ঢাকা শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ষষ্ঠ দিনে এসেছে ৮০ নতুন বই

এফ এ শাহেদ
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৫, ০২:২৫ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

অমর একুশে বইমেলা বাঙালির আত্মমর্যাদা, প্রকাশের অহংকার ও নিজেকে উন্মোচনের প্রতীক। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তধারার কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা যে সাদামাটা বইমেলা শুরু করেছিলেন, তা আজ বাঙালির প্রাণের স্পন্দন। বরাবরের মতো এবারও প্রকাশিত হচ্ছে প্রতিদিনই নতুন নতুন বই। নতুন বইয়ের গন্ধে আমোদিত হচ্ছে বইপ্রেমী পাঠক। জ্ঞান বিতরণের মহাযজ্ঞ হিসেবে প্রাণবন্ত হয় অমর একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণ। ভাষাশহিদদের স্মরণ করা হয় এই মাসজুড়ে।

বইপ্রেমীরা অপেক্ষা করেন কখন আসবে ফেব্রুয়ারি, কখন শুরু হবে বইমেলা। লেখক, পাঠক, প্রকাশক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন এই প্রহরের। ১৯৬৪ সালে একটি বইমেলার আয়োজন করা হয় টিচার্স ট্রেনিং কলেজে, অন্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের নিচতলায়। প্রথমটি বছরের শুরুতে ও পরেরটা ১৮-২৪ অক্টোবর।

১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে একটি সফল বইমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। সবচেয়ে সার্থক ও আশাসঞ্চারী বইমেলা ছিল ১৯৭২ সালের ২০-২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত বইমেলা।

এবারের বইমেলায় জুলাই আন্দোলন ’২৪-এর গ্রাফিতি ও বই প্রকাশ হয়েছে। গণআন্দোলনের স্মৃতি-বেদনার কথা স্মরণ করে। এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান : নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ’। বইমেলায় থাকছে ‘জুলাই চত্বর’, যা আকর্ষণীয়। ৭০৮টি প্রকাশনা সংস্থা স্টল বরাদ্দ পেয়েছে। মূল বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯৯টি প্রকাশনা সংস্থা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি প্রকাশনা সংস্থার স্টলে প্রতিদিন আসছে নতুন বই।

ষষ্ঠ দিনে এসেছে ৮০টি নতুন বই: গতকাল বৃহস্পতিবার অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এর ষষ্ঠ দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৮০টি। বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহবুব বোরহান এবং মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আজিজুল হক।

প্রাবন্ধিক বলেন, মাহবুবুল হক বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিজ্ঞানী। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রণয়ন এবং বাংলা বানান সংস্কারে তিনি নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে তার অবদান যুগান্তকারী। তিনি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা পাঠ্যবই রচনা ও সম্পাদনার কাজ করেছেন। মাহবুবুল হক কার্যকর অর্থেই রাষ্ট্রীয় ও প্রয়োগ-উপযোগী ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে দেখতে চেয়েছেন। এর সফলতার জন্য তিনি ভাষার অবয়ব পরিকল্পনায় প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছেন। শিক্ষকতা তাঁর পেশা হলেও তিনি সর্বসাধারণের কাছে একজন ভাষাবিজ্ঞানী ও পাঠ্যবইয়ের লেখক হিসেবেই পরিচিতি লাভ করেন।

আলোচকদ্বয় বলেন, বাংলা ভাষা, সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের একজন বিদগ্ধ পণ্ডিত ছিলেন মাহবুবুল হক। ব্যক্তিমানুষ ও শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছিলেন দায়িত্বশীল, পরিশ্রমী ও আন্তরিক। ইতিবাচক চিন্তাচেতনার অধিকারী মাহবুবুল হক ভাষা ও ব্যাকরণের অনেক জটিল বিষয়কে সরল ও পরিচ্ছন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। ভাষা, লোকসাহিত্য, অভিধান ও অনুবাদ নিয়ে তাঁর নিরলস সাধনা নিঃসন্দেহে আমাদের জ্ঞান-জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর কর্মনিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও অগাধ পাণ্ডিত্য ভবিষ্যৎ গবেষকদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, মাহবুবুল হক বাংলা ভাষার উৎকর্ষ সাধনে আজীবন নিবেদিত ছিলেন। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণেই তিনি একজন মানবিক, সুশৃঙ্খল এবং সামাজিক দায়বোধসম্পন্ন মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। তার আলোকিত জীবন ও সৃজন আমাদের সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা জোগাবে।

লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেনÑ টোকন ঠাকুর এবং জাকির আবু জাফর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেনÑ কবি সাখাওয়াত টিপু এবং কবি জব্বার আল নাঈম। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী শহীদুল ইসলাম এবং আশরাফুল হাসন বাবু। আজ ছিল শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুরসুধা সংগীতায়ন’ এবং সাইফুল ইসলামের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উজান’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী আজগর আলীম, সৈয়দ আশিকুর রহমান, খায়রুল ওয়াসি, মো. মানিক, অগ্নিতা শিকদার মুগ্ধ এবং আঁখি আলম। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন আব্দুল মতিন (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কি-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং মো. আতিকুল ইসলাম (বাঁশি)।

বইমেলার দুই দিনের পরিবর্তিত সময়সূচি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাজনিত কারণে আগামীকাল ৮ ফেব্রুয়ারি শনিবার ও ১৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার তারিখ অমর একুশে বইমেলা শুরু হবে সকাল ১১টার পরিবর্তে দুপুর ২টায়। এই দুই দিন মেলায় থাকবে না পূর্বঘোষিত শিশুপ্রহর।

আজকের অনুষ্ঠানসূচি: আজ শুক্রবার। বইমেলা শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে শিশুপ্রহর। একই সাথে অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে আজ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার।

শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা: আজ সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আলোচনা অনুষ্ঠান: আজ বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : গোলাম মুরশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন স্বরোচিষ সরকার এবং গাজী মো. মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করবেন মোরশেদ শফিউল হাসান।