ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

ইতি তোমার স্নেহের সোহাগ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪, ০৪:১১ পিএম

ইতি তোমার স্নেহের সোহাগ

ছবি: সংগৃহীত

১ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক চিঠি দিবস। এই উপলক্ষে ফিচারের আয়োজন। চিঠিতে ভালোবাসা। 

৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রিয়,

তোমাকে আমি কোনোদিন চিঠি লিখি নি, আজই প্রথম লিখছি। যে প্রাণ তোমার চোখের সামনে সাতাশটি বছর ধরে বড় হচ্ছে, সে আজ তোমার থেকে অনেক দূরে। যে প্রাণ তোমার জন্য আজ এমন ব্যাকুল হয়ে আছে, তা তোমারই দেয়া আল্লাহর পক্ষ হতে। তোমাকে ভালোবাসি কি না জানি না, জানতে চাইও না কখনো। যেদিন তুমি চলে যাবে, সেদিন আমার চোখ বেয়ে যতটুকু জল গড়িয়ে পড়বে বুঝবে ততখানি ভালোবাসি, ততখানি শূন্যতা অনুভব করি তোমার। বিগত দিনের সুখস্মৃতি যদি মনে পড়ে, সেখানে তোমার উপস্থিতির কথা তেমন হয়ত মনে নেই। যে সময় বুঝতাম না, আমাকে কাঁধে করে নিয়ে কখনো বেড়িয়েছো হয়ত, হয়ত বুকের ওপর বসিয়ে গল্প করেছো, কান্না করলে শান্ত করবার ক্ষীণ চেষ্টা করেছো। আজ সেই তোমাকেই লিখতে বসেছি। লিখতে বসেছি কিন্তু আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, কি-বোর্ডের অক্ষরগুলো অস্পষ্ট হয়ে আসছে। আচ্ছা মানুষের অনুভূতি এমন কেন, কেন হুটহাট করে চোখে এমন জল আসে? ছোট বেলায় যখন তোমার মাথা ঠিক থাকতো, এক গামলা মুড়ি নিয়ে বসে যেতে কাঁচামরিচ, পেয়াজ বা কখনো মদনের চানাচুর নিয়ে। তুমি আমাকে পড়িয়ে দিতে চাইতে, কিন্তু আমি পড়তে চাইতাম না। কতবার স্কুলে গেলে নিয়ে আসতে যাইতে, শুধু বলতে বাড়ি চল, বাড়ি চল। আমি রেগে গিয়ে বলতাম, তোমার বাপ কি বাড়িতে স্কুল কলেজ দিয়ে রাখছে! অনেকবার পালিয়ে যেতাম, কিন্তু বন্ধুদের সামনে লজ্জা থেকে কি পালানো যেত বলো? তোমার এই ছেলে মানুষি এখন মিস করি আমি। মনে হয় আবার যদি আমায় ওভাবে খুঁজতে, আচ্ছা এখনো কি আমাকে খুঁজে বেড়াও? একবার আমাকে খুব মেরেছিলে মনে পড়ে? আমার তেমন মনে নেই অন্যদের মুখে শোনা কথা। একবার বিচালি কাটা বটি দিয়ে আমাকে দৌড়ানি দিছিলে। একবার কষে একটা চড় দিয়েছিলে। দেখেছো কেমন স্বার্থপর কথা বলছি, তুমি তো আমাকে অসম্ভব স্নেহও করতে, সে কথা তো বলছি না!

একবার বড়শিতে একটা রুই মাছ বাঁধিয়ে বাড়ি ফিরলে তুমি ভীষণ খুশি হয়েছিলে, মাছের মাথাটা কি তুমি খেয়েছিলে না তোমার ছোটো ছেলে? তোমার সাথে শেষবার একসাথে ধান কাটতে গিয়েছিলাম বছর দুয়েক আগে, তোমার মাথার গ্যাঞ্জাম আরো বেড়েছিল তখন। আধপাকা ধান কাটার রেকর্ডও তোমার কম নেই। যাদের দেখতে পারতে না তারা দূর থেকে তোমাকে দেখলেই সতর্ক থাকতো, ভয় করত যমের মত। তৎকালীন পাকিস্তান পিরিয়ডে গ্রামের ইন্টারমিডিয়েট পাশ করা মানুষের মধ্যে তুমি একজন ছিলে, এটা আমার ভীষণ গর্ববোধের ও ভালো লাগার বিষয়। এত সুন্দর ইংরেজিতে কথা বলতে একটা কথা বলতে মনে আছে, যার অর্থ "আমার খুর তোমার মত ছোটলোকের মাথা কামাবার জন্য নয়।" বলতাম আর বারবার শুনতে চেয়ে বিরক্ত করতাম। তুমি ভালো গান করতে, একটা গান আমি প্রায়ই শুনতাম। 

তুমি ভালো কবিতাও আবৃত্তি করতে বিশেষ করে কবর আর সোনার তরীর কথা বলতেই হবে। এত সুন্দর আবৃত্তি করতে যে হৃদয় ভরে যেত। তোমার জ্ঞানে ফিরে আসা বিনয়ের মুহুর্তগুলো আমাকে ভীষণ প্রশান্তি দিত, যখন মাথার গ্যাঞ্জাম বাড়তো কিসব উল্টোপাল্টা বলতে। তোমাকে একবার বাড়ির উঠোনে বেঁধে রাখা হলো, ঘুমের ঔষুধ খাওয়ানো হলো। এভাবে অনেকদিন, অনেকবার পরিস্থিতির কারণে তোমার সাথে এমন করেছি আমরা। না বুঝে তোমার সাথে হয়ত খারাপ আচরণ করেছি অথবা পরিস্থিতির কারণে করেছি। অতএব ক্ষমা করে দিও বাবা। কিন্তু তুমি যখন ভালো থাকতে কোনোদিন তোমার সাথে খারাপ আচরণ করিনি। তোমার সাথে রসিকতাও কম করিনি। এখন বুঝতে পারি, তুমি কে আর কতটা কাছের। যখন শান্ত থাকো তুমি কতটা প্রশান্তির, তুমি কতটা আনন্দের। আজ আর নয়। সামনে ইদ, এবার বাড়িতে যাচ্ছি না বাবা। কষ্ট পাবে জানি, কিন্তু কিছু করার নেই। আর তোমার কষ্ট নিয়ে কেউ ভাবে বলে মনে হয় না। তোমার কি লাগবে মোবাইলে জানিও আব্বা? তোমাকে লিখলে আরো অনেক কথা লিখা যেত, সেসব না হয় অন্য কোনো দিনের জন্য রেখে দিলাম। প্রার্থনায় ঝরে পড়া চোখের জলের মত সুন্দর হোক তোমার আগামী, ভালোবাসা নিও অনিঃশেষ। আল্লাহ হাফেজ।

 

ইতি 
তোমার স্নেহের মিরাজুল ইসলাম (সোহাগ)

আরবি/জেডআর

Link copied!