রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ২ মে, ২০২৪, ০৫:৪৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

হিমালয়ের বরফগলা পানিতে হাসছে মরা তিস্তা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সারাদেশ যখন তীব্র তাপপ্রবাহে জ্বলছে । ঠিক সেই সময়ে হিমালয়ের বরফগলা পানিতে হাসছে ধু ধু চরে পরিণত হওয়া মরা তিস্তা। তিস্তা ব্যারেজ থেকে শুর করে ১৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তিস্তার বুকে পানি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর পানি পেয়ে তিস্তা অববাহিকার মানুষগুলোর মাঝে খুশির আমেজ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ব্যারেজের পানি সুবিধাভোগী কৃষক আর জেলারা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে । পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, তীব্র তাপপ্রবাহের কারনে হিমালয়ের বরফ গলে স্রোতধারার মত পানি আসছে তিস্তায়। সেই পানিতে ব্যারেজ এলাকা টুইটুম্বুর হয়েছে । শুধু সেখানেই নয় পানি প্রবাহ তিস্তার ১৩৫ কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আশা করছি আর কয়েক দিন এই পানিপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে তিস্তারবুকে প্রাণের সঞ্চার হবে।

৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা অববাহিকার ১৩৫ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়া সত্ত্বেও ভারত একতরফা বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং প্রায় ছয় লাখ হেক্টর জমিতে সেচের জন্য পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য পানি ছাড়ে। যে পানি আশীর্বাদ না হয়ে বেশিরভাগ সময় এ দেশের মানুষের জন্য বয়ে আনছে অভিশাপ।

ফলে অসময়ে তিস্তাপাড়ে বন্যা দেখা দিচ্ছে। বছর বছর বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। আর শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার বুক পরিণত হচ্ছে ধু ধু বালুচরে। সেই তিস্তাপাড়ে এবার সেচনির্ভর কৃষকদের জন্য স্বস্তির ঝলক ফেলেছে অব্যাহত দাবদাহ।
চলমান তাপপ্রবাহ তিস্তা সেচের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। দেশের মতো প্রচণ্ড দাবদাহ চলছে পাশের দেশ ভারতেও। দাবদাহে হিমালয় পর্বতের জমাট বাঁধা বরফ গলতে শুরু করেছে। বরফগলা পানি ভারতের গজলডোবা বাঁধ হয়ে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করছে।

এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টির পানিও আসছে তিস্তায়। ফলে এটা তিস্তার সেচ এলাকার কৃষকের জন্য আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিলে তিস্তায় পানি থাকে আড়াই থেকে ৩ হাজার কিউসেক। এবার পানি পাওয়া যাচ্ছে ৮ হাজার কিউসেকের ওপরে। তাই এবার তিস্তা সেচ এলাকায় পানির খুব একটা সংকট নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেচ এলাকায় ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও এ বছর সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার হেক্টর। এবার লক্ষ্যমাত্রার পুরোটাই পূরণ হয়েছে বলে দাবি করছে পাউবো।

প্রকল্প এলাকায় সেচ দেওয়া এবং নদীর প্রবাহমাত্রা ঠিক রাখতে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানির স্বাভাবিক প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন ১৫ হাজার কিউসেক। শুধু সেচ প্রকল্প চালাতেই প্রবাহমাত্রা থাকা প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার কিউসেক এবং নদীর অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রয়োজন ৬ হাজার কিউসেক পানি। কিন্তু শুকনো মৌসুমে তিস্তায় প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যায় না। শুষ্ক মৌসুমে বোরো আবাদের সময় ব্যারাজ পয়েন্টে কয়েক বছর ধরে পাওয়া গেছে মাত্র ২-৩ হাজার কিউসেক পানি। তবে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন।

শুকনো মৌসুম ও প্রচণ্ড খরায় তিস্তা একেবারে পানিশূন্য থাকার কথা থাকলেও হিমালয়ের বরফগলা পানি এবং পশ্চিমবঙ্গের বৃষ্টির পানি তিস্তায় যোগ হওয়ায় বাংলাদেশ অংশে মোটামুটি পানি পাওয়া যাচ্ছে। যে পরিমাণ পানি তিস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, তার সবটুকুই সেচ চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের সেচ খালের মাধ্যমে কৃষিজমিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেট বন্ধ রেখে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ করায় মূল নদীতে প্রবাহ বন্ধ থাকলেও সেচ ক্যানেলগুলো টইটম্বুর। ফলে চলমান দাবদাহ তিস্তার জন্য কিছুটা আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে।

সেচ-সুবিধা পাওয়া রংপুরের সদর উপজেলার খলেয়া এলাকার কৃষক জহির ইসলাম বলেন, আমরা ভীষণ খুশি। এবার পানি নিয়ে তেমন চিন্তা নেই। এই সেচের পানি ধরে রাখতে পারলে গ্রামের অসচ্ছল কৃষকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন এবং চাষাবাদও বাড়বে।

একই গ্রামের আক্কাস বলেন, এখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা সেচ ক্যানেলের পানিতে চাষাবাদ করছি। আগের মতো এবার পানি নিয়ে সমস্যায় পড়ার শঙ্কা নেই। আল্লাহর রহমতে গরমে আমাদের কষ্ট হলেও সেচের পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে না। তবে স্থানীয়দের দাবি, তিস্তায় যে পরিমাণ পানি পাওয়া যাচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, হিমালয়ের বরফগলা পানি তিস্তায় প্রবেশ করায় সন্তোষজনক পানি পাওয়া যাচ্ছে। সেচের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণ হয়েছে। নদীতে পানি কম থাকলেও সেচের ক্যানেলগুলোয় পর্যাপ্ত পানি রয়েছে।

মন্তব্য করুন