জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে স্বামীকে হারানোর স্মৃতি এখনো দগদগে, এর মধ্যেই বড় মেয়ের মৃত্যুতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন শহীদের স্ত্রী রুমা বেগম (৪০) এবং তার ছোট মেয়ে। পরে তাদের পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা শ্বাসকষ্ট, শরীর কাঁপা ও বারবার অজ্ঞান হয়ে যাওয়াসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
রোববার (২৭ এপ্রিল) রাতে পটুয়াখালীতে শহীদকন্যার দাফন সম্পন্ন করার পরই শোক সইতে না পেরে তারা দুজনই অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
শহীদের স্ত্রী রুমা বেগম বলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আগে স্বামী হারালাম, এখন মেয়েটাকেও হারালাম। আর কিছুই নেই আমার জীবনে।’
তার ভাই মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘মেয়েটার মৃত্যুর পর থেকে আমার বোন ও ভাগ্নি একেবারে ভেঙে পড়েছে। ওরা এখন কথা বলতেও পারছে না ঠিকভাবে।’
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘তাদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খুবই নাজুক। দুজনেরই নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চলছে। মানসিক ট্রমার কারণে তাদের এই শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি, তারা আগামী দুই এক দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরতে পারবেন।’
গত শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে রাজধানীর শেখেরটেকের ভাড়া বাসা থেকে শহীদকন্যার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জানা যায়, গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীতে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ওই কিশোরী। ঘটনার পর সাহসিকতার সঙ্গে তিনি নিজেই থানায় গিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তবে ঘটনার পর থেকে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সামাজিক অবজ্ঞা ও ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা তার মনে গভীর হতাশা তৈরি করেছিল, যা ধীরে ধীরে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
প্রসঙ্গত, এর আগে তার বাবা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার গাড়িচালক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন। টানা ১১ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১ আগস্ট-২৪ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরিবারটি একের পর এক শোকের ভারে এখন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।