রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৯:০৭ এএম

নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদন

কারখানা বন্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অশনিসংকেত

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৬, ২০২৫, ০৯:০৭ এএম

কারখানা বন্ধে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অশনিসংকেত

ফাইল ছবি

গাজীপুরো জরুন এলাকায় কেয়া গ্রুপের চারটি গার্মেন্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ২ জানুয়ারি সকালে জানতে পারেন, তাদের চাকরি আর থাকছে না। কারণ গ্রুপটি তাদের কারখানাগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এভাবেই কয়েক হাজার গার্মেন্টস কর্মীর জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। ২৯ ডিসেম্বর থেকেই সেখানের কর্মীরা কাজ থেকে বিরত থাকেন। কারণ নভেম্বর মাসের বেতনই হাতে পাননি এসব শ্রমিক।

গ্রুপটি জানিয়েছে, বর্তমান অস্থিতিশীল বাজারের কারণেই গার্মেন্টসগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা ও কার্যাদেশ কম থাকার কথা বলা হয়। একই দিনে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন কেয়া গ্রুপের কর্ণধার আব্দুল খালেক পাঠান ও কয়েকজন ব্যাংকারের বিরুদ্ধে প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের কারণে দুটি মামলা দায়ের করে। 

শুধু কেয়া গ্রুপের শ্রমিকেরাই নন, ২০২৪ সালে আরও কয়েক হাজার গার্মেন্টস কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। কারণ এই সময়ে অন্তত ১০০ গার্মেন্টসের পাশাপাশি অন্য আরও কারখানা হয় পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে, না হয় কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। 

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত বছরের প্রথম সাত মাসে ৪৪টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই একের পর এক কারখানা বন্ধ হতে থাকে। গ্যাস সরবরাহজনিত সমস্যা, ব্যাংক থেকে সহায়তার অভাব এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে তারপর আরও ৩২টি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, যেখানে ৩১ হাজার ৪০০ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন।

নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ও অন্যান্য খাতের বন্ধ কারখানার সংখ্যা যদি হিসাব করা হয়, তাহলে চাকরি হারানো শ্রমিকের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি হলো বেক্সিমকো গ্রুপ, যার কর্ণধার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগী সালমান এফ রহমান। 

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গ্রুপটি তাদের ১৫টি কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে অন্তত ৪০ হাজার শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শেখ হাসিনার আরেক অন্যতম সহযোগী ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম। ডিসেম্বরে গ্রুপটি ৯টি কারখানার কর্মীদের বাদ দেওয়ার কথা জানায়। 

৫ জানুয়ারি প্রকাশিত ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৭৬ হাজার বেশি বেকার লোক ছিল। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ লাখের বেশি। 

ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কারখানা বন্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ শতাংশ। 

ঢাকাভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমরা কারখানা বন্ধ এবং দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে একটি যোগসূত্র দেখতে পাচ্ছি।’ 

মোয়াজ্জেম বলেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে উৎপাদন খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা আগের বছরে একই সময়ের ১০ শতাংশ থেকে অনেক কম। সার্ভিস খাতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।

বড় কারখানাগুলো সরকারি ভর্তুকি দিয়ে টিকে থাকতে পারে, কিন্তু ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানাগুলো ব্যবসায় টিকে থাকতে কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় বলেও উল্লেখ করেন মোয়াজ্জেম। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা সামাজিকভাবে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। 

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কিছু কারখানা ব্যাংকিং-সংক্রান্ত সমস্যা, ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল এবং অন্যান্য আর্থিক বাধার কারণে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, শ্রমিক অসন্তোষ, ব্যবস্থাপনা সমস্যা এবং গ্যাস ও বিদ্যুতের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ এবং অনেক বড় সমস্যা রয়েছে। 

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবি, বিদেশি ক্রেতাদের নানা কৌশল এবং নতুন ঋণ প্রদানে ব্যাংকের অক্ষমতাকে কারখানা বন্ধের জন্য দায়ী করেছেন। 

তিনি বলেন, ক্রেতারা যখন একটি বড় পেমেন্ট আটকে রাখে, তখন অনেক ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানাগুলো এমন সমস্যায় পড়ে, যা থেকে তারা পুনরুদ্ধার করতে পারে না। বেশি মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণেও অনেক কারখানার মালিকও কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। 

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিল্পাঞ্চলে গত বছর বেশ কয়েকটি কারখানা পুরোপুরি বন্ধ বা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!