ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
ঋণ খেলাপির জনক সালমান এফ রহমান

১৮টি কোম্পানির ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার

শাহীনুর ইসলাম শানু

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪, ১২:৪৪ এএম

১৮টি কোম্পানির ১৩৫  মিলিয়ন ডলার পাচার

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দুর্নীতির বরপুত্র ও ঋণ খেলাপির জনক সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক। গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা পাচার করেন তিনি। অর্থাৎ মিলিয়ন হিসেবে ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। বেক্সিমকো গ্রুপ পণ্য রপ্তানি করে সেই রপ্তানী মূল্য দেশে ফেরত নিয়ে আসেনি। এতে অন্তত ১৩৫ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বিদেশে পাচারের অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে এক হাজার ৪৮৫ কোটি টাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সিআইডির ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগÑবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো। পাচারের অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

সিআইডি প্রাথমিক পর্যালোচনা করে জানিয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপ বিগত ১৫ বছরে সাতটি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। তার মধ্যে জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৬৭১ কোটি ও এবি ব্যাংক থেকে ৬০৫ কোটি টাকাসহ মোট ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এ ছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপ গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সৌদি আরবে যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের বেশিরভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে ওভার ইনভয়েসিং, আন্ডার ইনভয়েসিং ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেক্সিমকো গ্রুপ এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে মানিলন্ডারিং আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

ডিআইজি-অর্গানাইজড ক্রাইম (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) কুসুম দেওয়ান বলেন, সিআইডির আর্থিক অপরাধ ইউনিট বেক্সিমকোর এই অসঙ্গতিগুলোকে ‘বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

সিআইডির ডেটাবেজ অনুসারে, অ্যাপোলো অ্যাপারেলসের মাধ্যমে প্রায় ২৩ মিলিয়ন ডলার, বেক্সটেক্স গার্মেন্টসের মাধ্যমে ২৪ মিলিয়ন ডলার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলসের মাধ্যমে ২৫ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার এবং এসেস ফ্যাশনের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে। সবগুলোই বেক্সিমকো গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান, যার ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা।

সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান জানান, গ্রুপটি পণ্য রপ্তানির জন্য ক্রেডিট লেটার খুলে ৮০ শতাংশ মূল্যের বিপরীতে স্থানীয়ভাবে ঋণ নিয়েছে। এরপর আর রপ্তানির অর্থ ফেরত আনেনি এবং ঋণগুলোও পরিশোধ করেনি।

তিনি বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপ এভাবে অর্থপাচার করেছে। সিআইডি ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের আরেক কর্মকর্তা জানান, তারা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছেন যে সালমান এফ রহমান পচারের অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।

সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান সৌদি আরবে একটি বড় ওষুধ কোম্পানি খুলেছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তা। সৌদি আরবের ওই কোম্পানির বেশিরভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে গেছে বলেও জানান তিনি।

তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক সিআইডি কর্মকর্তা জানান, ব্যবসায়ীক গ্রুপটি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে অন্তত ২১ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আর্থিক অপরাধ ইউনিট তাদের ডেটাবেজ সংগ্রহে সাতটি ব্যাংকে টিম পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির স্পেশাল সুপারেন্টেন্ড মোহাম্মদ বসির উদ্দিন।

সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে মার্কেট থেকে দৃশ্যমানভাবে প্রায় ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আওয়ামী সরকার পরিবর্তনের পরে নৌপথে বিদেশ পলিয়ে যাওয়ার সময়ে ১৩ আগস্ট সালমান এফ রহমানকে আটক করেছে পুলিশ। পরে তাকে দোকান কর্মচারীকে হত্যার মামলায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

আরবি/জেডআর

Link copied!