বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫, ০২:২১ পিএম

মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী দেশীয় পণ্য

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫, ০২:২১ পিএম

মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী দেশীয় পণ্য

প্রতীকি ছবি

বিগত সরকার বরাবরই দেশে মূল্যস্ফীতির পেছনে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধবিগ্রহ ও আমদানির লাগাম টানাকে সামনে এনেছে। তবে এবার মূল্যস্ফীতিতে স্থানীয় বাজারের পণ্যের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনাও বলছে, মূল্যস্ফীতির পেছনে স্থানীয় পণ্যগুলোর ভূমিকা ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে কেবল ১৬ শতাংশ আমদানি পণ্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা হ্রাস পাওয়ার পেছনে সবজির দাম কমার প্রভাবকে সামনে আনছেন অর্থনীতিবিদরা। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার বাড়িয়ে টাকার সরবরাহ হ্রাসের কৌশল কতটা কাজের সে প্রশ্নও উঠছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। সবজির দাম কমায় গত মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমেছে। গত বছরের মার্চের পর তা আর এক অংকের ঘরে নামতে দেখা যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু সুদহার বাড়িয়ে চাহিদা নিয়ন্ত্রণের কারণে দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। কেননা চাহিদার কারণে মানুষ কেনাকাটার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে, এমন কোনো পরিস্থিতি এখনো সৃষ্টি হয়নি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বরং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খলের গলদ দূর করার তাগিদ দেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফ্লেশন ডায়নামিকস প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের মূল্যস্ফীতিতে স্থানীয় পণ্যের ভূমিকা ছিল ৮৪ শতাংশ। আমদানি করা পণ্যের প্রভাব ছিল যেখানে কেবল ১৬ শতাংশ। আর একই বছরের সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতিতে স্থানীয় বাজারের পণ্যের ভূমিকা ৭৪ শতাংশ, যেখানে আমদানি পণ্যের প্রভাব ছিল ২৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের মূল্যস্ফীতির পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে স্থানীয় বাজারের পণ্যগুলো। আমদানির প্রভাব এখানে মুখ্য নয়।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের মতো দেশে শুধু নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা সবচেয়ে জরুরি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর দেশ হলেও শুধু নীতি সুদহার বাড়িয়ে এখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। যেমন ধরুন, অনেক ভোজ্যতেল আমদানি করা হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। আবার চালের মৌসুমে উৎপাদন ও আমদানি করেও দাম কমানো যায়নি। কেন? কারণ সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েছে। তাই সরকারকে এসব ত্রুটি দূর করতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সবজির দাম কমায় মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও এটা মৌসুমি প্রভাব বলা চলে।’

গত বছরের বন্যা-পরবর্তী বাংলাদেশে শাকসবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম তাই বর্তমানে অনেক কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সবজির উৎপাদন ব্যয়ও তুলতে পারছেন না কৃষক। বাজারে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজিতে। টমেটো কিংবা আলুর মতো সবজিও বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকার কম দামে। যদিও গত বছরের এ সময় ১২০ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে পেঁয়াজ। আর আলুসহ সব ধরনের সবজির দামও ছিল বেশ চড়া।

এদিকে, ঋণের সুদহার বছর তিনেকের বেশি সময় ধরে ৯ শতাংশে বেঁধে রাখার পর সেটি ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তুলে দেয়া হয়। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে সে হার বাড়তে থাকে। এটি আরো গতি পায় গত বছরের আগস্টে নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর। বেশ কয়েক দফায় নীতি সুদহার বাড়ানোর পর বর্তমানে ঋণের সুদহার ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় ১৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। সুদহারে এ উল্লম্ফনে ব্যবসার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আর বাড়তি এ ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপরও খরচ চাপাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে বাড়ানো সুদহার বেকারত্ব বাড়িয়ে দিয়ে দারিদ্র্য উসকে দিতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দুটোই কমে যায়। চাহিদা নিয়ন্ত্রণে সুদের হার কাজ করে বেকারত্ব বাড়িয়ে। নতুন যারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকেই এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে বাধ্য হতে পারেন। তাই উৎপাদন ও রফতানি বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানার প্রচেষ্টা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এখানে চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে লাভ নেই। মূল্যস্ফীতির মূলে রয়েছে স্থানীয় বাজার। আবার মানুষের হাতে টাকা নেই। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এখনে এমন বেশি চাহিদা তৈরি হয়নি যে মানুষ কেনার জন্য বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বরং সরবরাহ কম থাকায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তাই উৎপাদন বাড়িয়ে সরবরাহ অনেক বাড়াতে হবে। যাতে পণ্যের দাম কমে যায়। কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমদানিকারকের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমাদের মূল্য সমস্যা চাহিদা না। বরং অপচয় কমানো দরকার। সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো দরকার। মৌসুমি প্রভাবে মূল্যস্ফীতি কমলেও আগামীতে তা কম থাকবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

তথ্যসুত্র: বণিক বার্তা

আরবি/এসবি

Link copied!