ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
আজ দায়িত্ব নেবেন চেয়ারম্যান

ইসলামী ব্যাংকে কাটছে না কালো মেঘ

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৪, ১২:৩৮ এএম

ইসলামী ব্যাংকে কাটছে না কালো মেঘ

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। এখন পর্যন্ত দায়িত্ব নেয়নি নতুন পর্ষদ। সেই নতুুন পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে ব্যাংকে শুরু হয়ে হয়েছে অস্থিরতা।

অন্যদিকে ২০১৭ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া পদবঞ্চিত কর্মকর্তারা পদোন্নতির জন্য করছেন আন্দোলন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন পর্ষদকে বাতিল করে ২০১৭ সালে দখলের আগের পরিচালনা পর্ষদকে ব্যাংকে ফেরাতে হবে। পরিপূর্ণ রূপে ইসলামে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। সব মিলে সরকার পরিবর্তনের পরে নিয়ন্ত্রণকারী এস আলম গ্রুপকে তাড়াতে পারলেও ইসলামী ব্যাংকে কাটছে না কালো মেঘ।

ব্যাংকটিতে গত বৃহস্পতিবার এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রিত আগের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। পদোন্নতি পেতে ব্যাংকের কার্যালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করছেন আগের বঞ্চিত কর্মকর্তারা। এক রকম জিম্মি করে পদোন্নতি আদায় করে নিচ্ছেন তারা। এর মধ্যে ব্যাংকটিতে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যার বড় একটি অংশ বঞ্চিত রয়েছে, তারাই অন্দোলন করছেন। ফলে সংকটে থাকা এই ব্যাংকটিতে সংকট যেন কাটছে না।

অন্যদিকে বাংকের গ্রাহকরা গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি ছিল গ্রাহকের আস্থার ব্যাংক। এটি চালাতে হলে ইসলামী মনোভাব লাগবে। ইসলামের খেদমত করতে যারা ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করেছিল তাদের হাতেই ইসলামী ব্যাংককে দেওয়া হোক। এজন্য ২০১৭ সালে দখলের আগের পরিচালনা পর্ষদকে ব্যাংকে ফেরাতে হবে। পরিপূর্ণ রূপে ইসলামে রয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের নিয়ে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

রাজধানীর দিশকুশায় একটি হোটেলে শরিয়াভিত্তিক ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অবৈধ প্রভাব রক্ষায় গ্রাহক সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ইসলামী ব্যাংকের নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। আজ মঙ্গলবার ব্যাংকটির দায়িত্ব নেবেন তিনি। এরপরই ব্যাংকটির সার্বিক সংস্কারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগে চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের ছেলে আহসানুল আলম।

ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পরই গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ব্যাংকটিতে আনন্দ মিছিল করেন। এরপরই ব্যাংকটির বঞ্চিত কর্মকর্তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মানবসম্পদ বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে। নতুন পর্ষদ গঠিত হওয়ায় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা তাতে সমর্থন দেন। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের কাছে যাওয়ার পর যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তারাই এখন পদোন্নতির জন্য চাপ দিচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার ও রোববার গভীর রাত পর্যন্ত পদোন্নতির দাবিতে বঞ্চিত কর্মকর্তারা আন্দোলন করেন। বাংলাদেশ সচিবালয়ে আনসার সদস্যদের মতো তারাও দিলকুশায় কেন্দ্রীয় ভবনের ফটক অবরোধ করেন। এতে প্রায় সারারাত অবরুদ্ধ ছিলেন কর্মকর্তারা। অবশেষে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ব্যাংকের সহকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ পর্যন্ত পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।  নতুন সংকটের সামধান সম্পর্কে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে ফোন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। কারণ হিসেবে তার বিরুদ্ধে এস আলম সংশ্লিষ্টতার বড় কারণ হতে পারে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গ্রুপ। ২০১৭ সালের পরে চট্টগ্রামের পটিয়া অঞ্চলের প্রায় ৮ হাজার কর্মী নিয়োগ দেয় বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপটি।  

পদোন্নতি পেয়েছেন ব্যাংকটির এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, এখন এলাকাভিত্তিক, ব্যাচ ভিত্তিক ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এটাকে পদোন্নতি পাওয়া না বলে পদোন্নতি আদায় করে নেওয়া বলাই ভালো। ফলে যাদের শক্তি আছে, তারাই পদোন্নতি পাচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছেন, পেশাদার কর্মকর্তারা।

ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া নতুন চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, পেশাদার আচরণেরভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। অনশ্যই পেশাদার আচরণে ব্যাংক পরিচালনা করব। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাকে বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছে। এই বিশ্বাস রাখতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব; নিয়মের বাইরে ব্যাংকে আর কিছু হবে না বলেন তিনি।

এদিকে ব্যাংকটিতে নিয়োগ পাওয়া চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিশ্চুপ হয়ে গেছেন। সরকার পরিবর্তনের কারণে অনেকেই ব্যাংকে যাচ্ছেন না। যারাও যাচ্ছেন, তারা ভয়ে থাকছেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এস আলম গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের হাতে ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!