ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সমকালীন গল্প: দখল

কবির কাঞ্চন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০১:০০ পিএম

সমকালীন গল্প: দখল

ছবি: সংগৃহীত

কয়েকদিন ধরে বনের এককোণে বসে বসে কাঁদছে একটি বিড়াল। সময় যতই গড়াচ্ছে তার কান্নার আওয়াজ ততই বাড়ছে। বিড়ালটির এমন বিলাপ করে কান্না দেখে বনের পশুপাখিদের খুব খারাপ লাগে। তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দিতেও ভুল করে না। কিন্তু বিড়ালের সব ঘটনা জানার পর সবাই যার যার মতো করে আফসোস করে। বিড়ালের জন্য দোয়া করে। তারপর নিজেদের গন্তব্যে চলে যায়। আর বিড়ালটি সকাল দুপুর রাতে শুধু কান্না করে। কিছুদিন যেতে না যেতে বিড়ালটির কান্নার আওয়াজ আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। ইতোমধ্যে বিড়ালটির পাশে দুটি বাচ্চা বিড়াল এসে যোগ হয়। তারাও কান্না করতে থাকে। তাদের দুজনের গা থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে।
একদিন সেই পথ দিয়ে অন্য একটা বিড়াল যাচ্ছিল। সে পাশের বনে থাকে। এ বনে বেড়াতে এসেছে। স্বজাতিদের একজনের এমন দুরবস্থা দেখে তার খুব মায়া হলো। সে বিড়াল ও বাচ্চা বিড়ালগুলোর পাশে বসে সমব্যথী হয়ে জিজ্ঞেস করল-
- আচ্ছা, তোমরা এভাবে কাঁদছো কেন? কেউ কী তোমাদের মেরেছে?
বিলাপ থামিয়ে মা বিড়ালটি বলল,
- আমি এ বনেরই একজন বাসিন্দা। ওই যে দূরের আবাসস্থলটি দেখতে পাচ্ছো ওটা আমারই ঘর। আর এরা আমার সন্তান। আমরা এখানে খুব সুন্দরভাবে বাস করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
এ কথা বলে বিড়ালটি আবার কেঁদে উঠলো।
আগন্তুক বিড়ালটি উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
- তারপর কী হলো?
বিড়ালটি কাঁদো গলায় বলল,
- তারপর এক রাতে একটি কুকুর তার বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। তার বাচ্চাগুলো তখন খুবই ছোট ছিল। বাইরে কোথাও তাদের নিরাপদ কোনো থাকার জায়গা ছিল না। সে আমাদের কাছে আশ্রয় খোঁজে। কোনোমতে সামান্য একটু থাকার জায়গা দিলে তারা কৃতজ্ঞ থাকবে বলে আমাদের কাছে অঙ্গীকার করে। 
কুকুরটিও তার বাচ্চাদের এমন অসহায়ত্ব দেখে আমাদের খুব মায়া হয়। আমরা আমাদের বাড়ির একপাশে তাদের থাকার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দিই। তারপর তাদের চলার জন্য উপায়ও দেখিয়ে দিই।
এ কথা বলে মা বিড়ালটি আবার কেঁদে ওঠে। আগন্তুক বিড়ালটি অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
- এ তো ভালো কাজ করেছ। এতে আবার কান্নার কী হলো?
- কাঁদছি এ কারণে যে, সেদিন যাদের আমরা আমাদের জায়গায় থাকতে দিয়েছি আজ তারাই আমাদেরকে বাড়ি ছাড়া করছে। তারা একে একে আমাদের সবগুলো জায়গা জোর করে দখল করে নিয়েছে। এখন সামান্য একটু জায়গা নিয়ে আমরা বসবাস করছি। সেটাও তাদের দিয়ে দিতে তারা আমাদের ওপর হামলা শুরু করে দিয়েছে। এই যে দেখতে পারছ, আমাদের সন্তানদের রক্তাক্ত দেহ। এসব তারাই করেছে। আমরা আমাদের নিজেদের জায়গায় নিজেরা থাকতে পারছি না।
আগন্তুক বিড়ালটি সব শুনে প্রতিবাদী কণ্ঠে বলল,
- এ তো চরম অন্যায়। একজনের জায়গায় থেকে তাকে উঠিয়ে দিয়ে আবার তার ওপর হামলা করা সম্পূর্ণরূপে বেআইনি। এর জন্য সেই কুকুরটিকে একদিন চরম মূল্য দিতে হবে।
আগন্তুক বিড়ালটি আবার বলল,
- তুমি ভয় পেয়ো না। নিজের বাসায় ফিরে যাও। আর নিজের সাধ্যমতো ওদের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাও।  আমাদেরকে তোমার সাথে পাবে।
এমন আশ্বাস শুনে বিড়ালটি তার বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আবার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।

ওদিকে কুকুরের দল ক্রমশ বড় হতে লাগল। তাদের এখন লক্ষ্য একটাই, যে কোনো উপায়ে বিড়ালের বংশকে নির্বংশ করে দিতে হবে। এরই মধ্যে পাশের কয়েকটি বন থেকে কুকুর সম্প্রদায় এসে কুকুরের পক্ষ নিয়ে বনের অন্যান্য প্রাণীদের জানান দিল তারা কুকুরের পক্ষেই থাকছে।
আর বিড়াল পরিবার দিনে দিনে আরও কোণঠাসা হয়ে যায়। এতকিছুর পরও তারা সিদ্ধান্ত নিল, নিজ জন্মভূমি ছেড়ে যাবে না। নিজ জন্মভূমিকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেবে। সেই থেকে বিড়াল পরিবারটি তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সংঘবদ্ধ হতে থাকে। তাদের একটাই স্বপ্ন- একদিন বিজয় আসবে, জয় হবে সত্যের। 

 

আরবি/ আরএফ

Link copied!