দেশের কৃষি খাতে উদ্ভাবন ও জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন সাতটি কৃষি গবেষণা উদ্যোগ অর্থায়ন করেছে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। কৃষি গবেষণাকে আরও উন্নত ও বিস্তৃত করতে ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এসব গবেষণা প্রকল্পে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, যান্ত্রিকীকরণ ও ফসল উৎপাদন-পরবর্তী ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয়, বলেন, এই কৃষি গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা এই খাতের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও জলবায়ুর সহনশীলতা থেকে শুরু করে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মতো জটিল বিষয়। এ উদ্যোগে আমরা আমাদের জুরি প্যানেলের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছি এবং দেশের অগ্রগামী গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছি। তাই আমরা নিশ্চিত যে, এই প্রকল্পগুলো দেশের কৃষিখাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে, যা কৃষির উৎপাদনশীলতা, সক্ষমতা ও দেশব্যাপী অগণিত মানুষের জীবিকা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, মূল্যবান মতামত ও আন্তরিকতার জন্য জুরি প্যানেলের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। একইসঙ্গে আন্তরিক ধন্যবাদ সজানাতে চাই মেধাবী গবেষকদেরকে, যাদের কাজ বাংলাদেশের কৃষির ভবিষ্যত গঠনে সহায়ক হবে। এই রূপান্তরমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষিখাতে সম্ভাবনাময় ও টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করতে পেরে আমরা গর্বিত।
বিশিষ্ট কৃষি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের জুরি প্যানেল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি প্রকল্প নির্বাচন করেন। কৃষিখাতের প্রসার, খাদ্য নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখার সম্ভাবনার ভিত্তিতে কঠোর মূল্যায়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সাতটি প্রকল্পকে নির্বাচন করা হয়েছে।
দেশের কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জকে তুলে ধরেছে প্রতিটি প্রকল্প, যার লক্ষ্য এ খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা।
নির্বাচিত উদ্যোগগুলো হল:
দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে জলবায়ুগত চাপের মধ্যেও বৃদ্ধি পায় এমন পুষ্টিসমৃদ্ধ গাজর ও টমেটোর জাত উন্নয়ন ও উন্নীতকরণ, যার নেতৃত্বে থাকবেন ড. হারুন-অর-রশিদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
২. ফ্রুট ফ্লাইয়ের উপদ্রব নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিরাপদ আম উৎপাদন বৃদ্ধি, যার নেতৃত্বে থাকবেন ড. আবুল মঞ্জুর খান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
৩. অফ-গ্রিড হাওরে সেচযোগ্য বোরো ধানের চাষ বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু উপযোগী সৌর পাম্পভিত্তিক সেচ ব্যবস্থার সম্ভাবনা উন্মোচন - এর নেতৃত্বে থাকবেন ড. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
৪. ড. এস এম রফিকুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় - এর নেতৃত্বে পলিকালচার সিস্টেমে বিকল্প, গাঁজনযুক্ত উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যের বিকাশের মাধ্যমে মৎস্য খাতে বাণিজ্যিক ফিডের উপর নির্ভরতা হ্রাস করা।
৫. ধান চাষের জন্য ইন্টারনেট-ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় সেচ ব্যবস্থার ব্যবহার বৃদ্ধি করা, যার নেতৃত্বে থাকবেন ড. মোস্তাফিজার রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
৬. অভিনব ছত্রাক-যুক্ত জৈব-সার ও ন্যানো ইউরিয়া প্রয়োগ করে লবণাক্ত উপকূলীয় অঞ্চলে ফসলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যার নেতৃত্বে ড. রকিবুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৭. ইন্টারনেট-ভিত্তিক তাপমাত্রা সেন্সর ও আলট্রাসনোগ্রাফি ব্যবহার করে তাপের চাপ কমিয়ে দুগ্ধ উৎপাদনের উন্নতি- যার নেতৃত্বে থাকবেন ড. রাশেদুল ইসলাম, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
জুরি প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. একেএম নওসাদ আলম।
অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রোস্তম আলী; শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মির্জা হাসানুজ্জামান, ফ্যাকাল্টি অব অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন (এফএএসভিএম)-এর ডিন অধ্যাপক ড. কেবিএম সাইফুল ইসলাম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাশুরা শাম্মী।