ঢাকা শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

বাউল-সাধক লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম

বাউল-সাধক লালন শাহের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছবি সংগৃহীত

আমার এ ঘরখানায় কে বিরাজ করে।
আমি জনম ভর একদিন দেখলাম না রে॥
নড়ে চড়ে ঈশান কোণে
দেখতে পাইনে এ নয়নে
হাতের কাছে যার ভবের হাট-বাজার
ধরতে গেলে হাতে পাইনে তারে ...

বাউল-সাধক ফকির লালন শাহ। যিনি ছিলেন একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক ও দার্শনিক। তার গানের মধ্যে সন্ধান পাওয়া যায় এক বিরল মানব দর্শনের। লালন শাহ, ফকির বা লালন সাঁই নামেও পরিচিত।

লালনের মৃত্যুর ১২৯ বছর পর আজও মানুষের হৃদয়ে আছেন তার গানের মধ্যে। তার লেখা গানের কোনো পাণ্ডুলিপি ছিলো না, কিন্তু গ্রাম বাংলায় আধ্যাত্মিক ভাবধারায় তার রচিত গান ছড়িয়ে পড়ে লোকের মুখে মুখে।

লালন ফকিরকে ‘বাউল-সম্রাট’ বা ‘বাউল গুরু’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তার গানের মাধ্যমেই উনিশ শতকে বাউল গান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তিনি প্রায় দু হাজার গান রচনা করেছিলেন বলে লালন গবেষকরা বলেন।

লালন ফকিরের সঠিক জন্ম ইতিহাস নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। কিছু লালন গবেষক মনে করেন তেরশ‍‍` চুয়াত্তর সালে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি উপজেলার ভাড়ারা গ্রামে লালন জন্মগ্রহণ করেছিলেন সম্ভ্রান্ত এক হিন্দু কায়স্থ পরিবারে। বাবা মাধব কর ও মা পদ্মাবতীর একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। কিন্তু এ বিষয়ে দ্বিমতও আছে। কেউ বলেন তার জন্ম ঝিনাইদহে, কেউ বলেন যশোরে।

কথিত আছে শৈশবে পিতৃবিয়োগ হওয়ায় অল্প বয়সেই তার ওপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছিলো। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ তার হয়নি। কোনো কোনো গবেষকের বিবরণ অনুযায়ী প্রতিবেশী বাউলদাস ও অন্যান্য সঙ্গীদের নিয়ে ‘পুণ্যস্নান’ বা তীর্থভ্রমণ সেরে ঘরে ফেরার পথে লালন বসন্তরোগে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হন।

রোগ বৃদ্ধি পেলে অচৈতন্য লালনকে মৃত মনে করে সঙ্গীরা কোনরকমে তার মুখাগ্নি করে তাকে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এক মুসলমান রমণী নদীকূল থেকে লালনের সংজ্ঞাহীন দেহ উদ্ধার করে সেবাশুশ্রূষা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন। কিন্তু তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়।

এই গবেষণার তথ্যমতে, এরপর বাড়ি ফিরে গেলে সমাজপতি ও আত্মীয়স্বজন মুসলমানের গৃহে অন্নজল গ্রহণ করার অপরাধে তাকে সমাজে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ব্যথিত লালন চিরতরে গৃহত্যাগ করেন।

বলা হয় এই ঘটনা সমাজ-সংসার, শাস্ত্র আচার এবং জাতধর্ম সম্পর্কে তাকে বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। এবং এখান থেকেই হয় তার নতুন জন্ম। বাউল গুরু সিরাজ সাঁইয়ের কাছে দীক্ষা নেয়ার পর কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে আখড়া স্থাপন করে তার প্রকৃত সাধক জীবনের সূচনা হয়।

‘যা আছে ভাণ্ডে, তাই আছে ব্রহ্মাণ্ডে’ - এই ছিলো লালনের দর্শন। বৈষ্ণব সহজিয়া, বৌদ্ধ সহজিয়া ও সুফিবাদের সংমিশ্রণে মানবগুরুর ভজনা, দেহ-কেন্দ্রিক সাধনাই লালন প্রদর্শিত বাউল ধর্মের মূলমন্ত্র।

লালন ফকির বিশ্বাস করতেন সব মানুষের মধ্যেই বাস করে এক ‘মনের মানুষ’। আর সেই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় আত্মসাধনার মাধ্যমে। দেহের ভেতরেই সেই মনের মানুষ বা যাকে তিনি ‘অচিন পাখি’ বলেছেন, তার বাস।

কুমারখালির ছেউড়িয়ায় নিজের আখড়ায় ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ অক্টোবর, বাংলা ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক মৃত্যুবরণ করেন বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ্‌।

আরবি/এস

Link copied!