ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪

দ্রোহের কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন আজ

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৪, ০৫:৪৯ পিএম

দ্রোহের কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর জন্মদিন আজ

রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

“ভলো আছি, ভালো থেকো,
আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে”

৮০-৯০ এর দশকে বড় হওয়া বাংলাদেশী খুব কম পাওয়া যাবে যারা উপরের গানটি শুনেন নাই। গানটির স্রষ্টা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ “প্রতিবাদী রোমান্টিক” নামে খ্যাত হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, মুক্তিযুদ্ধের মুল্যবোধ ও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপর্যয়কালে যে কজন প্রতিবাদী ছিলেন, তাদের মধ্যে রুদ্রই ছিলেন অন্যতম। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের সদম্ভ পদচারণায় ব্যথিত কবির কলমে উঠে এসেছে তারই বেদনাভরা প্রতিবাদী স্বর।
 

“জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।”

১৯৭৫ সালের পরের সবকটি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা।
আজকাল দেশের দুর্যোগ মুহূর্তে কবি শিল্পী কথিত সুশীল সেলিব্রেটিরা কেবল নিভৃত ভুবন নির্মাণ করে চলে যান শীতনিদ্রায় কিংবা মেতে থাকেন ঘাস ফুল লতা পাতা নিয়ে অথচ এ দ্রোহের কবির কাছে সমাজের সঠিক চিত্র আঁকাটাই ছিল মৌল দায়, আর সে দায় পালনে কবি ছিলেন নির্ভেজাল।

আজ ১৬ অক্টোবর, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র জন্মবার্ষিকী। ১৯৫৬ সালের আজকের এদিনে পিতার কর্মস্থল বরিশালের আমানতগঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

রুদ্রর পিতা ডাঃ শেখ ওয়ালীউল্লাহ এবং মাতা শিরিয়া বেগম। তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার অন্তর্গত সাহেবের মেঠ গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রুদ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে (বাগেরহাট জেলার মংলা থানার অন্তর্গত)। এখানকার পাঠশালাতেই তার পড়াশুনা শুরু।


১৯৭২ সালে ঢাকায় এসে ওয়েস্ট এ্যান্ড হাইস্কুল ভর্তি হয়ে ১৯৭৪ সালে চার বিষয়ে লেটার মার্কসসহ এসএসসিতে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। এর পর ১৯৭৬ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। অতঃপর ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেন তিনি।

তিনি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা। জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক। ১৯৭৫ সালের পরের সবকয়টি সরকারবিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিবাদী কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, দেশাত্মবোধ, গণ-আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, ও অসাম্প্রদায়িকতা তাঁর কবিতায় বলিষ্ঠভাবে উপস্থিত। তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ৩৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং `ভালো আছি ভালো থেক`সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। 

আরবি/এস

Link copied!