের কারণে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে ঘটনাস্থলে মারা যান।
মৌলভীবাজার
বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মাখন রবি দাস (৪৮) নামে এক চা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মাখন ওই ইউনিয়নের অহিদাবাদ চা বাগানের মৃত শংকুরা রবি দাসের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার মাখন রবি দাস শ্রীধরপুর গ্রামের আলমাছ মিয়ার জমির ধান চুক্তিতে কেটে দিচ্ছিলেন। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাখন মারা যান।
উত্তর শাহবাজপুর ইউপির চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বজ্রপাতে চা শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। পুলিশও এসেছে। মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফনের জন্য নিহতের স্বজনরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করবেন।