গল্পের সঙ্গে মানুষের পরিচয় সেই বাল্যকাল থেকেই। ছোটবেলায় ঘুমপাড়ানির গল্প শুনিয়ে মায়েরা ঘুম পাড়ান তার আদরের সন্তানকে। আবার গল্প শুনে শুনে জীবনবোধ সম্পর্কে জানতে শেখেন সবাই। লেখকরা গল্পের মধ্যে তোলেন কাল্পনিক বা বাস্তব ঘটনার বর্ণনা, প্রেম কিংবা উপাখ্যান অথবা নানা টানাপোড়নের হাহাকার।
সমাজসভ্যতার নানা চিত্রও ফুটে ওঠে এ গল্পের মাধ্যমে। তাই তো সব শ্রেণি-পেশার সব বয়সি মানুষের সবসময়ই আগ্রহ থাকে গল্পের প্রতি। এবারের বইমেলাও প্রমাণ মিলল তার। বইমেলায় প্রকাশকরা গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করছেন গল্পের বই, পাঠকরাও আগ্রহ ভরে কিনছেন তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারের অমর একুশে বইমেলায়ও গল্পের বই প্রকাশের অবস্থানে গল্পের বই তৃতীয় অবস্থানে আর বিক্রিতে রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। পাঠকদের সমাদর অর্জন করায় প্রকাশিত ও প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা সংখ্যা এবারের বইমেলায় গল্পের বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাধিক।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো হলো- ঐতিহ্য প্রকাশিত আনোয়ারা সৈয়দ হকের ‘দহসি জীবন’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘প্রিয় ১৫ গল্প’, মুম রহমানের ‘অন্ধকারের গল্পগুচ্ছ’ অন্যপ্রকাশ এনেছে বিশ্বজিৎ ঘোষের ‘প্রত্যাবর্তন’, মোস্তফা মামুনের ‘সেরা দশ গল্প’, বিদ্যাপ্রকাশ এনেছে মোহিত কামালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্প’, নাসরীন জাহানের ‘বখতিয়ারের বানরগুলি’, কথা প্রকাশ এনেছে আহসান হাবীবের ‘জীবনের গল্প, গল্পের জীবন’, আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘রূপ-নারানের কূলে’, শাহনাজ মুন্নী’র ‘প্রিজন ডিলাক্স ট্যুর’, মেঘদূত এনেছে সামছুন নাহারের ‘কদম ফুল’, খন্দকার ফাহমিদা ফেরদৌসের ‘সোনাপুর চা বাগান ও একটি হলুদ শাড়ি’, অনন্যা এনেছে ইকবাল খন্দকারের ‘নিশি ঘাতক’, আবিষ্কার এনেছে হাসান হাফিজের ‘সাত দেশের রূপকথা’ বিভাস এনেছে মৃত্তিকা গুণের ‘নির্ভার-স্ব’, বাতিঘর এনেছে শাহীন আক্তারের ‘মানচিত্র’, জাগৃতি প্রকাশনী এনেছে মেহবুবা হক রুমার ‘পঁচিশে পঞ্চরস’, পুথিপ্রকাশ এনেছে হাজেরা খাতুনের ‘কাঁটাবনে লাল শিউলি’ ও মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ‘বাংলা সাহিত্যের সেরা গল্প’, ঝিঙেফুল এনেছে শান্তা মারিয়ার ‘পাখিটা এলিয়েন ছিল’।
গল্পের বই বিক্রি প্রসঙ্গে কথা প্রকাশের স্টল ব্যবস্থাপক মো. ইউনুছ বলেন, গল্পের বইয়ের প্রতি সব বয়সি মানুষের আগ্রহ রয়েছে। মেলায় আমরাসহ সব প্রকাশনীয় অনেক গল্পের বই প্রকাশ করি। বিক্রিও অনেক ভালো হয়।
দেশ পাবলিকেশনের প্রকাশক অচিন্ত্য চয়ন বলেন, বইমেলায় অনেক গল্পের বই প্রকাশ হয়। তবে মানসম্মত গল্পের বই খুবই কম। ভালো বই বের হলে মানুষ স্টলে স্টলে খোঁজে খোঁজে বই কিনেন।
নতুন বই
বুধবার অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭০টি। গত ১৯ দিনে মোট নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১ হাজার ৭৯৩টি।
মূল মঞ্চ বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘শিশুসাহিত্যের মহীরুহ রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জুলফিকার শাহাদাৎ। সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের সভাপতিত্বে আলোচক ছিলেন শাহাবুদ্দীন নাগরী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা শিশুসাহিত্যে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই এক মহীরুহ। শিশুদের চিত্তবৃত্তির উন্মেষ ও প্রতিভার বিকাশ সাধনে তার ছিল নিরলস প্রয়াস। তিনি নিজে যেমন শিশুদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতেন, তেমনি শিশুদের মধ্যে স্বপ্নের বীজ বুনতেন। তার লক্ষ্য ছিল শিশুদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
তিনি ‘কচি-কাঁচার মেলা’র মাধ্যমে সারা দেশে শিশুদের মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি নিজে শিশুদের জন্য ছড়া লিখতেন এবং বিখ্যাত লেখকদেরও উৎসাহ দিতেন শিশুদের উপযোগী সাহিত্য রচনার জন্য। দাদাভাই তার লেখার মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোরদের মধ্যে নীতিজ্ঞান, দেশপ্রেম ও চারিত্রিক গুণাবলি জাগ্রত করার চেষ্টা করতেন।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মজিদ মাহমুদ, শফিকুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান। সংগীত পরিবেশন করেন সিনথিয়া, জেরিন তাবাসসু, গোলাপী প্রমুখ।
‘তারেক রহমান: সংগ্রাম ও রাজনৈতিক যাত্রা’ বইয়ের প্রকাশনা
আদর্শ প্রকাশ করেছে ‘তারেক রহমান: সংগ্রাম ও রাজনৈতিক যাত্রা’ শিরোনামের বই। তারেক রহমান: পারিবারিক উত্তরাধিকার ছাড়িয়ে অন্য দিগন্তে, আইনি সহিংসতা, নির্যাতন ও প্রপাগান্ডা, আওয়ামী শাসনকালে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪, জনহিতকর ও সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড, নির্বাচিত ভাষণ ও নির্বাচিত সাক্ষাৎকার ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিন্যাস্ত হয়েছে বইটি। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী অ্যানির সভাপতিত্বে এতে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী। আলোচক ছিলেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ ও লেখক-সাংবাদিক এহসান মাহমুদ। স্বাগত বক্তৃতা করেন প্রকাশনা সংস্থা আদর্শের স্বত্বাধিকারী মাহাবুব রহমান।
আপনার মতামত লিখুন :