গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলের হায়দরাবাদ এলাকায় একাধিক শিশু-কিশোরকে বলাৎকারের অভিযোগে মারধরের শিকার ইমাম কারাগারে মারা গেছেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
নিহত রহিজ উদ্দিন খোকন (৩৫) চাঁদপুর মতলব থানার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। তিনি হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব ছিলেন। গাজীপুর মহানগরীর ঝাজড় এলাকায় জমি কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে মর্গের সামনে গিয়ে দেখা যায়, নিহত রহিজ উদ্দিন খোকনের মা, স্ত্রী, ছোট বোনসহ স্বজনরা বিলাপ করে কান্না করছেন।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারী ছিলেন রহিজ উদ্দিন খোকন। স্ত্রী, ৮ বছরের এক কন্যা সন্তান এবং মাকে নিয়ে ছিল রহিজ উদ্দিনের পরিবার। ছোট বেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর ঢাকার একটি এতিমখানায় লেখাপড়া করেন তিনি।
রহিজের পরিবারের প্রশ্ন, ‘তিনি যদি অপরাধ করেও থাকেন, তাহলে স্থানীয়রা কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিলেন। পরিবারের কাছে বলা অথবা চাকরি থেকে বাদ দিলেই হতো।’
রহিজ উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, ‘মসজিদে দুটি পক্ষ রয়েছে। তাদের বিরোধ চলছিল। রহিজ উদ্দিন খোকন ছিলেন সুন্নি, যার মাধ্যমে ওই মসজিদে নিয়োগ হয় সেও সুন্নি। কিন্তু ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষ আহলে হাদিসের অনুসারী। তারা রহিজ উদ্দিন খোকনের ওয়াজ পছন্দ করতেন না। তাই চক্রান্ত করে মারধর করা হয়েছে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পূবাইল থানার ওসি এস এম আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগে রোববার সকালে স্থানীয়রা হায়দরাবাদ আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব রহিজ উদ্দিনকে আটক করেন। পরে তাকে জুতার মালা পরিয়ে গাছে বেঁধে গণপিটুনি দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রহিজকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।’
‘পরে নির্যাতিত এক কিশোরের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়েরর পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে রাতেই গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। রাত ৩টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার সকালে মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়।’
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার রফিকুল কাদের বলেন, ‘রহিজ উদ্দিনের শরীরে ‘পাবলিক অ্যাসল্টে’র চিহ্ন ছিল। রাত ৩টার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেদের সঙ্গে ইমাম রহিজ উদ্দিন চলাফেরা করতেন বেশি। ছেলেদের ডেকে নিয়ে তার থাকার ঘরে কম্পিউটার ও মোবাইলে গেমস খেলতে দিতেন এবং বোতলজাত পানীয় পান করাতেন। ওই পানীয় পান করার পর অচেতন হয়ে পড়লে রহিজ উদ্দিন তাদের বলৎকার করতেন।
সম্প্রতি কলেজের এক ছাত্রকে রাতে ইমাম রহিজ উদ্দিন ঘুমাতে ডেকে নিয়ে যান। পরে ওই ছাত্রকে একটি কোমল পানীয় পান করতে দেন। পরে কলেজছাত্রের মাথা ঘোরাতে থাকে। পরে তিনি কৌশলে ঘর থেকে বের হয়ে তার পরিবারকে ফোনে বিষয়টি জানান।
ঘটনাটি জানাজানি হলে রোববার সকালে এলাকার লোকজন রহিজ উদ্দিনকে আটক করে গণপিটুনি দেন। পরে পুলিশের সোপর্দ করা হয়। ওই ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।