ঢাকা সোমবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৪

বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি

মোখতারুল ইসলাম মিলন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৪, ০৩:২৯ পিএম

বিলুপ্তির পথে বাংলার ঐতিহ্য ঢেঁকি

ছবি: ইন্টারনেট

গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢেঁকি। প্রাচীনকাল থেকেই ভারত উপমহাদেশে ঢেঁকির ব্যবহার হয়ে আসছে। ঢেঁকির উৎপত্তি কবে এবং কীভাবে হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যাইনি। তবে বহু পুরোনো সময় ধরে ঢেঁকির ব্যবহার। শস্য, ফসল ভাঙানোর কাজে ঢেঁকির ব্যবহার হতো। ধান ভাঙিয়ে চাল বের করা, গম ও ভুট্টা থেকে আটা, ছাতু তৈরি করা, ডাল গুঁড়া করা, মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া এ ধরনের শুকনো নানা জিনিস গুঁড়া করার কাজে কাঠের তৈরি এই ঢেঁকি ছিল একমাত্র উপকরণ।
গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ঢেঁকি দেখা যেত। গুদাম ঘরে, বা রান্না ঘরে বসানো হতো ঢেঁকি। গ্রামের মহিলারা ঢেঁকিতে শস্য ভাঙাতেন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একজন বা দুইজন মিলেও পা দিয়ে জোরে জোরে উঠানামা করাতেন ঢেঁকি। আর মুখে মুখে সুরের গান গাইতেন — ‘ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া,
ঢেঁকি নাচে, আমি নাচি, হেলিয়া দুলিয়া, ও ধান ভানিরে।’
গানের তালে তালে আনন্দে ঢেঁকিতে কাজ করত। ঢেঁকির আকৃতি ছিল সাড়ে ৫ থেকে ৬ ফুটের মতো লম্বা। পাশ থাকে ৮ থেকে ৯ ইঞ্চির মতো। গাছের মোটা অংশ দিয়ে ঢেঁকির মূল কাঠামো তৈরি করা হতো। মেঝে থেকে কিছুটা উঁচুতে বসানো হতো। সামনের দিকে একটি কাঠ থাকত যেটা মেঝের গভীর পর্যন্ত ছিল, যার মাধ্যমে শস্য ছিন্ন হতো যাকে বলা হতো মৌনা। পেছনের দিকে খিল আটকানো হতো, আর ঠিক তার থেকে একটু পেছনেই পা দিয়ে চাপ দেওয়া হতো। ঢেঁকির গঠন ঠিক এমনই ছিল।
হেমন্ত এলেই নতুন ধানের নতুন চালের গুঁড়া করার হিড়িক পড়ে যেত। চালের গুঁড়া দিয়ে নানা পিঠাপুলি তৈরি করতেন। এসব যেন বর্তমানে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে এখন আর আগের মতো ঢেঁকি দেখা যায় না। কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বাংলার ঐতিহ্য চিরচেনা ঢেঁকি। নতুন করে আবিষ্কার হয়েছে মেশিন। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে রাইস মিল, ড্রয়ারসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। আগে মানুষ ধান কেটে বোঝা বানিয়ে মাথায় করে বাড়ির উঠানে নিয়ে আসত। তারপর হাত দিয়ে পিটিয়ে ধানের শীষ থেকে আলাদা করত, সিদ্ধ করে রোদে পুড়ে শুকাতে হতো, তারপর ঢেঁকিতে ভেঙে চাল বানাত।
যুগের পরিবর্তনে এসব কৃষকের নানা মধুময় দৃশ্যগুলো অতীত হয়ে গেছে। দেখা যায় না আর এসব গ্রামের প্রকৃতি। ধান ভাঙার দৃশ্য, ঢেঁকি এসব যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য চিরচেনা ঢেঁকি।

আরবি/ আরএফ

Link copied!