সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে কোটা আন্দোলন। এই আন্দোলনের কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে নিন্ম আয়ের মানুষের। এতে অনেকটা থমকে গেছে অনেকের জীবন-জীবিকা। নিন্ম আয়ের মানুষ বলছেন, কাজ করে টাকা না পাঠালে অনেকের পরিবার না খেয়ে দিন পার করবে। তাদের দাবি- রোজগার না হলে কী খাবে বাচ্চা ও পরিবারের সদস্যরা।
থমকে যাওয়া এক ব্যক্তি হলেন যশোরের রানা মিয়া ও ফরিদপুর জেলার মো রাজ্জাক। রানার ৩ মেয়ে। আর রাজ্জাকের ৫ ছেলে মেয়ে।
'তারা বাচ্চাদের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ চালাতে রিকশা চালান ঢাকায়। প্রতিদিন আয়ের টাকা পাঠালেই বাড়িতে চুলা জ্বলে। মুখে ভাত ওঠে পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু কোটা আন্দোলনের কারণে তাদের আয় রোজগার কম হচ্ছে।'
কোটা আন্দোলনে থমকে গেছে রানা ও রাজ্জাকের আয়ের পথ। রাস্তা অবরোধ থাকায় বসেই দিন কাটছে অসহায় মানুষের। আন্দোলনের কারণে আয়ের সাথে থমকে গেছে পরিবারের জীবিকাও।
রানা রুপালি বাংলাদেশকে বলেন, বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ, ব্যাংকের কিস্তি ও সংসারের খরচ নিত্যদিনের সংগ্রাম। তবে সে সংগ্রাম হার মেনেছে শিক্ষার্থী ও সরকারের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যুতে। নিজেও যেমন কষ্টে আছি পরিবার ও কষ্টে আছে।
এদিকে রাজ্জাক রুপালি বাংলাদেশকে বলেন, বাড়িতে থাকা পরিবারকে প্রতিদিন আয় করে তাদের জন্য টাকা পাঠাই। আজ ১ হাজার থেকে ১৫ টাকা রোজগার হতো কিন্তু আন্দোলনের কারণে ৩০০ টাকা হয়েছে। খরচ উঠিনি এক হিসেবে। বাড়িতে মেয়ে-বউ-বাচ্চা সবাই না খাওয়া। কিছু তো করার নেই আমাদের।
মো. গনি নামের আরেক ভ্যান চালক বলেন, এভাবে দিন গেলে তো পরিবার বাঁচবে না। কাজ না করলে বাড়িতে টাকা কে পাঠাবে। চুলায় আগুন জ্বলবে কি করে? কী খাবে আমার বাচ্চারা। আয় রোজগার তো হয় নাই। খাবার নিজের জুটে নাই। সরকারের উচিত আমাদের জন্য কিছু করা। ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়া।
একাধিক রিকশাচালকদের অবস্থা একই। কোটা বাতিলের দাবিতে সারা বাংলা ব্লকের লক্ষ্যে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার যান চলাচল। ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা প্রায় ৮ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে সায়েন্স ল্যাব এলাকা। গাবতলির সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয় গুলিস্তানসহ দক্ষিণের। দুই দিকে লাখো যানবাহনের সারিতে ব্লক হয় ঢাকা। একইভাবে ঢাবি শিক্ষার্থীরা বন্ধ করে দেয় শাহবাগ ও বাংলামোটর এলাকা। এতে বিপাকে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও শ্রমিকরা। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার যান চলাচল।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক রুপালি বাংলাদেশকে বলেন, এভাবে কোটা আন্দোলন চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের চলতে কষ্ট হবে। বিশেষ করে দিন মজুরিদের কথা কেউ ভাবে না। আসলেই এর সমাধান অতি জরুরি। অন্যথায় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। এসব কারণে চুরি ছিনতাই বা অনান্য অপরাধ বেঁড়ে যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :