বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৫, ১০:০৭ এএম

রপ্তানিতে উচ্চশুল্কের মুখোমুখি হতে হবে অনেক পণ্যকে

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২৫, ১০:০৭ এএম

রপ্তানিতে উচ্চশুল্কের মুখোমুখি হতে হবে অনেক পণ্যকে

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরোপের হার ৩৭ শতাংশ, যার আওতায় রয়েছে তৈরি পোশাক, জুতাসহ আরো অনেক পণ্য। দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি অর্থমূল্যের ৮৭ শতাংশই তৈরি পোশাক। ফলে এ পণ্যটির ওপরই নতুন শুল্কের বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা। এদিকে ট্রাম্পের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শুরু করে একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

আমেরিকা থেকে পণ্য আমদানিতে যে দেশ যতটা শুল্ক আরোপ করে থাকে, সেই দেশের পণ্যে উপযুক্ত হারে রেসিপ্রোকাল বা পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলে আসছিলেন ট্রাম্প। ২ এপ্রিল ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বুধবার বিকাল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাত ২টা) হোয়াইট হাউজে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে উপস্থিত সাংবাদিকসহ সমবেতদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ট্রাম্প। দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিবস হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, চীন মুদ্রা কারসাজিসহ বাণিজ্যবাধা—সব মিলিয়ে মার্কিন পণ্যে ৬৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে; যুক্তরাষ্ট্র করবে তার প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ৩৪ শতাংশ। সব দেশের বেলায় কম-বেশি এ নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। ফলে এ ঘটনায় বিপর্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। সব দেশের পণ্যে গড়ে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সেনসাস ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য  আমদানি করেছে। এ হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি ৬১৫ কোটি ডলারের। ৬১৫-কে ৮৩৬ দিয়ে ভাগ করে পাওয়া যায় ৭৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ট্রাম্প প্রশাসন এ হারকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশের আরোপিত শুল্ক হিসেবে বিবেচনা করেছে। এর অর্ধেক হলো ৩৭ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্কহার হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা জানান, বাংলাদেশের ওপর চলমান শুল্কহার গড়ে ১৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে নতুন আরোপ করা ৩৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বসবে প্রায় ৫২ শতাংশ শুল্ক । এ রকম হলে বাংলাদেশের পণ্যকে  যুক্তরাষ্ট্রের বড় মাত্রার আমদানি শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশের প্রধান পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক। এই পণ্যটি মোট রপ্তানি অর্থমূল্যের ৮২ শতাংশ। এছাড়া অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে হেডগিয়ার, জুতা, অন্যান্য বস্ত্রপণ্য, পালক এবং পালক দ্বারা তৈরি সামগ্রী, চামড়াজাত পণ্য, মাছ, শস্যদানা, আসবাব ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে ২৫৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে আছে লোহা ও ইস্পাত, জ্বালানি পণ্য, তুলা, তেলবীজ, শস্য, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর, বয়লার ও মেশিনারি; অপটিক্যাল, ফটোগ্রাফিক, সিনেমাটোগ্রাফিক, পরিমাপক, পরীক্ষণ, নির্ভুলতা, চিকিৎসা বা শল্যচিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি। এ পণ্যগুলোর হিসাব মোট আমদানিতে বেশি।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা জানান, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের হিসাব পদ্ধতিটি বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করেছেন তারা। এছাড়া বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য আমদানি করে তার কোনটির ওপর কি পরিমান শুল্ক আরোপ আছে, সেগুলোও যাচাই-বাছাই শুরু করেছেন তারা।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যু সমাধানে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে বলে দৃঢ় আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। যেহেতু এটি আলোচনাযোগ্য তাই আমরা আলোচনা করব এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা সর্বোত্তম সমাধানে পৌঁছাতে পারব।

ব্যাংককে অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে বাসসকে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

শফিকুল আলম বলেন, এখনো পুরো বিষয়টি আলোচনা শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। আমরা এটা পর্যালোচনা করছি এবং আমরা যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করছি, তাতে আশাবাদী সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। আমরা এমন একটা সমাধানের দিকে যেতে পারব, যাতে উভয় পক্ষের জন্য উইন উইন সিচুয়েশন হয়।

প্রেস সচিব বলেন, আমরা এমন কিছু করব যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখছে।

এর আগে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক নিয়ে পর্যালোচনা করছে এনবিআর ।

দ্রুততম সময়ে শুল্কহার যৌক্তিক করার বিভিন্ন বিকল্প খুঁজে বের করবে এনবিআর, যা বিষয়টি সমাধানে অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য। ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের চলমান কাজ শুল্ক ইস্যু সমাধানে সহায়তা করবে আশা করছি।

বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত শুল্ক হারের তুলনায় প্রতিযোগী কিছু দেশের চেয়ে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে ভারত, পাকিস্তানের মতো প্রতিযোগী বাংলাদেশের তুলনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল বলে মনে করছেন তারা।

পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর মধ্যে চীনের পরে রয়েছে ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। এর মধ্যে ভিয়েতনামের ওপর আরোপিত শুল্কহার ৪৬ শতাংশ, ভারত ২৭ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৪৯, ইন্দোনেশিয়া ৩২, পাকিস্তান ৩০ শতাংশ এবং শ্রীলংকার ওপর আরোপ হয়েছে ৪৪ শতাংশ।

ট্রাম্পের ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিরাও। বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট করেছে যে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি করবে। অনেক দেশ পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা নতুন এক বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা করতে পারে।  যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ এ সংকট সমাধানে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে কিনা এটাই এখন দেখার বিষয়।

আরবি/এসবি

Link copied!