ড. চঞ্চল খান শুধু শিল্পী নন, একাধারে লেখক, গবেষক, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা, চিত্রশিল্পী, সংগঠক ও শিক্ষক। শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাজধানীর ধানমন্ডি ছায়ানটের রমেশচন্দ্র স্মৃতি মিলনকেন্দ্র, (৩য় তলা), ‘তোমার গানের ছায়ায়’ শিরোনামে গানের আসরে একক পরিবেশনায় অংশ নেবেন চঞ্চল খান।
এই পরিবেশনার প্রাকাল্লে কথা হয় শিল্পীর সঙ্গে। গানের আসরের আয়োজন করেছে শুদ্ধমঞ্চ।
রবীন্দ্রনাথের গান কেন করেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার পার্থক্য হলো, আমি যা দেখতে পাই না, রবীন্দ্রনাথ সেটা দেখতে পান। আমি যা শুনতে পাই না, রবীন্দ্রনাথ সেটা শুনতে পান। আমি তাঁর ভেতর দিয়ে ভুবনখানি দেখতে চাই, শুনতে চাই।
রবিঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম কীভাবে অনুপ্রাণিত করে সে কথাই শোনালেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীতশিল্পী ও গবেষক ড. চঞ্চল খান। পাশাপাশি তাঁর কথায় এটাও উঠে এলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম নিয়ে তাঁর গবেষণাকর্মের তাত্পর্য। দীর্ঘ চার দশক ধরে সুরের সঙ্গে তাঁর বাস। দীর্ঘদিন ধরে সুরের শিক্ষাদান করছেন, কিন্তু সংগীতকে পেশা হিসেবে নেননি। সদালাপী ও সুদর্শন ড. চঞ্চল খান চোখেমুখে হাসির ছটা ছড়িয়ে বলেন, `সঙ্গীতচর্চা জীবিকা নয়, সঙ্গীত আমার কাছে যাপিত জীবনের অবলম্বন।
`
অ্যাকাডেমিক ও পেশাগত জীবনে ড. চঞ্চল খান খ্যাতিমান গবেষক ও উন্নয়নকর্মী। সেই পরিচয় ছাপিয়ে তিনি অসংখ্য ভক্ত ও অনুরাগীর প্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। পেশাগত কারণে তিনি দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটান অস্ট্রেলিয়ায়। সেই দূরদেশে তিনি একমুহূর্তও রবীন্দ্রনাথকে ভুলে থাকেননি। সেখানে তিনি গড়ে তুলেছেন রবীন্দ্রচর্চার নানা সংগঠন।
অষ্ট্রেলিয়ায় এখন রবীন্দ্রনাথের আলো ছড়াচ্ছে তাঁর গড়া প্রতিষ্ঠান `সুরলোক`। নেপালেও তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চার প্রতিষ্ঠান `আনন্দলোক`। দেশে ও দেশের বাইরে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে, বাঙালি সংস্কৃতিকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে তিনি যে অবদান রেখে চলেছেন তার তুলনা মেলা ভার। অশিক্ষা, সাম্প্রদায়িকতা, কূপমণ্ডকতা দূর করে মানুষের মনে শিক্ষা-সংস্কৃতির বাতিঘর জ্বালাতে নিরন্তর সংগ্রাম তাঁর। ফলে একটিমাত্র পরিচয় দিয়ে তাঁকে মূল্যায়ন করা যথার্থ নয়।
সেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই মেতে আছেন ড. চঞ্চল খান। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তির ১১১তম বর্র্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গীতাঞ্জলির গল্প’। সেখানে গেয়েছেন একগুচ্ছ রবীন্দ্রসঙ্গীত। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গাইবেন প্রচলিত-অপ্রচলিতে একগুচ্ছ রবীন্দ্রসঙ্গীত।
গান গাওয়ার পাশাপাশি শিক্ষকতা করছেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষণা করছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতে ভালো লাগা কখন শুরু হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, `রবীন্দ্রনাথের গান করি দীর্ঘদিন ধরে। যখন রবীন্দ্রনাথের গান তেমন বুঝতাম না, সেই ছেলে বেলায় বাবার মুখে শুনে শিখেছি `একটুকু ছোঁয়া লাগে` বা `ওরে নুতন যুগের ভোরে`। তখন থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীতে ভালো লাগা শুরু। স্বাধীনতার পর ছায়ানটে ভর্তি হন তিনি।
ওয়াহিদুল হক, সনজীদা খাতুন, অঞ্জলি রায়, সোহরাব হোসেন, আহসান মুর্শেদ, শেখ লুত্ফর রহমান, মমতাজ আলী খান, জাহেদুর রহিম প্রমুখের কাছে গান শিখেছেন। ছায়ানটের এক সময়কার শিক্ষার্থী ড. চঞ্চল খানের ১২ একক ও মিশ্র অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন একাধিক প্রমাণ্যচিত্র। ড. চঞ্চল খান নির্মাণ করেছেন তথ্যমূলক প্রামাণ্যচিত্র `বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ`। একজন রবীন্দ্রপ্রেমী হিসেবে সবচেয়ে বড় পাওয়া কী জানতে চাইলে নিভৃতচারী শিল্পী ড. চঞ্চল খান বলেন, `রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে পাওয়াই আমার বড় পাওয়া। গান করতে গিয়ে তাঁর দর্শন জানছি, অসংখ্যবার পড়ছি তাঁর বহুমাত্রিক রচনা। অনুবাদ করছি, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করছি। প্রতিদিন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আছি—কী জীবনে, কী স্বপনে। যতদিন বাঁচব, রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই থাকব।`
আপনার মতামত লিখুন :